চারুকলায় হাসিনার মোটিফে আগুন তিন মাসেও অধরা দুর্বৃত্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ আয়োজিত বর্ষবরণের প্রতীকী ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনার তিন মাস পার হলেও জড়িতকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদঘাটন করার জন্য পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি দুর্বৃত্তকে ধরে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশকে বলেছিল। কিন্তু জিনস ও গেঞ্জি পরা ওই দুর্বৃত্ত এখনো অধরা রয়ে গেছে।

পুলিশের সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, চারুকলার গেট লাগানো ছিল। পুলিশি পাহারা তেমন ছিল না। ওই দুর্বৃত্ত দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। ওই ব্যক্তি কালো টি-শার্ট, বাদামি প্যান্ট ও কালো স্যান্ডেল পরেছিলেন। তার চুল পেছনে ঝুঁটি বাঁধা ছিল। ওই যুবক ভেতরে প্রবেশ করে মোটিফে লিকুইড দিয়ে আগুন লাগানোর মুহূর্তে চারুকলার চত্বরে একটি কুকুর দীর্ঘ সময় ধরে ঘেউ ঘেউ এবং ছোটাছুটি করছিল। কুকুরের আওয়াজেও তখন আশপাশ থেকে কেউ এগিয়ে আসেনি বা সাড়া দেয়নি।

ওই দুর্বৃত্ত মোটিফে আগুন দিয়ে গেট থেকে বের হয়েই দৌড়ে পালিয়ে যায়। আগুন দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে মোটিফটি। পুলিশ বলছে, ওই আগুনের ঘটনায় একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিন্তু ওই যুবককে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাকে ধরতে একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হলেও তাকে ধরা যায়নি। তবে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে ধরা গেলে মোটিফে আগুন দেওয়ার বিষয়টির রহস্য উদঘাটিত হবে। এছাড়া আগুন দেওয়ার জন্য তাকে কে উদ্বুদ্ধ করেছে তা জানা যাবে। তবে সিসি ক্যামেরায় একজনকেই আগুন দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনের লক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতীকী মোটিফ বানিয়ে থাকেন। অন্যান্য মোটিফের সঙ্গে প্রতীকী দানবীয় ফ্যাসিস্টের মোটিফটিও বানানো হয়েছিল। অনুষদের দক্ষিণ পাশের গেটসংলগ্ন জায়গায় প্যান্ডেলের ভেতরে এই মোটিফগুলো রাখা হয়েছিল। গত ১২ এপ্রিল চারুকলার ভেতরে গিয়ে এক দুর্বৃত্ত ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ নামের মোটিফটি পুড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে শান্তির পায়রা মোটিফটিও আংশিক পুড়ে যায়।

এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি দুর্বৃত্তকে ধরতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও (র‌্যাব) মাঠে কাজ করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আমার দেশকে জানান, ‘মোটিফে আগুন দেওয়া দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে আমরা কাজ করছি।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোটিফ পোড়ানোর ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। কিন্তু কেউ ওই আগুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি। যে দুর্বৃত্ত আগুন দিয়েছে, তার মতো জিনস ও গেঞ্জি পরা যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। কিন্তু ওই দুর্বৃত্ত অধরাই থেকে গেছে।

আবার পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী পলাতক আছে। ওই যুবক ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ছাত্রলীগের ওই কর্মী গ্রেপ্তার এড়াতে তার অবস্থান ঘনঘন পরিবর্তন করছে। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

সূত্র জানায়, আগুনের ঘটনায় চারুকলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ফ্যাসিবাদের মোটিফ যেখানে তৈরি হচ্ছিল, সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কথা ছিল। কিন্তু সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, ওই এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই ঢিলেঢালা ছিল। আগুন দেওয়া যুবক যখন ভেতরে প্রবেশ করেছে তখন কাউকে দেখা যায়নি। এতে খোদ পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্র জানায়, ঘটনাটি পরিকল্পিত কি না তা দুর্বৃত্তকে ধরা গেলে জানা যাবে। তবে পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিতভাবেই ওই মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।