জুলাই বিপ্লবী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজাকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকা কার্যত রূপ নেয় একটি সুরক্ষিত জোনে।
শনিবার সকাল থেকেই সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, মানিক মিয়া এভিনিউ, আগারগাঁও, খামারবাড়ি ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্য করা যায়।
রাজধানীর কেন্দ্রস্থল মানিক মিয়া এভিনিউ ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। ভোরের পর থেকেই সংসদ ভবনমুখী প্রতিটি সংযোগ সড়কে ধাপে ধাপে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। খামারবাড়ি মোড়, আসাদগেট, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, ফার্মগেট সংলগ্ন পয়েন্ট এবং মানিক মিয়া এভিনিউয়ের প্রবেশমুখগুলোতে বসানো হয় অস্থায়ী চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে মেটাল ডিটেক্টর, হ্যান্ড স্ক্যানার এবং ম্যানুয়াল তল্লাশির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষে মানুষজনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে সন্দেহজনক ব্যাগ ও সামগ্রী আলাদাভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল থেকেই বেশ কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল সীমিত বা ডাইভারশন দেওয়া হয়। ফলে ধানমন্ডি, ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার কিছু সড়কে সাময়িক যানজটের সৃষ্টি হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অতিরিক্ত ট্রাফিক সদস্য মোতায়েন করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়।
হাদির জানাজাকে ঘিরে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ঢাকা মহানগর পুলিশ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য জানাজা মাঠ, আশপাশের সড়ক, ফুটপাত ও খোলা স্থানে মোতায়েন ছিলেন। দায়িত্বরত অনেক পুলিশ সদস্যের শরীরে সংযুক্ত ছিল বডি ওর্ন ক্যামেরা, যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক ভিডিও ফুটেজ রেকর্ড ও সরাসরি মনিটরিং করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব ফুটেজ ডিএমপির কন্ট্রোল রুমে রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল।
পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যুক্ত ছিল র্যাব, এপিবিএন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ঘিরে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি অংশ জুড়ে ছিল আনসার বাহিনী। তিন শ্রেণির আনসার সদস্যসহ মোট ৮৭০ জনকে বিভিন্ন ইউনিটে ভাগ করে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার এবং টিডিপি স্বেচ্ছাসেবকরা জানাজা মাঠ, প্রবেশপথ, দেয়ালসংলগ্ন এলাকা ও খোলা মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। মাঠ পর্যায়ে তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য পরিচালক, ডেপুটি পরিচালক এবং উপজেলা আনসার-বিডিপি কর্মকর্তাদের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল।

নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সংসদ ভবনের পূর্ব ও দক্ষিণ পাশের সীমানা বিশেষভাবে সিকিউরড করা হয়। দেয়ালসংলগ্ন এলাকায় অতিরিক্ত প্রহরা বসানো হয়, যাতে কেউ দেয়াল টপকে বা অনুমতি ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। জানাজা এলাকাকে একাধিক নিরাপত্তা জোনে ভাগ করে প্রতিটি জোনে আলাদা দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম রাখা হয়। ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা করা হয় এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে জনসাধারণকে নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দুপুর ১২টার পর জানাজায় অংশ নিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় জড়ো হন। এই ভিড় সামলাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে কিছুটা বেগ পেতে হলেও তারা ধৈর্য ও শৃঙ্খলার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। কোথাও কোনো বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
অনেক এলাকায় ভবনের ছাদ ও উঁচু পয়েন্টে অতিরিক্ত নজরদারি বসানো হয়। ড্রোনের মাধ্যমে ওপর থেকে জনসমাগম ও চলাচল পর্যবেক্ষণ করা হয় বলেও মাঠ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে রিজার্ভ টিমও প্রস্তুত রাখা হয়।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

