৪৭তম বিসিএসের প্রিলিতে ‘অনিয়ম’, পরীক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম

প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ০৯

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অনিয়ম, প্রশ্নের ভুল এবং অসঙ্গতির অভিযোগ এনে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) আগামী তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে আহ্বান জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান পরীক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জালাল আহমদ। উপস্থিত ছিলেন জীবন আহমেদ অভি, রাজিব, আবু সালেহ প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

জালাল আহমদ বলেন, “গত ১৯ সেপ্টেম্বর সারাদেশে অনুষ্ঠিত ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এতটাই জটিল ও সময়সাপেক্ষ ছিল যে, প্রশ্ন বুঝতে গিয়েই দুই ঘণ্টা লেগে যায়। সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সময় ও বিষয়বস্তুর ভারসাম্য রক্ষা করে প্রশ্ন তৈরি করা উচিত ছিল।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রশ্নপত্রে একাধিক ভুল ও অসঙ্গতি ছিল।
“সেট-১ এর ১৪৬ নম্বর প্রশ্নে কম্পিউটারের প্রসেসরের ক্লক স্পিড ৪.০০ গিগাহার্জ হলে ক্লক সাইকেল টাইম কত- এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর ০.২৫ ন্যানোসেকেন্ড হলেও তা কোনো অপশনেই ছিল না। আবার ১১০ নম্বর প্রশ্নে ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র কোন প্রদেশে অবস্থিত তা জানতে চাওয়া হলেও সঠিক উত্তর ‘কোম’ অপশনগুলোতে অনুপস্থিত।”

ডাবল উত্তরসংবলিত প্রশ্নের অভিযোগও তোলেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে বলেন,
“সেট-১ এর ১২০ নম্বর প্রশ্নে ‘কোন দেশটি OPEC এর সদস্য নয়’ জানতে চাওয়া হয়েছে, যেখানে দুটি উত্তরই সঠিক হতে পারে- ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ। এ ধরনের একাধিক উত্তর হতে পারে এমন প্রশ্ন ছিল প্রায় ১৫-১৬টি।”

এ ছাড়া খুলনায় ভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন পরীক্ষার্থীরা।

পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, এবার প্রিলিমিনারিতে অস্বাভাবিকভাবে কমসংখ্যক প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। জালাল আহমদ বলেন,
“৪৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৬৪৪ জন। গত আটটি বিসিএসের তুলনায় এটি সবচেয়ে কম। এই অস্বাভাবিক ফলাফলের যৌক্তিক ব্যাখ্যা পিএসসিকে দিতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে তারা নয় দফা দাবি তুলে ধরেন-

১. প্রিলিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানো:
প্রতিটি বিসিএস প্রিলিতে মোট পদসংখ্যার ৬ থেকে ৮ গুণ প্রার্থী উত্তীর্ণ করতে হবে এবং ৩-৪ মাসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা নিতে হবে।

২. সঠিক উত্তর ও কাট মার্ক প্রকাশ:
প্রিলির পর প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর, প্রাপ্ত নম্বর ও কাট মার্ক পিএসসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

৩. মানসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রশ্নপত্র:
মানবিক, ব্যবসা ও বিজ্ঞান- সব গ্রুপের প্রার্থীর উপযোগী ভারসাম্যপূর্ণ প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে।

৪. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত:
প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা- সব পর্যায়ের নাম্বারসহ ফলাফল প্রকাশ করতে হবে, যেমনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষায় করে।

৫. নন-ক্যাডার বিধি ২০২৩ সংশোধন:
প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবাইকে সরকারি বা আধা সরকারি চাকরির সুযোগ দিতে হবে।

৬. ‘মাইগ্রেশন স্টাইল’ চালু:
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মাইগ্রেশন পদ্ধতি ও প্যানেল বা ওয়েটিং লিস্টের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে পদ শূন্য না থাকে।

৭. একই প্রার্থীকে একই ক্যাডারে একাধিকবার সুপারিশ না করা:
এর জন্য একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেস তৈরি করতে হবে।

৮. খাতা পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ:
লিখিত পরীক্ষার খাতা কম খরচে ও দ্রুত সময়ে পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ দিতে হবে।

৯. কারিগরি ত্রুটি নিরসন:
টেলিটকের ত্রুটি বা কর্মীদের গাফিলতির কারণে অনেক পরীক্ষার্থী এসএমএস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন। ভবিষ্যতে এমন সমস্যা এড়াতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ সময় তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরা যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাকরি চাই, ভাগ্যের ওপর নয়। পিএসসি আমাদের দাবির দ্রুত জবাব না দিলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।”

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত