বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রশাসন অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তারিখ আগামী ২৯ ডিসেম্বর ঘোষণা করেছে । তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা পরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে স্বস্তির বদলে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা কারণ ঘোষিত সময়সূচিকে ‘অযৌক্তিক, কালক্ষেপণ এবং শিক্ষার্থী-বান্ধব নয়’ উল্লেখ করে এরই মধ্যে প্রতিবাদ ও ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থীর সংসদ নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. শাহজামান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নির্বাচনের তারিখ শিক্ষার্থীরা জানতে পারলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টের মাধ্যমে তা প্রত্যাখ্যান করেন। নির্বাচনি রোডম্যাপে উল্লেখিত প্রার্থিতা জমাদান, যাচাই-বাছাই, প্রতীক বরাদ্দসহ যাবতীয় ধাপের সময়সূচি প্রকাশের মুহূর্তেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের সময়সূচিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিযোগ তোলেন। শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন বলেন, আজকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন শিক্ষার্থীদের সাথে হঠকারিতা করলো। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের তাদের কোন চিন্তা নেই। ইচ্ছাকৃতভাবেই নির্বাচনের সময়কে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি। আমরা মনে করছি বন্ধের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এটা শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার শামিল। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তফসিল কে আবার পূর্ণ বিবেচনা করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের আয়োজন করুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান বলেন, এই নির্বাচনের তারিখ শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করতে পারেনি এর জন্য আমরা এটাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি । বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট কোন ভাবে বাস্তবায়ন করেনি তারা নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। যারা নির্বাচন চায় না তাদের টার্গেট ছিল ডিসেম্বরে শেষের দিকে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যাওয়ার তারা তাতে সফল হয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রশাসনের কাছে দাবি ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যেকোন ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে।
আরেক শিক্ষার্থী আহমাদুল হক আলবীর বলেন, আমরা যারা শিক্ষার্থী আছি তাদের প্রধান দাবি ছিল প্রশাসন কর্তৃক ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ডিসেম্বর মাসের ২৯ তারিখ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সিদ্ধান্তকে আমরা শিক্ষার্থীরা তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছি। ডিসেম্বরের শেষের দিকে নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকবে না যার ফলে নির্বাচনের আমেজ নষ্ট হবে। আমাদের দাবি একটাই ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন নির্বাচনের আয়োজন করেন।
ব্রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. শাহজামান বলেন, আমরা অনেক ভেবে চিন্তে নির্বাচনের তফসিল দিয়েছি। আমাদের কাজ করতে যতটুকু সময় দরকার আমরা ততটুকু সময় নিয়েছি। নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ে হবে এবং শীতকালীন অবকাশ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছি।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ আন্দোলনের পর গত ২৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় আইনে শিক্ষার্থী সংসদের বিধি যুক্ত হয়। ৪ নভেম্বর গঠিত কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই পদত্যাগ করলে ১১ নভেম্বর জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নতুন কমিশন গঠন করা হয়। তফসিল না আসায় শিক্ষার্থীরা ১৭ নভেম্বর ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন এবং মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালান। অবশেষে মঙ্গলবার রাতে তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন।

