আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে গান গাইবেন দুই শতাধিক রকশিল্পী

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে গান গাইবেন দুই শতাধিক রকশিল্পী

এ বছর নতুনত্ব নিয়ে আসছে পহেলা বৈশাখ। ঐতিহ্য আর নতুনত্বের মিশেলে থাকবে আনন্দ আর মানবতার গান। ২০০ রকশিল্পী গিটার আর ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে গাইবেন ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ শীর্ষক গান।

ফিলিস্তিনি কবি সামির আবু হাওয়াশের লেখা ও ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার প্রফেসর হুদা ফাখরেদ্দিনের অনুবাদ করা কবিতাটি সুর দিয়ে গাইতে দুই শতাধিক রকশিল্পী জড়ো হচ্ছেন বৈশাখী শোভাযাত্রায়।

বিজ্ঞাপন

শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানসের উদ্যোগে গতকাল বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ কথা বলেন। চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ ‍উদযাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি জানাতে এর আয়োজন করা হয়।

উপদেষ্টা সারা দেশের শিল্পীদের এক হাতে গিটার, আরেক হাতে কালো-সাদা ও লাল রঙের ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। শোভাযাত্রার নাম কী হবে, তা আজ বৃহস্পতিবার জানা যাবে বলেও জানান মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

নববর্ষ নিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত হয় দুটি সংবাদ সম্মেলন। প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয় দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন, বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানসের পক্ষ থেকে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য শেখ মনিরুল আলম টিপু এবং বিভিন্ন ব্যান্ডদলের প্রতিনিধি।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি কী, আপনি অন্যের জন্য কী অনুভব করেনÑ এটা কিন্তু বলে দেয় আপনার সংস্কৃতিটা কী। আমরা যে ওদের কথা অনুভব করছি, এটা কিন্তু বলে দেয় আমাদের সংস্কৃতিটা কী। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমরা যদি নববর্ষে শুধু আমাদের দেশের জন্য শুভকামনা জানাই, এরচেয়ে স্বার্থপরতা আর কিছু হতে পারে না। ফলে এই নববর্ষে আমাদের ফিলিস্তিনে যে ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিবাদ করে ফিলিস্তিনে যেন শান্তি ফিরে আসেÑ এ কামনাটা করতে হবে।

পহেলা বৈশাখের আয়োজন নিয়ে ফারুকী আরো বলেন, ‘এ বছর পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় প্রথমবারের মতো বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীসহ দুই শতাধিক ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস অংশগ্রহণ করবেন। ব্যান্ড মিউজিশিয়ানরা ‍পৃথিবীর শান্তি কামনায়, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের জন্য সব শিল্পী সম্মিলিতভাবে ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ গানটি গাইবেন। এ শোভাযাত্রায় ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের সব মিউজিশিয়ানকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য আলোচিত হওয়া বা না হওয়া নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো জাতির অন্তরে যে গভীর ক্ষত হয়েছে, যা সাংস্কৃতিক বিভাজন ও ফ্যাসিবাদের ফলÑ তা উতরানো। ৫৪ বছরের ইতিহাসে শিল্পকলা একাডেমিতে চাঁদরাতে কোনো অনুষ্ঠান হয়নি, এবার হয়েছে। আগামী বছর সারা দেশে সবগুলো শিল্পকলায় এ অনুষ্ঠান হবে। আবার চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে এর পূর্বে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সেটা এবার করা হয়েছে। কারণ, উৎসবটা বাংলাদেশের, তাই সবার অন্তর্ভুক্তি থাকতে হবে।’

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আগামী ১৪ এপ্রিল ‘শোভাযাত্রা’ বের করা হবে। বিকালে মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োজন করা হবে ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ এবং ‘ড্রোন শো’। ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজন করা হবে ‘বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’।

এ ছাড়া দুপুর ২টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলা নববর্ষ এবং পাহাড় ও সমতলের জাতি-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব নিয়ে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলা নববর্ষের এবারের শোভাযাত্রায় বাঙালি ছাড়াও ২৭টি জাতি-গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকবে বলে জানান ফারুকী। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক বিভাজনকে আমরা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।’

নববর্ষের দিনের অনুষ্ঠান সম্পর্কে সংস্কৃতি উপদেষ্টা জানান, প্রতিবারের মতো এবারও ছায়ানটের অনুষ্ঠান হচ্ছে। তবে স্থান বদলে সুরের ধারার অনুষ্ঠানটি এবার রবীন্দ্র সরোবরে হবে। থাকবে সাইমুমসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজন, যা হবে ইনক্লুসিভ বাংলাদেশের বহিঃপ্রকাশ।

সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সুরের ধারা এবার বাংলা গানের বাইরেও ভিন্ন আয়োজন রাখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এ ছাড়া চীনা দূতাবাসের আয়োজনে নববর্ষের দিন বিকালে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে একটি ড্রোন শো অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আয়োজন থাকবে।

শোভাযাত্রার বড় অংশজুড়ে বাংলার লোকসংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলা হবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘নববর্ষের শোভাযাত্রা মধ্যবিত্তদের চালু করা। তবে এর সঙ্গে ফসলসম্পর্কিত বিষয় ছিল। যেকোনোভাবেই হোক, আমাদের শোভাযাত্রায় এগুলো স্থান পায়নি। এবারের শোভাযাত্রায় কৃষক একটি বড় থিম হিসেবে থাকবে।’

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন