সংবাদ সম্মেলনে বিআইপি

বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ এলাকার ভেতরে মাইলস্টোন স্কুল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ০২: ২৫
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৩: ০৭

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কারিগরি দিক থেকে বৈধ হলেও এটি অনিরাপদ এলাকায় স্থাপিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনাবিদরা। এ কথা উল্লেখ করে তারা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উড্ডয়ন ও অবতরণ অঞ্চলের (অ্যাপ্রোচ এরিয়া) মধ্যে পড়েছে, যা জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এরিয়ায় থাকা স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ জনসমাগম হয়—এমন সব প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়া উচিত।

শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। ‘মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনা : জননিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের দায় ও করণীয়’ বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিআইপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবন্দরের রানওয়ের পর ৫০০ ফুট এলাকায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যায় না। এরপরের ১৩ হাজার ফুট বা প্রায় ৪ কিলোমিটার অঞ্চলকে অ্যাপ্রোচ এরিয়া বলা হয়, যেখান দিয়ে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ এলাকায় ১৫০ ফুট উচ্চতার স্থাপনা নির্মাণে সরকারের নগর কর্তৃপক্ষ ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো বাধা নেই। সেসব স্থাপনার কী ধরনের ব্যবহার হবে, সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই সরকারের সংস্থাগুলোর। ওই এলাকায় এ ধরনের স্থাপনা কারিগরিভাবে বৈধ হলেও কার্যত অনিরাপদ।

তামজিদুল ইসলাম বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপে অ্যাপ্রোচ এলাকার স্থাপনার উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা রয়েছে। কিন্তু সেখানকার ভূমি কী ধরনের ব্যবহার হবে, তা উল্লেখ নেই। গণজমায়েত হয়—এ রকম কোনো স্থাপনার জন্য সেখানকার ভূমি ব্যবহার করা উচিত নয়। কৃষিজমি ও সবুজায়ন করা যেতে পারে, তবে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে সেখানে পাখি আসে। আন্তর্জাতিকভাবে বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা আদর্শিক মান অনুযায়ী বিমানবন্দর শহর থেকে দূরে থাকে।

বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এলাকায় একাধিক আবাসিক এলাকা রয়েছে উল্লেখ করে তামজিদুল ইসলাম বলেন, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে মাইলস্টোন স্কুলে যাতায়াত সহজ ছিল। না হলে হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় প্রাণহানি আরো বেশি হতে পারত।

সংবাদ সম্মেলনে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অ্যাপ্রোচ এরিয়া থেকে স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদরাসার মতো জনসমাগম হয়, এমন সব স্থাপনা সরাতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা ঘটলে মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো সম্ভব হবে না।

১৯৯৫ সালে যখন ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা (ডিএমডিপি) হয়, তখনো মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা জলাশয় ছিল। এটি বিমানবন্দরের জন্য উপযোগী ছিল উল্লেখ করে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, মাইলস্টোনের জন্য নিচু এলাকা ভরাট করতে দেয় রাজউক।

মাইলস্টোনের নিচু এলাকা ভরাটে রাজউক কেন বাধা দেয়নি, সে প্রশ্ন রেখে এ পরিকল্পনাবিদ বলেন, রাজউক ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) কেউ নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি। যারা ভবন তৈরি করেছেন, তারা নিজেরাও অঙ্গীকার ঠিক রাখেননি।

বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোচ এলাকায় জনসমাগম হয়—এমন স্থাপনা কত রয়েছে, তা যাচাইয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করা উচিত বলে মনে করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।

যে ব্যক্তি ড্যাপ ও ডিএমডিপির অনুমোদিত ভূমি ব্যবহারের ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্কুল পরিচালনা করেছেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, যেসব প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়গুলোর দায় রয়েছে, তাদের দায় নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নেওয়াসহ সাতটি প্রস্তাবনা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে বিআইপি।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে দেড় শতাধিক, যাদের অনেকের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত