অফিসে না এসেও যুবলীগ নেতার হাজিরা, ব্যবস্থা নেননি সচিব

উপজেলা প্রতিনিধি, গোদাগাড়ী (রাজশাহী)
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ৪৭

ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও থানা পোড়ানোর মামলায় পালিয়ে থাকায় বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার কার্য সহকারী গোলাম কাওসার মাসুম। এরপরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব সারওয়ার জাহান তাকে নানা কায়দায় রক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গোলাম কাওসার মাসুম গোদাগাড়ী পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার স্ত্রী শাহনাজ খাতুন পৌর যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী। আওয়ামী সরকারের আমলে এই দম্পতির দাপটে তটস্থ থাকতেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বছরের ৪ ও ৫ আগস্ট গোলাম কাওসার মাসুম গোদাগাড়ীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে মাঠে ছিলেন।

এরপর মাসুমের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় একাধিক মামলা হয়। এসব মামলার পর জামিন না নেওয়া পর্যন্ত তিনি কখনও বিনা অনুমতিতে আবার কখনও ছুটি নিয়ে দিনের পর দিন অফিসে অনুপস্থিত থেকেছেন। অবশেষে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় বদলি হয়েছেন তদবির করে। গত ১০ এপ্রিল বদলির আদেশের পর মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) তিনি ছাড়পত্র নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপন করেন যুবলীগ নেতা গোলাম কাওসার মাসুম। কিন্তু ২৮ আগস্ট পর্যন্ত হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর আছে। অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সচিব সারওয়ার জাহান গোপনে তার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ২৮ আগস্ট পর্যন্ত হাজিরা খাতায় সই থাকলেও ২৯ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি অনুপস্থিত থাকেন। অনুপস্থিতির জন্য কোনো অনুমতিও নেননি তিনি। এই অনুপস্থিতির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।

এদিকে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত অসুস্থ দেখিয়ে ছুটি নেন। পরে অফিসে না এলেও ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ওঠে মাসুমের। এরপর ২৭ নভেম্বর থেকে আবারও অসুস্থ দেখিয়ে ছুটি শুরু করেন মাসুম। সেই ছুটি ছিল ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২৯ ডিসেম্বর সকালে অফিসে গিয়ে আবারও ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিনা বেতনে ছুটির দরখাস্ত জমা দেন। এই ছুটি শেষেও তিনি অফিসে যেতেন না। তবে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ঠিকই হতো। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি আবারও বিনা বেতনে ছুটি নেন। এই ছুটি শেষে তিনি সকালে একবার হাজিরা খাতায় সই করে পালিয়ে যেতেন। এরমধ্যেই গোদাগাড়ী থেকে বদলি হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন। ১০ এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় বদলি করা হয়। ১৫ এপ্রিল তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভা থেকে ছাড়পত্র নেন। এরমধ্যেও পাঁচ দিন থাকেন লুকিয়ে লুকিয়ে।

পৌরসভার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব সারওয়ার জাহান এই যুবলীগ নেতাকে রক্ষা করেছেন দিনের পর দিন। অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রভাবশালী এই যুবলীগ নেতার সহযোগিতায় আওয়ামী সরকারের আমলে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রণ করে ভারপ্রাপ্ত সচিব বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা মাসুমের বাড়ি পৌরসভার সারেংপুর মহল্লায়। নানা কায়দায় বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তিনি। রাজশাহী শহরের উপশহরে জমি কিনে বানিয়েছেন বাড়ি। সারেংপুরের বাড়িটিও বিলাসবহুল। রয়েছে একটি করে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও দামি মোটরসাইকেল। বেশকিছু ধানী জমিও কিনেছেন যুবলীগের এই নেতা।

আওয়ামী সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর আস্কারা পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন মাসুম। তার উৎপাতে অতিষ্ঠ ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ। ২০২১ সালের ১৫ মার্চ গোদাগাড়ীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত পাঁচ আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যান যুবলীগ নেতা গোলাম কাওসার মাসুম। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহারের দপ্তরেই এই ঘটনা ঘটে।

এর ঘণ্টাখানেকের মাথায় পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েন দণ্ডিতরা। তাদের পালাতে সহায়তা ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে আটক করা হয়েছিল পৌরসভার এই কার্যসহকারী গোলাম কাওসার মাসুমকেও। এদের একমাস করে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এমন গুরুত্বর অভিযোগের পরও তখনও মাসুমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর রাজশাহীর উপশহর থেকে মাসুমকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তিনি কিছুদিন কারাগারেও কাটান। এরপর জামিনে বের হন। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলেও তাকে রক্ষা করেন পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব সারওয়ার জাহান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সারওয়ার জাহান বলেন, আমি তাকে রক্ষা করেছি- এটা ঠিক না। মাসুম কখনও বিনা বেতনে এবং কখনও অসুস্থ দেখিয়ে ছুটিতে ছিলেন। আর যেসব দিন হাজিরা খাতায় সই আছে, সেসব দিনে এসে একবার সই করে চলে গেছে।

বিনা অনুমতিতে অফিসে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা গোদাগাড়ীর আগের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াতের সময়ের। তিনি তখন প্রশাসক ছিলেন। তিনি ব্যবস্থা নেননি। যে কয়দিন মাসুম এভাবে অনুপস্থিত ছিলেন, সে কয়দিনের বেতন দেব না।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, কেউ বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকলে বেতন কেটে নিয়ে সেটা বৈধ করার উপায় নেই। সরকারি নিয়ম-কানুন তো আছে। নূন্যতম একটা শোকজ তো করতেই হতো। এটা আমার জানা ছিল না। আমি এ বিষয়ে পৌরসভার এখনকার প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, মাসুমকে আমরা গ্রেপ্তার করেছিলাম। সে যেসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি, সেগুলোতে সে এখন জামিনে আছে। ছাত্র-জনতার ওপর হামলার আরও কয়েকটি মামলা আছে। সেসব ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে যুবলীগ নেতা গোলাম কাওসার মাসুমের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনপ্রত্যাশীদের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ

নির্বাচনের আগেই ফ্যাসিস্টদের বিচার হবে: আইন উপদেষ্টা

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মানুষের সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আমিনুলের

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থায় পুনঃনির্বাচনের বাংলাদেশের প্রার্থিতা ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত