আজ ৯ ডিসেম্বর। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৪তম জন্ম দিবস। যিনি নারী জাগরণের আলো ছড়িয়েছেন বিশ্বময়। সেই নারীর জীবন ও কর্মচর্চায় জন্মস্থান রংপুরের স্মৃতি কমপ্লেক্সটি পূর্ণতা পায়নি দুই যুগেও। বাইরে চাকচিক্যময় একটি ভবন থাকলেও ভেতরে কার্যক্রম বন্ধ।
উদ্ধার হয়নি বেহাত হওয়া লাখেরাজ সম্পত্তি। আঁতুড়ঘরও করা হয়নি সংস্কার। এমন পরিপ্রেক্ষিতে স্মৃতি কমপ্লেক্সটি আজ (মঙ্গলবার) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, রংপুর মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ ইউনিয়নের খোদ্দ মুরাদপুর গ্রামে এ দিনে জন্মগ্রহণ করেন বেগম রোকেয়া । ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মারা গেলে তাকে সোদপুরে সমাহিত করা হয়।
তার জীবনকর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পায়রাবন্দে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বেগম রোকেয়া স্মৃতি কমপ্লেক্স। ২০০১ সালে চালুর পর দুই মাস ১৭ দিনের মাথায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধায়নে জনবলের বেতন-ভাতা চালু হয়। কিন্তু গবেষণা কক্ষের তালা খোলেনি ২৩ বছরেও। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সেলাই মেশিন ঢাকনাবন্দি। সংগ্রহ শালার আলমারিগুলোতে শুন্যতা। সেমিনার রুমে ধুলোর আস্তরণ। অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান বলতে ৯ ডিসেম্বর। একমাত্র পাঠাগারটিই খোলা পাওয়া যায়। সেখানেও ধূলিধূসর এ নিয়ে দর্শনার্থী ও সংগঠকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
জান্নাতুল ফেরদৌস বিথি নামের এক দর্শনার্থী জানান, রোকেয়াকে বইয়ে যেভাবে জানি। আশা ছিল তার বাড়িতে গিয়ে অনেক কিছু নিজের চোখে দেখা পাব। কিন্তু সেটা হলো না। তিনি বলেন, স্মৃতি কমপ্লেক্সে গবেষণা কক্ষ, সেনিমার রুম, লাইব্রেরি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সংগ্রহশালা, অডিটোরিয়াম আছে। কিন্তু কিছুই খোলা নেই।
রোকেয়া স্মৃতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান, যুগের পর যুগ শুধু শুনছি হবে, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে বানানো কমপ্লেক্স এখন মশার ভাগাড়।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি কমপ্লেক্সের সহকারী পরিচালক আবিদ করিম মুন্না বলেন, শুধু পাঠাগারটি চালু আছে। সংগীত প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কিছু চালুর জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আছে। আশা করি, এসব দ্রুত চালু হবে।
রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র একীভূত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে
দীর্ঘ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবসে পায়রাবন্দ অবহেলায় পড়ে থাকা স্মৃতি কেন্দ্রটি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারি ড. আমিনুল ইসলাম। সেটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। রোকেয়া দিবসে স্মৃতিকেন্দ্রটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হবে বাংলা একাডেমির।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. শওকাত আলী জানান, রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রটি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির ডিজি এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করবেন।

