আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা ফিরলেও সার্বিক অবস্থা উদ্বেগজনক

স্টাফ রিপোর্টার
হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা ফিরলেও সার্বিক অবস্থা উদ্বেগজনক

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাথায় গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই জুলাই যোদ্ধার কিডনির কার্যক্ষমতা ফিরেছে। তবে সার্বিক অবস্থা এখনও অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মেডিকেলে বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৪টায় হাদির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জাফর ইকবালের বরাত দিয়ে হাদীর চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা ঢাকা মেডিকেল কলেজ নিউরোসার্জারী বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ও ন্যাশনাল হেলথ এলায়েন্সের (এনএইচএ) সদস্য সচিব ডা. আব্দুল আহাদ এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, রোগীর মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু সার্জিক্যাল হস্তক্ষেপ সম্পন্ন হয়েছে, তাই বর্তমানে তাঁকে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে রাখা হয়েছে। ব্রেন প্রোটেকশন প্রটোকল অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় সকল সাপোর্ট চালু থাকবে। শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে পুনরায় ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা হতে পারে।

ডা. আহাদ জানান, হাদির ফুসফুসে ইনজুরি বিদ্যমান রয়েছে। চেস্ট ড্রেইন টিউব দিয়ে অল্প পরিমাণ রক্ত নির্গত হওয়ায় তা আপাতত চালু রাখা হয়েছে। ফুসফুসে সংক্রমণ ও এআরডিএস প্রতিরোধের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট অব্যাহত রাখা হবে। বর্তমানে কিডনির কার্যক্ষমতা বর্তমানে ফিরে এসেছে। এটি বজায় রাখার জন্য পূর্বনির্ধারিত ফ্লুইড ব্যালেন্স যথাযথভাবে চালিয়ে যাওয়া হবে। তবে অবস্থা এখনও অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।

তিনি আরও জানান, পূর্বে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের মধ্যকার অসামঞ্জস্যতা (ডিআইসি) দেখা দিলেও বর্তমানে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ অবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত ও রক্তজাত উপাদান সঞ্চালন অব্যাহত থাকবে। ব্রেন স্টেম ইনজুরির কারণে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দনের ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তা চলমান থাকবে। হৃদস্পন্দন বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে টেম্পোরারি পেস মেকার স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট টিম সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।

একই সঙ্গে হাসপাতালে ভিড় না করার পাশাপাশি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন মেডিকেলে বোর্ডের সদস্যরা। পাশাপাশি হাদির অবস্থা নিয়ে অনুমান নির্ভর তথ্য ছড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।

এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জাফর ইকবালের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের এ বোর্ড গঠন করা হয়।

অন্য সদস্যরা বলেন, হাসপাতালটির নিউরো অ্যানেস্থেশিয়া ও আইসিইউ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, নিউরো সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জিল্লুর রহমান, কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এ কে এম রেজা, নেফ্রোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাসুম কামাল খান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জিয়াউল হক, নিউরোমেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. খন্দকার মাহবুবুর রহমান, নিউরোমেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এস. এম. হাসান শাহরিয়ার, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জুলফিকার হায়দার, বক্ষব্যাধি সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শাহিনুর রহমান, অর্থোপেডিক্স বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আতিয়ার রহমান, নাক-কান-গলা বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. একরাম উদ্দৌলা ও হেমাটোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. কাজী স্মিতা হক।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে রিকশায় গন্তব্যে ফিরছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদি। রাজধানী বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে আসা মোটরসাইকেলের আরোহী থেকে খুব কাছ থেকে ওসমান হাদির মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলি তার মাথার ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহতাবস্থায় দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার আশায় একই দিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে পরিবারের সিদ্ধান্তে হাদিকে এভারকেয়ারে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন