বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ‘নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী’ হলো চারুকলা বিষয়ক একটি নিয়মিত জাতীয় আয়োজন। ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি দেশের শিল্পকলা বিকাশে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বরেণ্য বহু শিল্পী এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাঁদের সৃজনশীল প্রতিভা প্রকাশের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও পরবর্তীকালে তাঁরা চারুশিল্পে দেশে-বিদেশে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছেন। বাংলাদেশের সুনাম অর্জনে ভূমিকা রেখেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ ১১ ডিসেম্বর বিকালে উদ্বোধন করা হয় ‘২৪তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী ২০২৫’। জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার এবং অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বরেণ্য কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ (রেজাউদ্দিন স্টালিন)। এতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘যত আপনি মানুষের সাথে কাজ করেন ততো আপনি মানুষ বুঝতে পারবেন। যেকোনো প্রতিযোগিতা শিল্পীদের জন্য ট্রাভেলিং, শিল্পের ক্ষেত্রে স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। স্বীকৃতি আসলে মহাকালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছুনা। শিল্পী ভ্যান গগ তাঁর জীবদ্দশায় কেমন জীবন যাপন করেছেন, আমাদের সকলের জানা। শিল্পী ভ্যান গগের ছবি প্রথম অবস্থায় কোথাও বিক্রি হয়নি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিল্পী তাঁর নিজের স্বাক্ষর তৈরি করা। আপনি ভ্যান গগের ছবি দেখলে বুঝতে পারবেন যে এটা ভ্যান গগের ছবি। পৃথিবীর সকল শ্রেণির শিল্পী যেমন : পেইন্টার, রাইটার, ফিল্মমেকার, মিউজিশিয়ান প্রত্যেকেরই আরাধ্য থাকে ছবির নিচে নিজের স্বাক্ষর আঁকা। আসলে আমরা আর্টের কাজটি করি নিজের বেদনা বা নিজের ক্ষত গোছানোর জন্য।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বরেণ্য কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ (রেজাউদ্দিন স্টালিন) বলেন, ‘শিল্পকলা একাডেমিকে গণমানুষের কাছে ও তরুণদের কাছে নিয়ে যেতে চাই। ২৪তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনীর শিল্প ও বিচারকার্য জুরি বোর্ড কর্তৃক সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করার চেষ্টা করা হয়েছে। যাঁরা পুরস্কৃত হয়েছেন তাঁদের প্রতি ধন্যবাদ জানাই। যাঁরা অংশগ্রহণ করেছেন কিন্তু পুরস্কৃত হননি তাঁদেরকেও ধন্যবাদ কারণ তাঁদের সামনে আরো বড় পথ খোলা আছে। যাঁরা শিল্পী তাঁরা প্রতিনিয়ত নুতন নতুন ফর্মের ভিতর দিয়ে, রং এর মাধ্যমে ভাবনা প্রতিফলিত করেন। আমরা আশাকরি বাংলাদেশের ছবি আন্তর্জাতিক মানের। এই ছবিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রদর্শিত করা এবং শিল্পীদেরকে তাঁদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া শিল্পকলা একাডেমির কাজ। আমরা শিল্পকলা একাডেমিকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাবো, সেই চেষ্টাই করছি।’
উন্মুক্ত আহ্বানের মাধ্যমে বাছাইকৃত ১৯১ জন শিল্পীকে পুরস্কারের আওতায় এনে মোট ১০টি শিল্পকর্মের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। ‘নবীন শিল্পী চারুকলা পুরস্কার ২০২৫’ পেয়েছেন আসফিকুর রহমান, ২য় পুরস্কার পেয়েছেন সীমা মন্ডল, ৩য় পুরস্কার পেয়েছেন নুর এ আলা সিদ্দিক। এছাড়াও সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছেন 7 জন যথাক্রমে মো. তানভীর আহমেদ জয়, লেখনেছা খাতুন, মো. ইমতিয়াজ ইসলাম, ঋতুরূপা তালুকদার সাথী, জিন্নাতুন জান্নাত, নাজনীন আহমেদ ও অন্তরা মেহরূখ আজাদ। ‘নবীন শিল্পী চারুকলা পুরস্কার ২০২৫’ হিসেবে নগদ ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ) টাকা ও ১টি গোল্ড কোটেড মেডেল, ২য় পুরস্কার নগদ ১,৫০,০০০/-(এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা, ৩য় পুরস্কার নগদ ১,০০,০০০/-(এক লক্ষ) টাকা এবং সম্মানসূচক পুরস্কার ৭টি প্রতিটির মূল্যমান ৭৫,০০০/-(পঁচাত্তর হাজার) টাকা।

