আ.লীগ নেতাদের ষড়যন্ত্র বন্ধে কঠোর বার্তা দেবে বাংলাদেশ

দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন শুরু আজ

ওয়াসিম সিদ্দিকী
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৩৪
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯: ৩৪

বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ফিরিয়ে দিতে সুস্পষ্ট সময় ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তরফে বলা হবে, ভারতে বসে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার এ বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ বিরক্ত।

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব জানিয়ে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সমান্তরালভাবে সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনা এবং সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়ে ভারতের কাছে সুষ্পষ্ট বার্তা দেবে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, নয়াদিল্লিতে আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের সম্মেলনে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ তরফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছে।

প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর ও যৌথ নদী কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রয়েছেন। অন্যদিকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাবাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকছেন।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে বসে তারা দেশবিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছেন বলে ইতোমধ্যে খবর বেরিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অনেকে ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে আধার কার্ড বানিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যও শুরু করেছেন। অনেকে ভারতের আধার কার্ড বানানোর চেষ্টাও চালাচ্ছেন। এ প্রেক্ষাপটে এবারের সীমান্ত সম্মেলন আলাদা গুরুত্ব বহন করছে বলে বাংলাদেশের তরফে বলা হচ্ছে।

এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মোটাদাগে যেসব বিষয় আলোচনা করা হবে, সেগুলো হলোÑ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা, অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ৫ আগস্টের পর যারা ভারতে পালিয়ে গেছেন, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া। সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, সীমান্ত হত্যা, আহত, আটক, অপহরণ বন্ধ করা।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ সীমান্তে জোরপূর্বক কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার চেষ্টা করছে ভারত। এসব নির্মাণকাজ বন্ধ ও চলমান অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের নিষ্পত্তি করতে বলা হবে। সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক পাঠানো বন্ধ করতে কঠোর বার্তা দেবে বাংলাদেশ।

অনেক দিন ধরেই বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ভারত নিজেদের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ধরে নিয়ে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবারের সম্মেলনে মিয়ানমার নাগরিকেদের বাংলাদেশে পাঠানো বন্ধ করতে বলা হবে।

আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাম্পের সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় করার বিষয়টি এবারের সম্মেলনের এজেন্ডায় রয়েছে।

এছাড়া আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত সীমান্তবর্তী ৪টি খালের বর্জ্যপানি অপসারণে উপযুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা হবে। জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সীমান্ত সম্মেলন শেষে ওইদিনই দেশে ফেরার কথা রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত