পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনে ধূম্রজাল
সরদার আনিছ
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে পরিমার্জন নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। বড় পরিবর্তনের উদ্যোগের পরও থেকে যাচ্ছে লেখা চুরির দায়ে অভিযুক্ত বিতর্কিত লেখক জাফর ইকবালসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের সম্পাদিত বই। এ নিয়ে সর্বমহলে ক্ষোভ থাকলেও আমলে নিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ। একে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি বলে আখ্যা দেন শিক্ষাবিদরা।
২০২৫ সালের এনসিটিবির প্রকাশিত বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত জাফর ইকবালের সম্পাদিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ শিরোনামে বই পাঠ্য। এই বইয়ের তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রথম সংস্করণ রচনা ও সম্পাদনায় সবার শীর্ষে রয়েছে ফ্যাসিবাদের দোসর ও জুলাই বিপ্লবের সরাসরি বিরোধিতাকারী জাফর ইকবালের নাম। এরপরই রয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নাম। এছাড়া অন্যান্য বইয়ের বেশির ভাগ লেখক ফ্যাসিবাদের দোসর বলে জানা গেছে।
ফ্যাসিবাদ আমলেও জাফর ইকবালের বই নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ছিল। তার বিরুদ্ধে অন্যের লেখা চুরি করা বা অনুবাদ করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালের শুরুতে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠলে তা নিয়ে দেশজুড়ে হইচই পড়ে যায়। পরে সেই অভিযোগ সত্য বলে দায় স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন বইয়ের রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির সদস্য ও এনসিটিবির কমিটির পৃথক সভায় ফ্যাসিবাদের দোসর জাফর ইকবালের লেখা বইটির বিষয়ে কথা উঠলে আমলাদের কারণে তা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ২০২৬ সালেও তা বহাল থাকছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীকে এ বিষয়ে এক মিটিংয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সময়ের অভাবে তা বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করেন বলে জানা গেছে।
জাফর ইকবালের বইয়ের ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সদস্য আমান সুলাইমান আমার দেশকে বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা যাদের সঙ্গে নিয়ে বিগত ১৫ বছর তার স্বৈরশাসন দীর্ঘায়িত এবং ভারতীয় ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম জাফর ইকবাল। এছাড়া জুলাই বিপ্লবের প্রকাশ্য বিরোধিতাকারীদের মধ্যে সম্মুখভাগের ব্যক্তি তিনি। তাকে ছাড়া কি দেশে আর কোনো আইসিটির বিষয়ে লেখক নেই? এরপরও জাফর ইকবালের বই রাখার মানে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের সঙ্গে সরাসরি বেঈমানি করা।
তিনি আরো বলেন, পাঠ্যপুস্তকে বড় পরিবর্তনের কথা ফলাও করে প্রচার করা হলেও বাস্তবে তেমন একটা পরিবর্তন হচ্ছে না। ২০২৬ সালের পাঠ্যপুস্তকে শুধু জুলাই অভ্যুত্থান বিস্তারিতভাবে স্থান পাচ্ছে। এছাড়া ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন ছাড়া আগের মতো রয়ে যাচ্ছে।
এনসিসিসির এই সদস্যের মতে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের মিটিংয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ২০২৬ সালের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে আমূল তথা বড় পরিবর্তন আনা হবে। কিন্তু আমলাদের কারণে তা আর হচ্ছে না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব এবং এনসিটিবির শীর্ষ কর্তারাই তো পরিবর্তনের বিষয়ে আন্তরিক না, তাহলে পরিবর্তনটা আসবে কীভাবে? ২০২৬ সালের পাঠ্যপুস্তকে পরিমার্জন ও পরিবর্তনের জন্য আমি বিষয়ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট ছক আকারে ২৯ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত সুপারিশমালা দিলেও বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। এটা খুবই রহস্যজনক। ফলে জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা তা পাঠ্যপুস্তকে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, বছরের ব্যবধানে আবারও পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ পরিবর্তন আসবে আগামী বছরের মাধ্যমিক, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের বেশ কিছু বিষয়ে। কী কী পরিবর্তন আনা হবে, তা চূড়ান্ত করার জন্য এর মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও করা হয়েছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা পরিমার্জনের বিষয়ে কমিটি গঠনের কথা বললেও বাস্তবে এ নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম আমার দেশকে বলেন, পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জনের বিষয়ে এই কমিটি হয়নি বরং এনসিটিবির মিটিংয়ে যেসব পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা যথাযথভাবে হচ্ছে কি না, তা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই কমিটিকে।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও তার ফেসবুক পোস্টে পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের কথা জানান। তিনি বলেন, নতুন পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করা হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস, বিগত চারটি নির্বাচন নিয়ে তথ্য।
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, এবার ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি অধ্যায় যুক্ত করা হচ্ছে। এতে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পাশাপাশি নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুও থাকবে। এছাড়া চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ে থাকা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যান্য বিষয়বস্তুর তথ্য ও ভাষাগত সমস্যা সংশোধন করা হবে। আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়েও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর লেখা সংযোজন করা হচ্ছে।
