বিএসএফের সাউন্ড গ্রেনেড হামলার বিচার দাবি সীমান্তবাসীর

জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ২৬
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ৫৭

চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌকা সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করায় বিএসএফ সদস্য ও ভারতীয় নাগরিকদের দৃশ্যমান বিচার দাবি করেছেন বাংলাদেশিরা। সীমান্তে সাউন্ড গ্রেনেড হামলা ও সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশের জন্য এ বিচার দাবি করেন তারা। সীমান্তবাসীরা বলছেন, আইনের লঙ্ঘনকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে সীমান্তে ভারতীয়দের আগ্রাসন বন্ধ হবে না।

রোববার দিনভর সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক। তবে গ্রামবাসীর মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। কৃষিকাজের প্রয়োজন ছাড়া সীমান্তে কাছাকাছি কাউকে যেতে দিচ্ছে না বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নোম্যান্সল্যান্ডের আশপাশে চাষযোগ্য জমি থাকলেই কেবল সেখানে যাওয়ার অনুমতি মিলছে। নোম্যান্সল্যান্ডে পড়ে আছে আম ও বরই গাছের কাটা অংশ। গ্রামের সড়কেই দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি সদস্যরা। কেউ সীমান্তে যেতে চাইলে পরিচয় জানতে চাইছেন তারা। কৃষক না হলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় স্বাভাবিক টহল দিচ্ছে বিজিবি সদস্যরা। ওপারে কয়েকজন বিএসএফ সদস্যকেও টহল দিতে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান. এটি বিএসএফের নিয়মিত টহলের অংশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশে ঢুকে কমপক্ষে অর্ধশত গাছ কেটে ফেলেছে ভারতীয়রা। এর মধ্যে আম গাছই বেশি। চৌকা সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম কালিগঞ্জের বাসিন্দা ইউসুফ আলির দুটি গাছ কেটে ফেলে ভারতীয় নাগরিকরা।

ইউসুফ আলী বলেন, ভারতীয়রা বড় বড় ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে এবং এলোপাতাড়িভাবে গাছ কেটে ফেলে। এসময় বিএসএফ সদস্যরা তাদের কোনো রকম বাধা দেয়নি। বাংলাদেশিরা প্রতিরোধ গড়ে না তুললে আরও গাছ কাটতো তারা। ৫ বছর বয়সী তার প্রতিটি গাছ থেকে গত বছর এক মণ করে আম পেয়েছিলেন। এ বছর আরও বেশি ফলন হতো।

সীমান্ত গ্রামের বাসিন্দা সেতাউর বলেন, ‘আমরা শুনেছি গাছ কেটে ফেলার জন্য বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেছে। এই দুঃখ প্রকাশে আমরা সন্তুষ্ট নই। বিগত দিনগুলোতে এমন ঘটনা ঘটেছে অনেকবারই। একই রকম অন্যায় তারা কতবার করবে? ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

সাবেক ইউপি সদস্য কফিল উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের যে ক্ষতি করে গেছে তারা (ভারতীয়রা), আমরা এসবের সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এদিকে সীমান্ত এলাকায় সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিএসএফ আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে বলে মনে করেন বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সীমান্তের বিষয়গুলো এরই মধ্যে বিজিবির মহাপরিচালককে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফের উচ্চপর্যায়ে বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করবে। বাংলাদেশের জনগণ ও বিজিবি প্রস্তুত আছে। এক ইঞ্চিও ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।

তবে রোববার চৌকা সীমান্ত পরিদর্শন করলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি বিজিবির রাজশাহী সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ ও বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া। অবশ্য বিকেলে ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক বার্তায় বিজিবি অধিনায়ক দাবি করেন, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিজিবির দৈনন্দিন টহল কার্যক্রম চলমান।

চৌকা সীমান্তে বাংলাদেশিদের গাছ কেটে ফেলাকে কেন্দ্র করে শনিবার দিনভর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে। ভারতীয়দের ছোড়া ককটেল, হাসুয়া, ইটপাটকেল ও পাথরের আঘাতে তিন বাংলাদেশি আহত হয়। এর আগে একই সীমান্তে গত ৫ জানুয়ারি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। চারদিন উত্তেজনার পর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছিল।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত