প্লট দুর্নীতি মামলায় ব্রিটিশ এমপি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকীর বিচার ও সাজা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি বলছে, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি এবং শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকীর বিচার ও সাজা নিয়ে সম্প্রতি মিডিয়া রিপোর্টে উত্থাপিত উদ্বেগ এবং প্রশ্নগুলোর একটি স্পষ্ট পরীক্ষা প্রয়োজন। সে কারণে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব প্রসিকিউশন উপকরণ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করেছি। গতকাল মঙ্গলবার এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সংস্থাটি।
দুদক বলছে, মামলার নথি থেকে দেখা যায়, প্রতিটি বিষয়ই টিউলিপ সিদ্দিকীর খালা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মা শেখ রেহানা এবং তার ভাই-বোন ও চাচাতো ভাই-বোনদের নামে প্লট বরাদ্দের সঙ্গে সম্পর্কিত দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে গঠিত। বিচারাধীন মামলাগুলোর মধ্যে একটিতে আরো দেখা যায় যে, তার খালা যখন সরকারপ্রধান ছিলেন, সেই সময়ে টিউলিপ নিজেও একটি অতিরিক্ত প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন। শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং টিউলিপসহ তাদের ভাই-বোনেরা বিচার এড়াতে আত্মগোপন করেন। ৩টি মামলার মধ্যে প্রথমটির বিচার শেষ হয়েছে এবং টিউলিপ তার মা ও ভাই-বোনদের জন্য জমি নিশ্চিত করতে তার খালাকে প্রভাবিত করার দায়ে দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল নম্বর ৫-এর সামনে স্পেশাল কেস নম্বর ১৮/২০২৫-এ প্রসিকিউশন অভিযোগ করে, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, টিউলিপ তার পরিবারকে প্লট পাইয়ে দিতে তার খালাকে তার পদমর্যাদার অপব্যবহার করার জন্য প্রভাবিত, প্ররোচিত এবং রাজি করিয়েছিলেন।
দুদকের ভাষ্য, প্রসিকিউশন ৩২ জন সাক্ষীর পরীক্ষা করেছে। এই সাক্ষীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হলফনামার মাধ্যমে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, টিউলিপ, যিনি তার খালার খুব ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, তিনি প্রশ্নবিদ্ধ বরাদ্দগুলো পেতে তার প্রভাব ব্যবহার করেছেন। তাদের সাক্ষ্য, টিউলিপ, তার মা এবং তার ভাই-বোনদের নামে প্লট বরাদ্দের পারিপার্শ্বিক প্রমাণের সঙ্গে একযোগে ইঙ্গিত দেয় যে তিনি প্লটগুলো নিশ্চিত করার এই অবৈধ প্রক্রিয়ায় গভীরভাবে জড়িত ছিলেন—শুধুমাত্র যে মামলাটির সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই হয়েছে তাতেই নয়, অন্যান্য সময়েও। এই ধরনের আচরণ পেনাল কোডের সেকশন ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(ক), ২০১, ২১৭, ২১৬, ৪০৯, এবং ৪২০, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর সেকশন ৫(২) এর সঙ্গে পঠিত, এর অধীনে অপরাধে সহায়তাকারী হিসেবে গণ্য হয়।
দুর্নীতির সত্যতার জোরালো প্রমাণ দেখিয়ে সংস্থাটি বলছে, এই পারিপার্শ্বিক প্রমাণ আরো জোরালো হয় এই কারণে যে, টিউলিপও তার খালা, পদচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওপর যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, তার অপব্যবহার করে একটি প্লট (প্লট নম্বর CWN (A)-২৭, পরে পরিবর্তন করে প্লট নম্বর ০৫, ব্লক এনই(এ), গুলশান, ফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১, বাড়ি নম্বর ৫-এ এবং ৫-বি, যা এখন পুনঃসংখ্যায়িত হয়ে ১১৫ এবং ১১-বি, রোড নম্বর ৭১, গুলশান-২) পেয়েছিলেন।
এটি উল্লেখ করা উচিত যে এগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষিজমি নয়, বরং ঢাকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল অঞ্চলগুলোর মধ্যে অবস্থিত অত্যন্ত মূল্যবান প্লট। প্লটগুলো যথেষ্ট বড়, যেখানে যথেষ্ট বড় বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভবন তৈরি করা যেতে পারে। সরকারের মালিকানাধীন এই জমিটি মূলত ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ কমাতে আবাসন তৈরির জন্য নির্ধারিত ছিল, কিন্তু পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের কাছে বরাদ্দ করা হয়েছিল, যার ফলে পারিবারিক সম্পদ জমার প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল।
টিউলিপ সিদ্দিকীর সঙ্গে অফশোর সংস্থাগুলোর সহায়তায় কেনা বেশ কয়েকটি লন্ডন সম্পত্তির যোগসূত্র রয়েছে উল্লেখ করে দুদক আরো বলছে, এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করে—সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিরা কীভাবে দুটি প্রধান বিশ্ব রাজধানীতে একাধিক সম্পত্তি এবং জমি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ অর্জন করেন? আমরা মিসেস সিদ্দিকীর কাছ থেকে এই এবং অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর শুনতে আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তার বিচার হয়েছে অনুপস্থিতিতে। মিসেস সিদ্দিকীর এই দাবি প্রসঙ্গে যে তিনি অভিযোগের জবাব দিতে পারেননি, সেই দাবিটি একেবারেই মিথ্যা। তাকে বিচারকাজে অংশ নেওয়ার এবং তার মামলা উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি উপস্থিত থাকতে বা প্রতিনিধিত্ব করতে অস্বীকার করেন। অভিযোগ থেকে টিউলিপ সিদ্দিকীর নির্দোষ হওয়ার কোনো ভিত্তি নেই জানিয়ে দুদক বলছে, সব মিলিয়ে, আমরা মনে করি এই তথ্যগুলো স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বাংলাদেশের আইন অনুসারে দুর্নীতির সহায়তা ও উস্কানি দেওয়ার ক্ষেত্রে মিসেস সিদ্দিকীর ধারাবাহিক জড়িত থাকার প্রমাণ দেয়। এই তথ্য ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে, তাকে দুর্নীতিতে জড়িত না থাকার বা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে নির্দোষ হওয়ার কোনো ভিত্তি নেই।