সূত্র আরো বলছে, অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শীর্ষক অধ্যায়টি সংক্ষিপ্ত করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা নাও করা হতে পারে। এ অধ্যায়ে শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণটির পুরো বিবরণ রয়েছে। এর বাইরে দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ‘রহমানের মা’ গল্পটিও পরিবর্তন করা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তা রিসিভ হয়নি। পরে তার দপ্তরে গিয়েও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যানের পিএ মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, স্যার গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছেন।
এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান আমার দেশকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাড়াহুড়ার মধ্যে আমরা মন্দের ভালো হিসেবে ২০১২ সালের কারিকুলাম বেছে নিয়েছিলাম। এরপরে ব্যাপক পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু ২০১২ সালের কারিকুলাম নেওয়া হয়েছে সেহেতু শুধু জাফর ইকবাল নয়, ওই সময়ে রচিত অধিকাংশ বইয়ের লেখকই ফ্যাসিবাদের দোসর। কয়লা ধুইলে যেমন ময়লা যায় না, তেমনই আমূল পরিবর্তন ছাড়া এসব বই যতই পরিমার্জন করা হোক না কেন ফ্যাসিবাদের বয়ান রয়েই যাবে।
এর আগেও গত বছরের আগস্টে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়। ২০২৫ সালের পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করা হয় জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি। বাদ দেওয়া হয় বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা হাসিনার ছবি সংবলিত উক্তি। এছাড়া বিভিন্ন বইয়ে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হলেও বছরজুড়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক ছিল তুঙ্গে। ফলে ২০২৬ সালের পাঠ্যপুস্তক নিয়েও বিতর্কের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করে বিশ্লেষকরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে পরিমার্জন নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। বড় পরিবর্তনের উদ্যোগের পরও থেকে যাচ্ছে লেখা চুরির দায়ে অভিযুক্ত বিতর্কিত লেখক জাফর ইকবালসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের সম্পাদিত বই। এ নিয়ে সর্বমহলে ক্ষোভ থাকলেও আমলে নিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ। একে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি বলে আখ্যা দেন শিক্ষাবিদরা।
২০২৫ সালের এনসিটিবির প্রকাশিত বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত জাফর ইকবালের সম্পাদিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ শিরোনামে বই পাঠ্য। এই বইয়ের তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রথম সংস্করণ রচনা ও সম্পাদনায় সবার শীর্ষে রয়েছে ফ্যাসিবাদের দোসর ও জুলাই বিপ্লবের সরাসরি বিরোধিতাকারী জাফর ইকবালের নাম। এরপরই রয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নাম। এছাড়া অন্যান্য বইয়ের বেশির ভাগ লেখক ফ্যাসিবাদের দোসর বলে জানা গেছে।
ফ্যাসিবাদ আমলেও জাফর ইকবালের বই নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ছিল। তার বিরুদ্ধে অন্যের লেখা চুরি করা বা অনুবাদ করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালের শুরুতে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠলে তা নিয়ে দেশজুড়ে হইচই পড়ে যায়। পরে সেই অভিযোগ সত্য বলে দায় স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন বইয়ের রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির সদস্য ও এনসিটিবির কমিটির পৃথক সভায় ফ্যাসিবাদের দোসর জাফর ইকবালের লেখা বইটির বিষয়ে কথা উঠলে আমলাদের কারণে তা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ২০২৬ সালেও তা বহাল থাকছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীকে এ বিষয়ে এক মিটিংয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সময়ের অভাবে তা বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করেন বলে জানা গেছে।
জাফর ইকবালের বইয়ের ব্যাপারে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সদস্য আমান সুলাইমান আমার দেশকে বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা যাদের সঙ্গে নিয়ে বিগত ১৫ বছর তার স্বৈরশাসন দীর্ঘায়িত এবং ভারতীয় ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম জাফর ইকবাল। এছাড়া জুলাই বিপ্লবের প্রকাশ্য বিরোধিতাকারীদের মধ্যে সম্মুখভাগের ব্যক্তি তিনি। তাকে ছাড়া কি দেশে আর কোনো আইসিটির বিষয়ে লেখক নেই? এরপরও জাফর ইকবালের বই রাখার মানে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের সঙ্গে সরাসরি বেঈমানি করা।
তিনি আরো বলেন, পাঠ্যপুস্তকে বড় পরিবর্তনের কথা ফলাও করে প্রচার করা হলেও বাস্তবে তেমন একটা পরিবর্তন হচ্ছে না। ২০২৬ সালের পাঠ্যপুস্তকে শুধু জুলাই অভ্যুত্থান বিস্তারিতভাবে স্থান পাচ্ছে। এছাড়া ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন ছাড়া আগের মতো রয়ে যাচ্ছে।
