আলোচনা সভায় বক্তারা
ময়মনসিংহ বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেছেন, হেফাজতে নির্যাতন মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ। ২০১৩ সালের ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন শক্তিশালী হলেও মামলার সংখ্যা ও বিচার কম হওয়া উদ্বেগজনক।
শনিবার ময়মনসিংহে ‘নির্যাতনবিরোধী সনদ ও এর ঐচ্ছিক প্রোটোকল’ নিয়ে আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে নির্যাতন প্রতিরোধ, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার কাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর উদ্যোগে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহযোগিতা করেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নেটওয়ার্ক ওএমসিটি।
জেলা পরিষদের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে আয়োজিত এ সভায় মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মনির আলম বলেন, বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে নির্যাতনবিরোধী সনদ অনুমোদন করলেও ঐচ্ছিক প্রোটোকল অনুস্বাক্ষরের বিলম্ব আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আটকস্থলে স্বাধীন পরিদর্শনের অভাব, রিমান্ডে নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
অ্যাডভোকেট নূরুল হক বলেন, ভুক্তভোগীরা মামলা করতে ভয় পান বা বাধার মুখে পড়েন। দীর্ঘ তদন্ত, সাক্ষী সুরক্ষার অভাব ও রাষ্ট্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জটিলতা তাদের নিরুৎসাহিত করে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, ঐচ্ছিক প্রোটোকল অনুস্বাক্ষর, স্বাধীন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠন ও নিয়মিত পরিদর্শন নিশ্চিতের মাধ্যমে নির্যাতন রোধ সম্ভব। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, পুলিশে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আরো আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ও মানবাধিকারভিত্তিক কর্মশালা পুলিশের সচেতনতা বাড়াবে।
অধিকার-এর পরিচালক (অ্যাডভোকেসি) তাসকিন ফাহমিনা জানান, রিমান্ডে নির্যাতন, গুম, হেফাজতে মৃত্যু ও বিচারবহির্ভূত ঘটনার নথিভুক্তি উদ্বেগজনক। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, অধিকারের সমন্বয়কারী সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুম, ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌশলী আজহারুল হক, সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফয়সাল মাহমুদ, জামায়াতে ইসলামীর জেলার নায়েবে আমির অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক একেএম মাহবুবুল আলমসহ প্রমুখ।
সভায় নির্যাতন ও গুমের শিকার কয়েকজন তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান শেষে বক্তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে যৌথভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।