দ্বিতীয় অপারেটর নিয়োগের বিরুদ্ধে বেঁকে বসেছে বিমান

কবিতা
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ০৬

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরর থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা আরো গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মানের করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাশাপাশি অন্য অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

প্রতিযোগিতামূলকভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে সেবার মান আরো বাড়বে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেছেন বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা অন্য কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করতে রাজি নন। অন্য অপারেটর নিয়োগ করা হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকায় সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে জরুরি সভা করেন শেখ বশির উদ্দীন। তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং বিমানের চেয়ারম্যান। সভায় তিনি থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য অন্য অপারেটর যুক্ত করার কথা বলেন। এতে বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা অন্য কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করতে রাজি নন বলে জানান। তাদের চাওয়া, অন্য কোনো অপারেটর যুক্ত না করে সেবার মান বাড়িয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে অগ্রসর হতে হবে। এর বিপরীত সিদ্ধান্ত হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।

ওই সূত্রমতে, সভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে। থার্ড টার্মিনালে সেবা দেওয়ার জন্য বিমানের সঙ্গে দুবছরের চুক্তিও হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী বিমান সেবা দিতে ব্যর্থ হলে অন্য অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান উপদেষ্টা বিমানের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থার্ড টার্মিনালে অন্য অপারেটর যুক্ত করার কথা বলছেন, যা ঠিক নয়। এরই মধ্যে বিমান প্রচুর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি কিনেছে; লোকবলও নিয়োগ দিচ্ছে। এ অবস্থায় অন্য কাউকে যুক্ত করা হলে বিমান তা মেনে নেবে না। এর ফলে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে। এমন হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার একচেটিয়া দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। সংস্থাটির সেবার মান নিয়ে বহু বছর ধরে যাত্রী ও এয়ারলাইনসগুলোর অভিযোগ রয়েছে। দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় এবং অব্যবস্থাপনায় সময়মতো যাত্রীদের ব্যাগেজ না পাওয়ার অভিযোগ হরহামেশা পাওয়া যাচ্ছে। তাই থার্ড টার্মিনালের সেবা শুধু বিমানের হাতে না দিয়ে অন্য এয়ারলাইনস বা বেসরকারি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানিকেও এই সেবা প্রদানের সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে সেবার মান বাড়বে, প্রতিযোগিতা বাড়বে, যাত্রী ও এয়ারলাইনসগুলো আরো ভালো পরিষেবা পাবেÑযা বিমানবন্দর উন্নয়নে সহায়ক হবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, চলতি মাসে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিমানকে দেওয়ায় জাপানি কনসোর্টিয়াম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। ফলে এই টার্মিনাল অপারেশনের জন্য চুক্তি করতে তারা কালক্ষেপণ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিমানের পাশাপাশি দ্বিতীয় আরেকটি কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমর্থন নিতেই ওই সভাটির আহ্বান করা হয়েছিল।

বিমান জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক স ম জাহাঙ্গীর কবির জন আমার দেশকে বলেন, সভায় উপদেষ্টাকে বলেছি, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় অন্য কাউকে যুক্ত করার বিষয়ে আমাদের দ্বিমত আছে। বিমানের সঙ্গে দুবছরের চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যদি বিমান ভালোভাবে অপারেট করতে না পারে, তখন অন্য অপারেটর নিয়োগ দিতে পারবে। কিন্তু আগে বিমানকে সুযোগ দিতে হবে। আর সুযোগ না দিলে বিমানে অসন্তোষ দেখা দেবে।

এ বিষয়ে এয়ার এস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ আমার দেশকে বলেন, বর্তমানে বিদ্যমান বিমানবন্দরগুলোর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস করে থাকে। তাদের মান একেবারেই ভালো নয়। তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এখন বিমানের পাশাপাশি অন্য অপারেটরকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দিলে সার্ভিস প্রতিযোগিতামূলক ও উন্নত হবে।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, সেবা নিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ এই সংস্থা কতটা সুষ্ঠুভাবে করতে পারবে, তা নিয়ে চিন্তার অবকাশ রয়েছে। এটা তারা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেÑতা বলা যায় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানের পাশাপাশি অন্য অপারেটর নিয়োগ দিতে আমরা চিন্তাভাবনা করছি, যাতে প্রতিযোগিতা হয়। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে দ্বিতীয় অপারেটর যুক্ত করে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষিত করতে চাই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত