ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সর্ববৃহৎ নবীনগর উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসন। আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামী ও খেলাফত মজলিস তাদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। অপরদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণসংযোগ ও দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। গ্রামেগঞ্জে ও হাটবাজারে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। জানা যায়, এ আসনে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাতেনকে জামায়াতে ইসলামী এবং মাওলানা আবদুল কাইয়ুম ফারুকীকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।
অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে প্রচার-প্রচারণায় রয়েছেন জেলা বিএনপির অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কাজী নাজমুল হোসেন তাপস, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন মো. জসিম, সাবেক ছাত্রদল ও কেন্দ্রীয় জাসাস নেতা সালাউদ্দিন ভূঁইয়া শিশির, উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মান্নান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মো. সায়েদুল হক সাঈদ, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক কেএম মামুন অর রশীদ, নবীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, মহানগর ঢাকা দক্ষিণ কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আলম রাজীব ভূঁইয়া।
অপরদিকে প্রচারণায় না থাকলেও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কামরুজ্জামান ও শিল্পপতি আলমগীর ইকবালের নামও শোনা যাচ্ছে এলাকার লোকমুখে।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা মত ও পথে বিভক্ত। কেন্দ্র ও জেলা-উপজেলা ঘোষিত বিএনপির নানা কর্মসূচি তারা আলাদাভাবে পালন করে থাকেন।
কাজী নাজমুল হোসেন তাপস এ আসনে সাবেক এমপি ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে। বাবার ইমেজ, সমর্থক এবং বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন উপজেলার প্রতিটি এলাকা। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীক পেয়েছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা তকদির হোসেন মো. জসিম এই আসনে আবারও দলীয় মনোনয়নের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং একই বছরে ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিল। তিনি বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি পালন ও এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মান্নান বিএনপি ও অন্যান্য সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় কর্মসূচি ও প্রচার-প্রচারণা। জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ পাওয়ার পর যে অবস্থান ছিল, সেই পদ হারানোর পর সেই অবস্থানে লেগেছে ভাটা। তিনি ২০২২ সালে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হোন। এ ছাড়াও সালাউদ্দিন ভূঁইয়া শিশির, মো. সায়েদুল হক সাঈদকে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়। কেএম মামুন অর রশীদ কৃষক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু বিএনপির দলীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা আক্ষেপ করে বলেন, বিগত ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা ধানের শীষের বিরোধিতা করেছেন, তারাও এবার দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা আরো বলেন, দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা এক মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজের গ্রুপে লোকজন বাড়াতে গিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগের দলীয় পদ-পদবি থাকা লোকজনকে নিয়ে সভা- সমাবেশ করেছেন। এটা খুবই কষ্টের ও লজ্জাজনক।
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী আবদুল বাতেন ঈদের পর দিন থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নবীনগর উপজেলা সদরে ঈদ পুনর্মিলনীর মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন।
নেতাকর্মীরাও নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে এলাকায় ব্যানার, পোস্টার টানিয়ে ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও মাওলানা ওসমান গনি রাসেলের নাম শোনা যাচ্ছে। ওসমান গনি রাসেল নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার, পোস্টার টানিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জানান দিচ্ছেন।
এ ছাড়া এ আসনে এনসিপি, গণঅধিকার, জাতীয় পার্টিসহ অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে না।