এনসিসিসির এই সদস্যের মতে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের মিটিংয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ২০২৬ সালের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে আমূল তথা বড় পরিবর্তন আনা হবে। কিন্তু আমলাদের কারণে তা আর হচ্ছে না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব এবং এনসিটিবির শীর্ষ কর্তারাই তো পরিবর্তনের বিষয়ে আন্তরিক না, তাহলে পরিবর্তনটা আসবে কীভাবে? ২০২৬ সালের পাঠ্যপুস্তকে পরিমার্জন ও পরিবর্তনের জন্য আমি বিষয়ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট ছক আকারে ২৯ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত সুপারিশমালা দিলেও বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। এটা খুবই রহস্যজনক। ফলে জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা তা পাঠ্যপুস্তকে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, বছরের ব্যবধানে আবারও পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ পরিবর্তন আসবে আগামী বছরের মাধ্যমিক, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের বেশ কিছু বিষয়ে। কী কী পরিবর্তন আনা হবে, তা চূড়ান্ত করার জন্য এর মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও করা হয়েছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা পরিমার্জনের বিষয়ে কমিটি গঠনের কথা বললেও বাস্তবে এ নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম আমার দেশকে বলেন, পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জনের বিষয়ে এই কমিটি হয়নি বরং এনসিটিবির মিটিংয়ে যেসব পরিবর্তন কিংবা পরিমার্জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা যথাযথভাবে হচ্ছে কি না, তা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই কমিটিকে।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও তার ফেসবুক পোস্টে পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের কথা জানান। তিনি বলেন, নতুন পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করা হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস, বিগত চারটি নির্বাচন নিয়ে তথ্য।
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, এবার ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি অধ্যায় যুক্ত করা হচ্ছে। এতে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পাশাপাশি নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুও থাকবে। এছাড়া চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ে থাকা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যান্য বিষয়বস্তুর তথ্য ও ভাষাগত সমস্যা সংশোধন করা হবে। আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়েও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর লেখা সংযোজন করা হচ্ছে।
সূত্র আরো বলছে, অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শীর্ষক অধ্যায়টি সংক্ষিপ্ত করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা নাও করা হতে পারে। এ অধ্যায়ে শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণটির পুরো বিবরণ রয়েছে। এর বাইরে দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ের ‘রহমানের মা’ গল্পটিও পরিবর্তন করা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তা রিসিভ হয়নি। পরে তার দপ্তরে গিয়েও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যানের পিএ মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, স্যার গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছেন।
এনসিটিবির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম রিয়াজুল হাসান আমার দেশকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাড়াহুড়ার মধ্যে আমরা মন্দের ভালো হিসেবে ২০১২ সালের কারিকুলাম বেছে নিয়েছিলাম। এরপরে ব্যাপক পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু ২০১২ সালের কারিকুলাম নেওয়া হয়েছে সেহেতু শুধু জাফর ইকবাল নয়, ওই সময়ে রচিত অধিকাংশ বইয়ের লেখকই ফ্যাসিবাদের দোসর। কয়লা ধুইলে যেমন ময়লা যায় না, তেমনই আমূল পরিবর্তন ছাড়া এসব বই যতই পরিমার্জন করা হোক না কেন ফ্যাসিবাদের বয়ান রয়েই যাবে।
এর আগেও গত বছরের আগস্টে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়। ২০২৫ সালের পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করা হয় জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি। বাদ দেওয়া হয় বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা হাসিনার ছবি সংবলিত উক্তি। এছাড়া বিভিন্ন বইয়ে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হলেও বছরজুড়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক ছিল তুঙ্গে। ফলে ২০২৬ সালের পাঠ্যপুস্তক নিয়েও বিতর্কের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করে বিশ্লেষকরা।
আগামী বার্ষিক পরীক্ষার আগেই (৩০ নভেম্বরের মধ্যেই) ছুটির দিনে দেশের সব বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির নির্বাচন দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।
১৬ মিনিট আগেরাকসু, হল ছাত্র সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫ এর ফলাফল আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এদিন দুপুরে উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীবের নিকট নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট হস্তান্তর করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর এফ নজরুল ইসলাম।
২ ঘণ্টা আগেরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ করা হবে আজ। আগামী ২৬ অক্টোবর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাকসু ও সিনেট প্রতিনিধিদের শপথ বাক্য পড়াবেন রাকুস সভাপতি
৪ ঘণ্টা আগেধর্ষণ ও নারী অবমাননার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। রাত ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভে শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়
১১ ঘণ্টা আগে