ব্র্যাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ায় চাকরি হারালেন সাঈদ!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ৩৫
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১: ০৬

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়া হুজ্জাতুল ইসলাম সাঈদের চাকরিটাই নেই! অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’গ্রুপে সংঘর্ষের সময় রামদায় শান দিয়ে সারাদেশে আলোচিত ছাত্রলীগের দু’নেতা মোফাজ্জল হায়দার ইবনে হোসাইন ও মিজানুর রহমান খান দু’জন ছাড়াও আন্দোলনের বিপক্ষে অংশ নেয়া আরও শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মীর চাকরি ঠিকই বহাল বহাল রেখেছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ব্র্র্যাক।

শনিবার এ প্রতিবেদককে সাঈদ বলেন, জুলাইয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ব্র্যাকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তার। অথচ ব্র্যাকে তার কাজকর্ম সবার চেয়ে সেরা ছিল। কাজের প্রতি খুশি হয়ে ব্র্যাকও তাকে বিভিন্ন সময় প্রশংসাপত্র দিয়েছেন। সাঈদের কাজ দেখে তার ওপরের ঊর্ধ্বতনরাও (বসরা) খুশি ছিলেন বলে জানান সাঈদ।

বিজ্ঞাপন

২০১৫ সালের ২ নভেম্বর। চবিতে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষের সময় শাহজালাল হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় রামদায় শাণ দিয়ে আলোচনায় আসেন মোফাজ্জল হায়দার ও মিজানুর রহমান খান। তারা পরে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ পান। এই দু’জন বর্তমানে ব্র্যাকের স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে কর্মরত আছেন। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্রদের বিপক্ষেও অংশ নেন তারা। তাদের কন্ট্রাক্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও, তাদের চাকরি পুনরায় রিনিউ করে ব্র্যাক।

হুজ্জাতুল ইসলাম সাঈদ ২০২৪ সালে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের আওতাধীন চট্টগ্রাম মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ‘ডিস্ট্রিক্ট কোঅর্ডিনেটর’ পদে যোগদান করেন। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তার সঙ্গে কন্ট্রাক্ট হয় ব্র্যাকের। কিন্তু ওই বছরের নভেম্বর মাসে চিঠি দিয়ে জানানো হয় সাঈদের সঙ্গে তারা আর কাজ করবেন না।

সাঈদের দাবি, অথচ একই পদমর্যাদায় ফরিদুর জেলার ডিস্ট্রিক্ট কোঅর্ডিনেটর মো. খালেদ এবং বরিশালের ডিস্ট্রিক্ট কোঅর্ডিনেটর মো. এমদাদ কাজ করছেন। যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এখনো তারা শেখ হাসিনার পক্ষে নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়াচ্ছেন।

তার দাবি, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার কারণেই তার চাকরি রিনিউ করছেন না ব্র্যাক। ছাত্রজনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থাকা বেশি কিছু ছবি-ভিডিও আমার দেশকে সরবরাহ করেছেন সাঈদ। সেখানে দেখা যায়, জুলাই ও আগস্টে প্রত্যেকটি আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে ছিলেন তিনি।

হুজ্জাতুল ইসলাম সাঈদ বলেন, চিহ্নিত খুনি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের কারণে চাকরি নেই। কারণ আন্দোলনের সময় রনি আমার চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আমার বিভাগের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান ব্র্যাকের অ্যাসোসিয়েট একজন ডিরেক্টরের ভালো সম্পর্ক। আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ওই সময় অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর সরাসরি চাকরি চলে যাবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন।

সাঈদ বলেন, গত দেড় থেকে দুই বছরের প্রোগ্রামের যতগুলো পেন্ডিং কাজ সব দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করেছি। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মাইগ্রেশন সেন্টারে চলমান অন্ত-কোন্দল নিরসন করেছি। স্ট্রং টিম বন্ডিয়ের মাধ্যমে যতগুলো সমস্যা ছিল সব সম্পন্ন করেছি। ব্র্যাকের এটি আমার দ্বিতীয় চাকরি। এর আগেও ব্র্যাক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করেছি। ব্র্যাকসহ যত এনজিওতে চাকরি করেছি, কোথাও আমার বিরুদ্ধ কোনো অভিযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে আমার দেশকে জানানো হয়, আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় চাকরি চলে গেছে, সেটি সাঈদের মনে হতে পারে। তবে আমরা আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে তার চাকরি যে রিনিউ করেনি, বিষয়টি সত্য নয়। আমাদের ওইটি এক বছর প্রোগ্রাম ছিল।

কিন্তু অন্যান্য ডিস্ট্রিক্ট কো অর্ডিনেটরদের চাকরি কীভাবে রিনিউ হয়? এই বিষয়ে জানতে চাইলে আর কোনো মন্তব্য করেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

এমএস

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত