ঢাকার পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরের দিন অর্থাৎ ২০০৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে ডিজিএফআই সিলেট ডিটাচমেন্টের কর্নেল জিএস কর্নেল নেয়ামুল ইসলাম ফাতেমী জানতে পারেন যে SI&Tতে প্রশিক্ষণরত প্রায় ২০০/৩০০ অফিসারের মধ্যে জুনিয়র অফিসাররা মেস ছেড়ে অস্ত্রাগার ভাঙতে গেছে। এখবর পাওয়ার পর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। গিয়ে দেখেন—শতাধিক অফিসার শাবল, হাতুড়ি নিয়ে অস্ত্রাগারের দরজায় হামলা করছে। সেখানে কোনো সেন্ট্রি ছিল না। কর্নেল ফাতেমী সামনে দাঁড়াতেই তারা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং তাকে ‘সরকারের দালাল’ ইত্যাদি বলে গালাগাল করতে থাকে। কয়েকজন মারার জন্যও এগিয়ে আসে। তখন তাদের মধ্য থেকেই কিছু সিনিয়র অফিসার এগিয়ে এসে কর্নেল ফাতেমীকে সুরক্ষা দেয়। এরপর তারা মেসে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে কমান্ড্যান্ট SI&T ব্রিগেডিয়ার মাহফুজকে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে ৪৭ নম্বর কয়েদি সাক্ষীর জবানবন্দিতে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
এই সাক্ষী কমিশনকে আরো জানায়—৫২ পদাতিক ব্রিগেডের তৎকালীন কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার শফিউদ্দিন আসার পর তারা তিনজন বসে আলোচনা করেন। পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। অফিসাররা একের পর এক ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। অফিসাররা সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলতে চায়—সেনাপ্রধানকে তাদের সামনে দেখতে চায়। কর্নেল ফাতেমী তৎকালীন ডাইরেক্টর সিটিআইবি (ডিজিএফআই) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন খালেদকে ফোনে ঘটনা জানান।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুন খালেদ কর্নেল ফাতেমীকে মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকের (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা) সাথে কথা বলতে বললে কর্নেল ফাতেমী সঙ্গে সঙ্গে কথা বলেন। মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিক জানান যে, সেনাপ্রধান আসতে পারবেন না। লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা) SI&T-এর ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে আসবেন।
বিকাল ৫টার দিকে লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর হেলিকপ্টারে করে SI&T-তে আসেন। ছাত্রদের সঙ্গে মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর দুই ঘণ্টা কথা বলে ছাত্রদেরকে শান্ত করেন ।
‘বিডিআর বিদ্রোহ’ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহী জওয়ানদের হামলায় নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। এই নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ১১ মাস ধরে তদন্ত করে রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করে কমিশন।


‘হঠাৎ স্লোগান দিতে দিতে পিলখানায় ঢোকে ২৫ জন’
বিডিআর হত্যাকাণ্ডে যেসব সেনা অফিসারের জড়িত থাকার প্রমাণ পেল কমিশন