নারায়ণগঞ্জের পাঁচ আসন
নারায়ণগঞ্জের সংসদীয় আসন পাঁচটি। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য চারটিতে প্রাথমিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে তিনটিতেই মনোনয়নবঞ্চিতদের ক্ষোভ মাঠে গড়িয়েছে। এসব আসনে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত পালন হচ্ছে মশাল মিছিল, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি।
এমনকি ধানের শীষের নমিনি পরিবর্তনের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে দাবি জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন বঞ্চিতরা। সব মিলিয়ে দলীয় প্রতীকের কান্ডারি নিয়ে বেকায়দায় আছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। অন্যদিকে পাঁচটি আসনে একক প্রার্থী নিয়ে এক বছর ধরে মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনি মাঠে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিসহ নানা দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকায় ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এর উল্টো চিত্র জামায়াতে। দলটির নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ প্রচারে নানা কর্মসূচি নিয়ে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। তারা গণসংযোগ, পথসভাসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে সরব আছেন ভোটের মাঠে।
নারায়ণগঞ্জ-১
রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু। এছাড়া ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আরেক হেভিওয়েট নেতা কাজী মনিরুজ্জামান মনির। তবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর দিপুর পাশে থেকে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মনির। উভয় নেতার অনুসারীরা ঐক্যবদ্ধ থাকায় এ আসনে বিএনপি বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে।
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী আনোয়ার হোসাইন মোল্লা। নিয়মিত রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তিনি ও তার অনুসারীরা প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নারায়ণগঞ্জ-২
আড়াইহাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। এ আসনে তার মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি নিয়ে মাঠে আছেন বিএনপির সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার ও আসনটির সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুর।
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা। তিনি দুপ্তারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে আড়াইহাজারে নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। বিএনপির কোন্দলের কারণে এ আসনে জামায়াত সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।
এদিকে সাধারণ ভেটারদের মধ্যে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দলীয় মনোনয়ন ঘিরে বঞ্চিতরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামায় যেকোনো সময় বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ-৩
সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনেও বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ আছে। এখানে দলটির
মনোনয়ন পেয়েছেন সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। এছাড়া মাঠে সক্রিয় আছেন মনোনয়নবঞ্চিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সাবেক এমপি অধ্যাপক রেজাউল করিম।
নিয়মিত মান্নানের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে মশাল মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন তারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে চিঠিও দেন তারা। অন্যদিকে বঞ্চিতদের মন জয় করতে নিজের চেষ্টা জারি
রেখেছেন মান্নান।
এ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া। নিয়মিত সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ-৪
ফতুল্লা থানা এবং আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এখন পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এখানে জোটের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাসেমী। এছাড়া আসনটিতে বিএনপির হেভিওয়েট নেতা শাহ্ আলম সক্রিয় আছেন। এছাড়া তৎপর আছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব ও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনিও।
আসনটিতে সাধারণ ভোটার ও বিএনপি নেতাকর্মীরা সবাই এখন বিএনপির প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, জোট থেকে আসনটি ছেড়ে দিলে বিএনপি নেতা শাহ্ আলম অথবা বিএনপির সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার আমির মাওলানা আবদুল জব্বার। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। নির্বাচনি এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন আবদুল জব্বার।
আসনটি বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানে দলটির বিশাল ভোট ব্যাংকও আছে। জোট শরিককে আসনটি ছেড়ে দিলে ধানের শীষ মার্কার ভোট জমিয়তের মনির হোসাইন কাসেমীর খেজুর গাছ মার্কায় কতটা রূপান্তরিত হবে তা নিয়ে শঙ্কা আছে। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, জোট শরিককে আসনটি ছেড়ে দিলে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়লাভ করার সম্ভাবনা বেশি।
এদিকে বিএনপি থেকে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে নামলে জামায়াতের আবদুল জব্বার সহজেই বিজয় লাভ করবেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। সেই সঙ্গে ত্রিমুখী প্রতিযোগিতা হলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতও দেখা দিতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ-৫
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। এখানেও দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে মনোনয়ন ঘিরে কোন্দল দেখা গেছে। মাসুদের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন বঞ্চিত মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, সাবেক এমপি আবুল কালাম ও বিএনপি নেতা আবু জাফর আহমেদ বাবুল। অন্যদিকে বঞ্চিতদের কাছে টানতে নিয়মিত তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন মাসুদ।
এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী জেলা ও মহানগর শাখার সাবেক আমির মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ। নিয়মিত নির্বাচনি এলাকার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এ আসনে বিএনপি প্রার্থীর জয়লাভ করার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। তবে বিএনপি থেকে যদি কোনো হেভিওয়েট নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামেন সে ক্ষেত্রে জামায়াতের পাল্লা ভারী হতে পারে।
এদিকে বিএনপি নেতারা বলেন, প্রাথমিক মনোনয়ন দল পুনর্বিবেচনা করতে পারে। সে কারণেই মাঠে আছেন অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত হলে মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক। ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষেই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কারো নেই।