হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনে তারেক রহমান

দলের স্বার্থ নয়, সরকারের দায়িত্ব গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৫৯

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এই সরকারের কাজ কোনো দলের স্বার্থ বাস্তবায়ন নয়।

শনিবার রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে 'হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলন ২০২৫' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে মাতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোট।

বিজ্ঞাপন

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারের সময়কালে দেশে আইনের শাসন ছিল না। যার ফলস্বরূপ শুধুমাত্র বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই প্রায় দেড় লক্ষ মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং ৭০০-র বেশি নেতাকর্মীকে গুম, অপহরণ ও খুন করা হয়েছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, রাতের বেলায় আদালত বসিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি উদাহরণ হিসেবে ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা কিংবা ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হামলার ঘটনা টেনে বলেন, এইসব হামলার একটিরও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত বা বিচার হয়নি।

তিনি বলেন, বিগত দেড় দশকে বিএনপি দেশের সুশীল সমাজ ও সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি নাগরিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছিল, যাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার নেপথ্য ঘটনা উদ্ঘাটন করে সুষ্ঠু বিচার হয়। কিন্তু সেই দাবি বাস্তবায়িত হয়নি।

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতে, একমাত্র ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনই দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন ছাড়া সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু—কোনো নাগরিকেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের ঝুঁকি এবং জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের শাসনমুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিটি ধর্মের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা একটি বিশাল সুযোগ। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের কিছু সঙ্গীর ভূমিকা দেশের বহু মানুষের অধিকার ও সুযোগকে বিনষ্ট করার এক পরিস্থিতি তৈরি করছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশ যদি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, তাহলে অতীতে পরাজিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম হতে পারে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, পতিত পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে কিনা, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

এই গুপ্ত বাহিনীর অপকৌশল থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে তিনি একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা ও বহাল রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, এই কারণেই বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সঙ্গীদের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি সমুন্নত রেখেছে।

ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, যদি জনগণের রায় অনুযায়ী বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পায়, তবে তারা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫০ লক্ষ পরিবারের নারীপ্রধানের নামে ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়াও প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য ফার্মার্স কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

দেশের বিশাল এক সমস্যা যুব সমাজের বেকারত্ব দূর করতে তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদেরকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ব্যবহারিক শিক্ষা দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত