আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

চট্টগ্রাম কাস্টমসে এবার রাজস্ব আদায়ের টার্গেট এক লাখ কোটি টাকা

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কাস্টমসে এবার  রাজস্ব আদায়ের টার্গেট 
এক লাখ কোটি টাকা

প্রতিবছর এককভাবে সর্বাধিক রাজস্ব আদায় করে দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও রাজস্ব আদায়ের বড় একটি টার্গেট থাকবে এমনটি ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এক লাখ দুই হাজার ২৯৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত বছর যা ছিল ৮০ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। ওই বছর আদায় হয় ৭৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এবার গত বছরের চেয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি আদায় করার তাগাদা দিয়েছে সরকার।

গত তিন বছরের পরিসংখ্যন বলছে, প্রতিবছর আগের বছরের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার দিক থেকে তিন-চার হাজার কোটি টাকা বেশি আর আগের বছরের আদায়ের চেয়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গতবারের আদায়ের চেয়ে ২৬ হাজার কোটি আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে এনবিআর।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ২০৪ কোটি টাকা; বিপরীতে ওই বছর আদায় হয়েছিল ৬১ হাজার ৩৫০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ৬৮ হাজার ৮৬৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮০ হাজার ৪০২ কোটি টাকা আদায় করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে। ওই বছর আদায় হয় ৭৬ হাজার ১৪১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের শুরুতে ৯২ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে পাঁচ মাসের মাথায় নভেম্বরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় কাস্টমসকে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় এক লাখ দুই হাজার ২৯৫ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৩১ হাজার ৬০২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। শতাংশের হিসাবে যা ৩১ শতাংশের কাছাকাছি।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ জানান, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তাসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতাÑসব মিলিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ছিল নেতিবাচকতা। রড-সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর উৎপাদন ও কাঁচামাল আমদানি অর্ধেকে নেমে গেছে। আবাসন খাতও চলছে ঢিমেতালে। আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি হ্রাস পেয়েছে মারাত্মকভাবে। এসব খাত থেকেই আগে সিংহভাগ রাজস্ব আসত।

এ অবস্থায় কাস্টমসের এত বড় টার্গেটকে উচ্চাভিলাষী বলে মনে করেন মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে সফল চুক্তির পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে সংশয় কেটে যাওয়ায় অর্থনীতিও চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। এর ওপর রমজানকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের আমদানি শুরু হয়েছে। তাই চলতি অর্থবছর শুরুর ছয় মাস একটু টানাপোড়েনে গেলেও বাকি ছয় মাসে রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী জানান, রাজস্ব আদায়ে কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। লক্ষ্য পূরণের জন্য কাস্টমস কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সাধারণ ভুলকে জালিয়াতি ধরে সর্বোচ্চ জরিমানা করেন। এতে নতুন উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অথচ বড় টার্গেট নির্ধারণ না করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি আর কাস্টমসের অটোমেশন এবং সক্ষমতা বাড়ালে এই লক্ষ্য সহজেই অর্জন করা সহজ।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ আল আমিন জানান, রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে; তেমনি জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গত পাঁচ মাসে দুই লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা মূল্যের চার কোটি ১০ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। দিন যত যাচ্ছে, আমদানি-রপ্তানির ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। তবে সার্ভার ডাউনসহ কিছু জটিলতার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আছে। কাস্টমসের পক্ষ থেকে এই জটিলতাগুলো চিহ্নিত করে নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে অর্থবছরের শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...