আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ৩০
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২: ৫৮

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ শনিবার। ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যুর দিন। গোটা মানবজাতির জন্য শান্তির বার্তা ও আল্লাহর অসীম রহমত নিয়ে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখের এই দিনে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে একই দিনে তিনি ইন্তেকালও করেন। বিশ্বনবীর এই স্মৃতিময় দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত।

ঈদে মিলাদুন্নবী মুসলিম বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। আজ সারা দেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। দিনটি উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়েছে গতকাল শুক্রবার। এ উপলক্ষে আজ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জশনে জুলুস, শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন দলের নেতারা বাণী দিয়েছেন।

ড. ইউনূস তার বাণীতে বলেছেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুপম জীবনাদর্শ, সর্বজনীন শিক্ষা ও সুন্নাহর অনুসরণ আজকের এ দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে শান্তি, ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।

তিনি বলেন, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের জন্য অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তার বাণীতে বলেন, আমাদের ধর্মীয় ও পার্থিব উভয় জীবনে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.) -এর শিক্ষা ও জীবনাদর্শ অনুসরণীয়। মহানবী ছিলেন মহানুভবতা, সহনশীলতা, সততা, নিষ্ঠাসহ নানা মানবিক গুণে গুণান্বিত একজন মহামানব, মানবজাতির পথপ্রদর্শক। মহানবী (সা.) মানবতার মুক্তি, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা আজও আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

তারেক রহমান তার বাণীতে বলেন, হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব ছিল একটি আলোকিত বিস্ময়। তিনি এই পবিত্র দিন উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম সব মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মানবজাতি বিশ্ব নবীর আগমনে নিজেদের কল্যাণ ও শান্তির নিশ্চয়তা লাভসহ জগতের সব অন্যায়-অবিচার, কুসংস্কার, নিপীড়ন-নির্যাতন এবং বৈষম্যের ঘোর অন্ধকার যুগ থেকে নিষ্কৃতি লাভের সন্ধান পায়। সেজন্যই তিনি হয়েছেন মানবতার মুক্তির দিশারি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও অনুরূপ বাণীতে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে সালাম জানান।

ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) শান্তিপূর্ণভাবে পালনের লক্ষ্যে সরকার সারা দেশে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীর মতো প্রধান শহরগুলোতে সুষ্ঠু ও নিরাপদে জমায়েত ও শোভাযাত্রা নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সূত্র মতে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষত বৃহৎ মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানে, যেখানে বড় সমাবেশের সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন। ইতোমধ্যে সংবেদনশীল স্থানগুলোতে নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।

অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে কার্যকর জনসমাগম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভক্ত-অনুরাগীদের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে যথাযথ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। শুক্রবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক ও ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী।

সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ। অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে আছে ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, হামদ-নাত মাহফিল, মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ। এছাড়া ঢাকা মহানগরীর শিক্ষার্থীদের মাঝে কিরাত, উপস্থিত বক্তৃতা, আরবি খুতবা লিখন বিষয়ে ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি থাকবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা রয়েছে। এ দিন দেশের দৈনিক পত্রিকা অফিসগুলোও বন্ধ থাকবে। তাই রোববার কোনো পত্রিকা প্রকাশ হবে না।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত