রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ (জেলা জজ) আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমানের ভাড়া বাসায় ঢুকে তার স্কুল পড়ুয়া ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৮) ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে লিমন মিয়া নামে এক যুবক।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে এ হামলায় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসী গুরুতর আহত হয়েছেন। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে ওই যুবক বাড়ির ফটকে নিরাপত্তাকর্মীদের জজের স্ত্রীর ভাই পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করে। হত্যার ঘটনার পর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিলেন হত্যাকারী লিমন। পরে তাকে আটক করেছে পুলিশ। আটক লিমন মিয়ার (৩৫) বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি এলাকায়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু সুফিয়ান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, হামলাকারী যুবকও বিচারক পরিবারের পূর্বপরিচতি বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লিমন বিচারকের বাসায় প্রবেশ করে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। ধারাল অস্ত্রের কোপে তাওসিফ রহমান সুমন গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় বিচারকের ছেলে ও স্ত্রী তাসমিন নাহারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ঘটনা সময় বিচারক আবদুর রহমান বাসায় ছিলেন না। খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে ছুটে যান।
এদিকে হামলাকারী যুবক লিমন মিয়াও আহত অবস্থায় এখন রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আরএমপির মুখপাত্র ও উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, সেখানে দুপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে লিমনও আহত হন।’
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে তদন্তকারী দল কাজ করছে। হত্যার কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে প্রাথমিকভাবে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত শত্রুতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, হামলাকারী লিমন মিয়া যেহেতু অজ্ঞান অবস্থায় আছে, তাই এখনই কী কারণে এটি ঘটেছে—সেটি বলা যাচ্ছে না। আমরা তদন্ত করছি।’
গত ৬ নভেম্বর সিলেটের সুরমা থানায় একটি জিডি করেছিলেন বিচারকের স্ত্রী লুসি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, লিমন মিয়ার সঙ্গে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে তার পরিচয় হয়। এরপর তার দারিদ্রতার কারণে লিমনকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন লুসি। একপর্যায়ে সহযোগিতা করা বন্ধ করে দিলে লিমন আরও টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করলে লিমন গত ৩ নভেম্বর তাকে সপরিবারে হত্যার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় তিনি সিলেটের সুরমা থানায় নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে লিমনের বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন।