ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের লটারির মাধ্যমে বদলি ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানসহ নির্বাচন কমিশন(ইসি) ও সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঁচটি সুপারিশ করেছে অবসরপ্রাপ্ত বিসিএস অফিসারদের নির্বাচন পরিবীক্ষণ বিষয়ক সংগঠন ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটি।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটি আয়োজিত ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতকল্পে করণীয়’ শীর্ষক প্রেস কনফারেন্স থেকে সুপারিশগুলো উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সচিব ড. মো. শরিফুল আলম।
শরিফুল আলম বলেন, অতীতের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর এখন জাতি অপেক্ষায় রয়েছে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের। প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এসময় প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকারকে বাস্তবায়ন করতে নির্বাচন কমিশন ও মাঠ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতা প্রদর্শন করার আহ্বান জানান তিনি।
ড. শরিফুল অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে করা সুপারিশগুলো তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো হলো - প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা, প্রতিটি কেন্দ্রে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত দুই সদস্যের শরীরে বডি ওর্ন ক্যামেরা সংযোজন করা, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের লটারির মাধ্যমে বদলি বা পদায়ন করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা এবং সরকারি কর্মচারিগণ যাতে যে কোন গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে সেজন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভোটকেন্দ্রে অনলাইন সিসিটিভি স্থাপনের বিকল্প নেই। প্রায় ৪৩,০০০ কেন্দ্রে ক্যামেরা বসাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লাগবে—যা নির্বাচনকে স্বচ্ছ রাখতে যৌক্তিক ব্যয়। সময় কম থাকায় একক প্রতিষ্ঠান নয়, ডিপিএম (সরাসরি ক্রয়) পদ্ধতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের উপ-বরাদ্দ দিয়ে দ্রুত স্থাপন করা সম্ভব। হাজার কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের তুলনায় এ ব্যয় অতিরিক্ত নয়। নির্বাচনের পর এসব ক্যামেরা স্কুলসহ অন্যান্য নির্বাচনে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে—ফলে ব্যয় আরও সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি হবে।
প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তত দুই সদস্যকে বাধ্যতামূলকভাবে বডি ক্যামেরা পরানোর দাবি ও নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে বদলির সুপারিশ করে তিনি বলেন, বডি ওর্ন ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। সেইসাথে ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের লটারির মাধ্যমে বদলি করে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি নির্বাচন শেষে ১৫ দিনের মধ্যে পুনরায় বদলি ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে পুরস্কার-শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে কোন কর্মকর্তা কারও প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে কোন অনিয়ম না করে।
ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটির মতে, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ বাস্তবায়নে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। আর এর জন্য সকল পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. খন্দকার রাশেদুল হক-এর সভাপতিত্বে প্রেস কনফারেন্স-এ আরো উপস্থিত ছিলেন, মো. আবদুল কাইয়ুম, ড. জাহেদুল ইসলাম, মো. গাজীউদ্দিন মুনির প্রমুখ।

