ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য নির্বাচিত সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার ময়মনসিংহের বাসায় হামলা হয়েছে। এ সময় ককটেলেরও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বাড়ির গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বাড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যরা আগুনের ঝলক ও বিকট শব্দ টের পেয়ে দ্রুত বের হয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হন।
রাফিয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় রাফিয়াকে টার্গেট করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে ও তার পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছে।
এমনকি পরিকল্পিতভাবে তার এবং তার পরিবারের ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য ও ময়মনসিংহ সদরের ঢোলাদিয়ার বাড়ির ঠিকানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা যায়। ঠিকানা প্রকাশের পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী ক্যাডাররা রাফিয়ার বাড়িতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করতে থাকে।
এরই মধ্যে গত ১৯ নভেম্বর রাতে রাফিয়ার ভাই খন্দকার জুলকারনাঈন রাদ ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় আওয়ামী দোসর বদরুল আমীনসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের ৫-৬ জনকে আসামি করে অভিযোগ দেন। রাদ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতনের পর প্রতিহিংসার জেরে বদরুল আমীনসহ একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে তাদের পরিবারের ক্ষতি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের ভয়ভীতি দেখানো, বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রচার এবং তাদের বাসার ঠিকানা প্রকাশ করে নিরাপত্তাহীন করছে বদরুল ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
এমন অভিযোগ দায়েরের ঠিক কয়েক ঘণ্টা পরই আনুমানিক রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাদের বাসায় আগুন এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। হামলার পর মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বদরুল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মামলার এজাহারের ছবি পোস্ট করে রাফিয়ার পরিবারকে আরো হুমকি দেন। সেই পোস্টে মন্তব্য করে কয়েক আওয়ামী সন্ত্রাসী আবার রাফিয়ার বাড়িতে হামলার আহ্বান জানায়।
এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুন দেওয়া এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে নতুন করে আরেকটি মামলা করেছেন রাফিয়ার ভাই রাদ। পরিবারের দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বাসার ঠিকানা এবং ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ করায় তারা উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এর আগে গত ২৩ মে অভিযুক্ত বদরুল তার ফেসবুকে ‘সমন্বয়কদের ঝুলিয়ে হত্যা করে প্রতিবিপ্লবের ডাক’ শিরোনামে একটি উসকানিমূলক পোস্ট দেন। তার তিনদিন পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রধান আল নূর মোহাম্মদ আয়াশ সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে আহত হন। বদরুলের উস্কানিমূলক পোস্ট এবং তার পরিচয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে এখনো পর্যন্ত তাকে বা তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী আল নূর আয়াশ বলেন, ‘রাফিয়া আমাদের জুলাইযোদ্ধা। আমরা ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, রাফিয়ার ভাইয়ের প্রথম অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করার অনুমতি চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত নির্দেশনা দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আরেকটি মামলা নেওয়া হয়েছে এবং ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে।

