ডাকসু নির্বাচনে আলোচনায় হেভিওয়েট প্রার্থীরা

মাহির কাইয়ুম, ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৫: ৩৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সামনে রেখে জমে উঠেছে ছাত্ররাজনীতি। দীর্ঘ ছয় বছর পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। শিক্ষার্থীরা মুখিয়ে আছে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের। তবে ভিপি, জিএসসহ বিভিন্ন পদে কারা লড়ছেন সেই প্রশ্নই সবার মুখে মুখে। জল্পনা-কল্পনাও কম হচ্ছে না। আলোচনার শীর্ষে আছেন কয়েকজন হেভিওয়েট নেতার নাম।

ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি কোনো ছাত্র সংগঠন। কয়েকটি সংগঠন প্যানেল ঠিক করতে পারলেও, অধিকাংশই আছে পিছিয়ে। আবার ছাত্র সংগঠনগুলোর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও একটি প্যানেল হচ্ছে বলে জানা গেছে।

হেভিওয়েট প্রার্থী কারা?

মূলত প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় ছাত্র নেতারা ডাকসুর ভিপি ও জিএস পদে লড়বেন। তাদের নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে।

ইসলামী ছাত্রশিবির

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম জনপ্রিয়তার দিকে এগিয়ে আছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়াসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আলোচনার শীর্ষে উঠে গেছে তার নাম। এছাড়া ছাত্রশিবিরের বর্তমান ঢাবি শাখা সভাপতি এসএম ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খানকে নির্বাচন ঘিরে জোরালো প্রস্তুতি নিতে দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্র ও হল পর্যায়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল সাজাচ্ছেন তারা।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

সংগঠনটিতে বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ ও জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আছেন। তবে ছাত্রদলের চূড়ান্ত প্যানেলে কারা থাকবেন সে বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সহসভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে আলম ভূঁইয়া ইমনসহ বেশ কয়েক ছাত্রনেতা আলোচনায় আছেন। নবীনদের মধ্যে আলোচনায় আছেন আবিদুল ইসলাম খান, নাছির উদ্দিন শাওন, বিএম কাউছার ও শেখ তানভীর বারী হামীম।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ

জুলাই বিপ্লবের পর গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সংগঠনের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের। জিএস পদে লড়বেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার এবং এজিএস পদে সদস্য সচিব জাহিদ আহসান অথবা মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসির চৌধুরী প্রার্থী হতে পারেন। নির্বাচন ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি সরব রয়েছে সংগঠনটি।

স্বতন্ত্র প্যানেল

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সদস্য সচিব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা স্বতন্ত্র প্যানেল গঠন করে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই প্যানেলে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি নিজেই। সঙ্গে আছেন সাবেক সহ-সমন্বয়ক এবি জুবায়ের ও মুসাদ্দিক আলি ইবনে মোহাম্মদসহ অনেকেই। তারা প্যানেলটিকে অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীভিত্তিক প্যানেল হিসেবে উল্লেখ করছেন।

এছাড়া স্বতন্ত্রভাবে আলোচনায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি। তিনি একটি অরাজনৈতিক প্যানেলে যুক্ত হতে পারেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ‘ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি’ স্লোগানে একটি প্যানেল গঠনের চেষ্টা করছেন স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ।

ছাত্র অধিকার পরিষদ

ডাসকুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। তিনি এবার ভিপি পদে প্রার্থী হচ্ছেন। ইতোমধ্যে তিনি ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ নামে একটি প্যানেলও ঘোষণা করেছেন।

বাম সংগঠনগুলো

বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর জাবির আহমেদ জুবেল ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মোজাম্মেল হক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন। তারা বলছেন, বামজোট থেকে সেন্ট্রাল ও হল প্যানেল দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ

এদিকে ডাকসু নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত তালিকায় মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৯৩২ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১৯ হাজার ২৮ এবং ছাত্র ২০ হাজার ৯০৪ জন।

নির্বাচনি প্রচারে বিধিনিষেধ

ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু গুরুত্বপূর্ণ আচরণবিধি জারি করেছে। যেখানে নির্বাচনি প্রচারে যানবাহন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থক মোটরসাইকেল, রিকশা, ব্যান্ড পার্টি কিংবা শোডাউন করতে পারবে না। এমনকি ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে আনা-নেওয়ার জন্য যানবাহন ব্যবহারে অনুমতি নেই। তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট স্টিকারযুক্ত যানবাহনে চলাচল করতে পারবে।

প্রচার কার্যক্রমেও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে ভোটের আগের দিন রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে। তবে রাত ১০টার পর মাইক ব্যবহারে কঠোর সীমাবদ্ধতা থাকবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ডাকসু মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ১৯ আগস্ট এবং চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ আগস্ট। এবারের নির্বাচনে মোট ২৮টি পদে ভোট হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত