আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

কর্মবিরতিতে দ্বিতীয় দিনেও হয়নি বার্ষিক পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার
কর্মবিরতিতে দ্বিতীয় দিনেও হয়নি বার্ষিক পরীক্ষা

সরকারের নির্দেশনা সত্ত্বেও শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতি কারণে দ্বিতীয় দিনেও সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। তবে আজ মঙ্গলবার বিকাল নাগাদ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুপুরে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ও কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক রেবেকা সুলতানা আমার দেশকে বলেন, দ্বিতীয়দিনেও সরকারি মাধ্যমিক কোনো স্কুলেই বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। চার দফা আদায় না হওয়া নাগাদ আমাদের পূর্ণ কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। তবে বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সেন্টিমেন্ট আমাদেরকে বিব্রত করছে। বিকাল নাগাদ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। আমাদের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করলে আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিব।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, গত দুইদিনে অন্তত তিনটি চিঠি ইস্যু করে আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এমন কি গভীর রাতে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমেও চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকরা এমন পরিস্থিতি চান না, কর্তৃপক্ষ জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে আমাদের নিয়ে আলোচনায় বসে আশ্বস্ত করলেই তো আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিতে পারি।

মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল কাসেম মোহাম্মদ শামছুদ্দীন জানিয়েছেন, পরীক্ষা বর্জনসহ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি অব্যাহত থাকায় স্কুলগুলোতে পরীক্ষা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘সহকর্মী শহীদ ফাতেমা আক্তারের আত্মত্যাগসহ দুই শতাধিক শিক্ষকের রক্ত কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী ১১তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবির বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, ২. ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা দূর এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা।

দুপুর ২টার দিকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি-এর সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি আমার দেশকে বলেন, সোমবারের চেয়েও মঙ্গলবার আরো বেশি জোরালোভাবে কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। গতকাল যারা অংশ নেয়নি তারাও আজ অংশ নিয়েছেন। আমরা দাবি আদায় না হওয়া নাগাদ আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

এদিকে এন্ট্রি-পদের বেতন ৯ম গ্রেডসহ চার দফা দাবিতে দুই দিনের অবস্থান কর্মসূচি ও আলটিমেটাম শেষে কোনো সমাধান না পেয়ে সোমবার থেকে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে তিনদিনের পূর্ণ কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিনেও মাধ্যমিকের শিক্ষকরা বার্ষিক পরীক্ষা, এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা এবং খাতা মূল্যায়ন থেকেও বিরত রয়েছেন।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডভিত্তিক (ক্যাডার) পদসোপানের আলোকে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক ও শিক্ষক নেতা ওমর ফারুক আমার দেশকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির (বাসমাশিস) পক্ষ থেকে 'সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডভিত্তিক (ক্যাডার) পদসোপানের আলোকে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন পরিষদ' এর ৪ (চার) দফা দাবি নিয়ে ঘোষিত কর্মসূচির আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারাদেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে সম্মানিত শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে ঘোষিত কর্মসূচির ২য় দিনেও সফলভাবে পালন হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ যথাসময়ে উপস্থিত থেকে ঘোষিত নো ওয়ার্ক কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জেলা/উপজেলার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে ঘোষিত কর্মসূচি পালন না করার জন্য সরকারের কোনো কোনো দপ্তর থেকে চাপ প্রয়োগ করার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। আমরা আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে অনঢ় ও অবিচল থাকবো। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের নিবেদন, সরকার যেন আমাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে জাতীয় স্বার্থে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করেন।

তিনি আরও বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি চলমান থাকায় সাময়িক অসুবিধার জন্য প্রিয় শিক্ষার্থী ও সচেতন অভিভাবকদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি এবং যতদ্রুত এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় আমাদের যৌক্তিক ৪ (চার) দফা দাবির প্রতি সাড়া দিবেন ততদ্রুত আমরা বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাবো।

অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক অফিস আদেশে জানিয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি সকল নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও স্কুল–অ্যান্ড–কলেজের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক, নির্বাচনী ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে-বার্ষিক পরীক্ষা ২০ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর, নির্বাচনী পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর এবং জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য আঞ্চলিক উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং বিদ্যালয়ের প্রধানদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বা কর্মকর্তার শৈথিল্য বা অনিয়ম ধরা পড়লে বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন