ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একমঞ্চে সব প্রার্থীকে নির্বাচনি প্রচার চালাতে হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) স্বউদ্যোগে এই প্রচারের ব্যবস্থা করবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে প্রচারে অংশ নেবেন।
সেখানে রাজনৈতিক দলীয় প্রধান, কেন্দ্রীয় নেতা এবং প্রার্থী নিজে তার আগামী দিনের প্রতিশ্রুতি, বক্তব্য ও বিবৃতি ঘোষণার সুযোগ পাবেন। সব প্রার্থীর জন্য প্রচারের সমান সুযোগ রাখতে এই বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করে কমিশনের অনুমোদনের জন্য শিগগিরই এ সংক্রান্ত কমিটি সুপারিশ জানাবে।
নির্বাচনে আচরণবিধি সংশোধনসংক্রান্ত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। ইসির দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে—প্রার্থী উঠান বৈঠক করতে পারবেন; সেটিও সর্বোচ্চ পাঁচজনকে নিয়ে। প্রার্থীর পক্ষে ইসি নির্ধারিত স্থানে লিফলেট সাঁটানো ও বিতরণের কাজ করবে। এ ছাড়া ভোটার স্লিপও কমিশন নিজ উদ্যোগে স্থায়ী চৌকিদার-দফাদারের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে। কমিশন সবই করবে রাষ্ট্রীয় খরচে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, সব প্রার্থীর জন্য প্রচারের সমান সুযোগ রাখতে সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালায় এসব বিধান সন্নিবেশ করার প্রাথমিক আলোচনায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে অন্তর্বর্তী বা কেয়ারটেকার সরকারের সময়, উপদেষ্টামণ্ডলী শব্দাবলি নতুন আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার ইসিকে সরবরাহ করবে। কমিশন স্বউদ্যোগে সেগুলো বই আকারে তৈরি করে ভোটার ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে প্রচার করবে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আচরণবিধিতে পৃথক ধারা সংযোজন করবে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা আছে। তবে নতুন নির্বাচন কমিশন এটি সংশোধন করে নতুন আচরণবিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
দলগুলোর মতামত নেওয়া হবে কি নাÑ জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা পরবর্তী সময়ে সব স্টেকহোল্ডারদের (অংশীজন) সঙ্গে বসব। তখনকার অবস্থা বলবে কী করতে হবে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ প্রস্তাবিত আচরণবিধিমালায় যুক্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, একটি চমৎকার আচরণবিধিমালা হবে বলে আমরা আশা করছি। লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড—সব প্রার্থী সমানভাবে প্রচার-প্রচারণা করতে পারবে, সে ধরনের মনোভাব নিয়ে আমরা আচরণবিধিমালা করতে চাচ্ছি।
আচরণবিধি সংশোধনসংক্রান্ত একটি সভা ইসিতে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। সভায় আরপিও সংশোধন না করে আচরণবিধি প্রণয়ন করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেখানে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করব। যেখানে আরপিও সংশোধন ও সংযোজন প্রয়োজন হবে, তা সুপারিশ রেখে যাওয়া হবে।
সভার বিষয়ে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নির্বাচনে প্রভাবশালী প্রার্থীদের ক্ষমতার প্রভাব, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও কালোটাকার দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য নির্বাচনি প্রচারের নিয়ন্ত্রণে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আচরণবিধিতে প্রচারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থানে নির্বাচনি জনসভার মঞ্চ তৈরি করবে ইসি। ওই মঞ্চে প্রার্থীরা তাদের নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী, পর্যায়ক্রমে এসে ভোটারদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে যাবেন। রাজনৈতিক দল কোনো পোস্টার ছাপাতে পারবে না। প্রচারের লিফলেট ইসির নির্বাচিত এলাকায় বিতরণ ও প্রচার চালাতে পারবেন। জনসভা, পথসভা নিষিদ্ধ হলেও প্রার্থীরা সীমিত পরিসরে উঠান বৈঠক করতে পারবেন। এ বৈঠকে সর্বোচ্চ জনসমাগম হবে পাঁচজন।
এ ছাড়া নির্বাচনি ইশতেহার রাজনৈতিক দলকে প্রচার করতে হবে না। কমিশন নিজ খরচে ভোটার ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে এর প্রচার করবে। নির্বাচনে ভোটার স্লিপ তৈরি এবং সেগুলো বিতরণে প্রার্থীদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য স্লিপ বিতরণের কাজটিও কমিশন তাদের খরচে স্থানীয় চৌকিদার-দফাদারের সহায়তায় ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের বিষয়টিও যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, সে বিষয়টিও প্রস্তাবিত খসড়ায় রাখা হয়েছে বলে জানান আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ কঠোরতা যেন নিশ্চিত করা যায়, সেজন্য এ সংক্রান্ত শাস্তির বিধান খসড়ায় থাকছে।

