ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন ঘুষ বাণিজ্যে বেপরোয়া। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিষ্ঠ তার এই ঘুষ বাণিজ্যে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হাসানুল নিজে টাকা নেন না, তার বিশ্বস্ত অফিস সহকারী আকরাম হোসেনের মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্য করেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা। আকরাম হোসেন হত্যা মামলার আসামি।
তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানির অভিযোগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারীদের। দাপ্তরিক কোনো কাজ বা ছুটির আবেদন, জিপিএফ লোন, ব্যাংক লোনের কাগজে স্বাক্ষর করতে তার অফিস কক্ষের চৌকাঠ পেরুলেই গুনতে হয় টাকা। কেউ টাকা না দিলে, সেই কাগজে স্বাক্ষর করেন না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসানুল হোসেন ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকরিরত অবস্থায় আওয়ামী পন্থী ডাক্তারদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর হয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে কাজ করেছেন। ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে চিকিৎসার পরিবর্তে পুলিশকে ফোন করে জানিয়ে দিতেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী রাতারাতি বদলি হয়ে ফুলবাড়ীয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন।
চাকরির ভয়ে কেউ কোথাও অভিযোগ বা এ বিষয়ে কারও সাথে কথা বলতে ভয় পায়। অনেকেই আবার এখান থেকে বদলি হয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তাতেও বিপত্তি। বদলি ফরোয়ার্ডিং এর জন্য টাকা দিতে হয়।
হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ড ইসরাফিল কান্না করতে করতে বলেন, “আমি কোরবানির ঈদের বোনাস এখনো পাইনি, দুই মাসের বেতন আটকা। এখনো দেয়নি। স্যারকে বলেছি, ‘দেই-দিচ্ছি’ বলে বকাঝকা করে। আপনারা স্যারের বিরুদ্ধে লিখলে কিছু হবে না। স্যারের হাত অনেক লম্বা, তখন আমাদের অন্যত্র দূরে কোথাও বদলি করে দেবে। আমি গরিব মানুষ, এই চাকরি আমার সম্বল। আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়েটা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি। আমরা সরকারিভাবে দুইজন সিকিউরিটি গার্ড, একজন আউটসোর্সিং এর, কিন্তু ডিউটি করতে হয় আমার একা।”
স্বাস্থ্য সহকারী তাসলিমা আক্তার বলেন, “আমি মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যোগদান করার পর আমার চার মাসের বেতন আটকে রাখে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসানুল হোসেন। আমি তাকে বলেছি, ‘আমার কী অপরাধ স্যার? যদি ভুল করে থাকি ক্ষমা করে দেন।’ তারপরও জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসের বেতন আটকে রাখে। অক্টোবর মাসের বেতন পেয়েছি গত কয়েক দিন আগে।”
নাম না প্রকাশে এক স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, “আমি অসুস্থ ছুটির জন্য গিয়েছিলাম, অফিস সহকারী আকরাম হোসেন বলেন ৭ হাজার টাকা লাগবে। এরপর আমি আর ছুটি নিইনি।” আরেক স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, “আমার জিপিএফ ফান্ড থেকে লোন করার জন্য স্বাক্ষর নিতে গেলে খরচের কথা বলে আকরাম হোসেনকে তিন হাজার টাকা দিয়েছি।”
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন ঘুষ-দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে বলেন, “শুধু সিকিউরিটি গার্ডের বেতন-বোনাস দেওয়া হয়নি। তাকে অনিয়মের জন্য অবজারভেশনে রাখা হয়েছিল, এখন দিয়ে দেব।”
ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন অফিসের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. ফয়সাল আহমেদ বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিচালক, স্বাস্থ্য, ময়মনসিংহ, ডা. প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, ভুক্তভোগীদের নাম-মোবাইল নাম্বার দিন, আমি দেখছি।

