শ্রমিকের লভ্যাংশ তহবিলের (ডব্লিউপিপিএফ-ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিফিকেশন ফান্ড) ৫ শতাংশ বকেয়া আদায়ের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর গ্রামীণফোনের চাকরিচ্যুতকর্মীরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরায় গ্রামীণফোন অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। তারা অবিলম্বে তাদের ৫ শতাংশ পাওনা ফেরত ও চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্রামীণফোন সেন্টারের সামনে প্রায় ৩ শতাধিক চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা অবস্থান গ্রহণ করেন। এসময় পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। পুলিশের অনুমতি নিয়েই তারা ওই কর্মসূচি পালন করেন। গ্রামীণফোন সেন্টারে যাতায়াতকারীদের কোন অসুবিধা হয়নি। এ সময় চাকরিচ্যুতদের পরিবারের সদস্যদের দেখা গেছে। তাদের হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড দেখা যায়। এসময় হ্যান্ড মাইকে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মানববন্ধনে ছাটাইকৃতকর্মীরা বলেন, গ্রামীণ ফোনের ব্যবসার প্রসার ও মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি সত্ত্বেও ২০১৩ সাল থেকে অব্যাহতভাবে কর্মী ছাঁটাই করা হয়। উচ্চ আদালতে আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়ন না করে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও সরকারের প্রতি অসম্মানজনক ও ন্যক্কারজনক। গ্রামীণফোনের এই বেআইনি ছাঁটাই, অবৈধ লক-আউট ও অসৎ শ্রম আচরণসহ সকল অবৈধ ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি বেআইনি ছাঁটাইয়ের শিকারদের তাদের ৫ শতাংশ পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।
গ্রামীণফোনের ছাঁটাইকৃত কর্মীদের আন্দোলনের সমন্বয়কারী আবু সাদাত মো. শোয়েব বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে আগেই। তিনি আরও বলেন, গ্রামীণফোন থেকে অন্যায়ভাবে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। কোম্পানির লাভের ৫ শতাংশ পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা গ্রামীণফোন লিমিটেডের সাবেক কর্মীরা ১৫ বছর ধরে আমাদের আইনগত ৫ শতাংশ ডব্লিউপিপিএফ ও ডব্লিউডব্লিউএফ বকেয়া আদায়ের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে শ্রম মন্ত্রণালয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আদালতের নির্দেশনার আলোকে শান্তিপূর্ণ লড়াই করে আসছি। গ্রামীণফোন মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের দমন করার চেষ্টা করছে। আমাদের এই লড়াইয়ের সঙ্গে প্রায় ৩ হাজার ৩৬০টি পরিবার ও হাজারো শ্রমিকের বহু বছরের বঞ্চনা জড়িয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, যদি আমাদের পাওয়া না দেয়, আর সরকার যদি তাদের আশ্রয় দেয়, তাহলে সরকারকেও পেটাতে পেটাতে রাস্তায় নামানো হবে। আমরা মস্তিষ্ক দিয়ে পেটাই, হাত দিয়ে না। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার না, অন্তর্বর্তী সরকার তা চিনি না। আমরা শুধু জানি, যারা আমাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ে বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
চাকরিচ্যুত গ্রামীণফোনের নারী কর্মী সুমি বলেন, আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু তারা তামাশা করেছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তারা যদি আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে না দেয়, এই কোম্পানির চিহ্ন এ দেশে থাকবে না।
এ বিষয়ে ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান জানান, চাকরিচ্যুত গ্রামীণফোনের কর্মীদের মানববন্ধন নিয়ে পুলিশ সতর্ক ছিল। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।

