বগুড়ায় ১০ মাসে নিষিদ্ধ আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৮৬০ জন গ্রেপ্তার

সবুর শাহ্ লোটাস, বগুড়া
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫, ০২: ৪১

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পালিয়ে যাওয়ার পর গত ১০ মাসে বগুড়া জেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগসহ এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ৮৬০ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। গ্রেপ্তারদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। অপরাধী হিসেবে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে বগুড়ায় আ.লীগের উল্লেখযোগ্য কেউ এখনো আটক হয়নি। এদিকে নিষিদ্ধ ওই দলগুলোর বেশকিছু নেতাকে ঢাকা থেকে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। জেলা গোয়েন্দা সূত্রের এক তথ্যে জানা গেছে, জেলার ভয়ংকর দাগি আসামি ও অপরাধীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন।

জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলার ১২ থানায় ২০২৪ সালের আগস্টে ২৪, সেপ্টেম্বরে ৭, অক্টোবরে ১৪৫, নভেম্বরে ১৩৯, ডিসেম্বরে ৯৮ ও চলতি সালের জানুয়ারি মাসে ৭৭, ফেব্রুয়ারিতে ১২৮, মার্চে ৩৮, এপ্রিলে ৮০ ও মে মাসে ১৩৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সব মিলে ২০২৪ সালের ৫ মাস ও ২০২৫ সালের ৫ মাসে সর্বমোট ৮৬০ অপরাধীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, স্থানীয়ভাবে এসব আসামির মধ্যে কমপক্ষে ৩ শতাধিক আসামিকে ছাত্র-জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সূত্রটি আরো জানায়, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী বগুড়া জেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক ক্যাডার বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। এদের অধিকাংশই ঢাকায় অবস্থান করছেন।

গত ২৪ মে রাতে বগুড়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু, জেলা আ.লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মাশরাফী হিরো ও বগুড়া পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরিফুর রহমান আরিফকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জনতা আটক করে পুলিশে দেয়। এর আগে গত ১২ এপ্রিল ঢাকার আদাবর থেকে কাহালু উপজেলা আ.লীগ সভাপতি হেলাল উদ্দিন কবিরাজ ও তার ছেলে উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি সুরুজ উদ্দিন কবিরাজকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর বগুড়া সদর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিক এবং তার স্ত্রী মাহফুজা খানম লিপিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে জনগণ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। গত ২৫ মে রাতে শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের কুন্দইশ এলাকা থেকে বগুড়া জেলা আ.লীগ নেতা আসাদুর রহমান দুলুর ছেলে মাহরুখ আল রুহান ওরফে অরিত্র এবং দুলুর ভাতিজা আবরিম ইবনে আতাউর রহমান বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে অরিত্র নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং বাবু নিষিদ্ধ আ.লীগের সক্রিয় কর্মী।

জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, হাতিরঝিল, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কল্যাণপুর, শ্যামলী, বসিলা, গাবতলী, মহাখালীসহ গোটা ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছে অনেকে। এরা কেউ কেউ কৌশলে বিদেশি নম্বর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করে। বিশেষ করে চলতি মাসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলে তারা আরো আত্মগোপনে চলে যান। তাদের চেনাজানা লোকদের দিয়েই সব কাজ সারা হচ্ছে বলে সূত্রটি জানায়। তারা বলেন, কেউ কেউ বর্তমান বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। পরিবহণ ব্যবসায়ী-ঠিকাদারসহ নিষিদ্ধ আ.লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের জেলা এবং থানার নেতারা ঢাকাকে নিরাপদ মনে করছেন। সে কারণে তারা সেখান থেকেই সব যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

এদিকে বগুড়ায় এখনও ফ্যাসিস্টের বেশকিছু অনুসারী লোকালয় ছেড়ে বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান করছেন। এছাড়া এরা সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকটিভ বলে জানা গেছে।

বগুড়া শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেল ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম খায়রুল বাশার এবং এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের ডা. সানী আমার দেশকে বলেন, বগুড়ায় নিষিদ্ধ আ.লীগের উল্লেখযোগ্য কেউ এখনো আটক হয়নি। আ.লীগের সন্ত্রাসীরা এখনও আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান তারা।

বগুড়ার একাধিক সংবাদপত্রসেবী ও ছোট ব্যবসায়ী বলেছেন, পুলিশের আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত। এ পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অধিকাংশই জনতা আটক করে পুলিশে দিয়েছে।

এদিকে জেলা পুলিশের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতোয়ার হোসেন জানায়, ধুনট, শেরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশে কিছু পরিবর্তনের পর অভিযান চলমান রয়েছে। জেলা গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিমও মাঠে কাজ করছে। আগামীতে আরো গ্রেপ্তারে জোরালো ভূমিকা পালন করা হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত