কারা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া কারাগার সংক্রান্ত যেকোন সংস্কার দীর্ঘ মেয়াদে সফলতা পাবেনা। রাজনীতিবিদদের কমিটমেন্ট এবং অংশগ্রহণ ছাড়া সংস্কার কার্যকর হবে না।
বৃহস্পতিবার ‘কলোনিয়াল জেল থেকে থেকে সংশোধন সার্ভিসেস: জেনুইন রিফর্ম অর কসমেটিকস শিফট’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন, অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্ণেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এরশাদুল বারী খন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সাজ্জাদ সিদ্দিকী, আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, জিয়া চৌধুরী প্রমূখ। জহিরুল ইসলাম মুসার সঞ্চালনায় প্যানেল অলোচনায় আলোচকরা বলেন, কারাগারগুলো মূলত ১৮৬০ সালের জেল কোড, দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট ও দ্য প্রিজনার্স অ্যাক্ট আইনসমূহের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এসব আইন ঔপনিবেশিক আমলের তল্পিবাহক। আইনগুলো সংশোধন করে জেলব্যবস্থা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
আইজি প্রিজন বলেন, জুলাইয়ের গণ আন্দোলন কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দেশের ১৭টি কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। পরে সব কারাগারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশের সব কারাগারে এখন নিরাপদ ও স্বাভাবিক পরিবেশ রয়েছে।
কারাগারের কিছুক্ষেত্রে অনিয়ম রয়েছে স্বীকার করে বলেন, সংশোধনাগার করার ক্ষেত্রে আমরা প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। এগুলো এখন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। তিনি বলেন, বর্তমানে ৭৪ টি কারাগার রয়েছে। জেল থেকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে বন্দীদের আলাদা ব্যারাকে রাখা যাবে । দাগী অপরাধী, মাদক মামলার আসামী এবং জুবেনাইল বন্দী (১৮ থেকে ২১ বছর বয়সী বন্দী)দের আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় সাধারণ চোর কারাগার থেকে ভায়োলেন্ট অপরাধী হয়ে কারাগার থেকে বের হচ্ছে। কলোনিয়াল যুগের কারাবিধি ও কোড ফেল করেছে বলেই এখন কারা আইন সংশোধন ও যুগপোযোগী করতে হবে।
অতিরিক্ত আইজি প্রিজন বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর বন্দীদের দৈনিক আমিষের পরিমাণ ৫৪ গ্রামে উন্নীত করা হয়েছে। আগে যা ছিলো ৩৬ গ্রাম। অন্যদিকে জনবল এ সরকারের সময়ে ৮০০ জন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরো নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, কারা স্টাফ, বন্দী এবং বন্দীদের পরিবারের মধ্যে মনস্তাত্তিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আবাসন সমস্যা এবং খাবারের মান নিয়েও কাজ চলছে।
ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এরশাদুল বারী খন্দকার আইনজীবী হিসেবে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, একবার রোজার ঈদের আগে একজন বন্দীর জামিন হয় কোর্টে। কোর্ট থেকে জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছাতে সময় বেশি লাগায় ওই বন্দীর জামিন হয় কোরবানির ঈদের পর। আড়াই লাগলো কোর্ট থেকে কারাগারে ডকুমেন্ট যেতে। কারাগারে অনেকে রাজার হালে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অর্থের লেনদেন একটি বড় বিষয়।
কারাগার মানেই মানুষের মনস্তত্বে ভেসে উঠে নির্যাতনের প্রতিশব্দ। এ মানসিকতা তেকে বেরিয়ে আসা দরকার। মানবিক মর্যাদার বিসয়টিচ জেলখানার স্টাফরাও মনে রাখেন না। সবমিলিয়ে কারাগার মানেই এক ধরনের করাপটেড সিস্টেম বলে মানুষের মানসপটে ভেসে উঠে।
ড. তৌহিদুল হক বলেন, কারাগার থেকে বের হয়ে অনেকে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠছে কি না, এটা স্টাডি দরকার। কারাবিধি সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেয়া দরকার। অন্যান্য দেশের প্যাটার্ন বিবেচনায় নিয়ে সংস্কার করলে এর বাস্তবায়ন দুরূহ হতে পারে। তিনি বলেন, কারা সংস্কার করতে হলে কারা কর্তৃপক্ষ, পুরিশ ও বিচার বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। নতুবা সংস্কার টেকসই কিংবা বাস্তবায়ন করা কষ্টসাধ্য হবে।
সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, পলিটিক্যাল সদিচ্ছা ছাড়া এবং পলিশিয়ানদের সঙ্গে কো অর্ডিনেশন ছাড়া কোন সংস্কার টেকসই কিংবা কার্যকর হবে না। জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, এই সরকার আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপারে কিছুই দেখাতে পারেনি। বরং আগের চেয়ে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। সরকার যা বলেছে, তার কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

