কক্সবাজারে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের গেট টুগেদার নিয়ে রহস্য

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৮

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ রোডের ইনানী বিচ এলাকার ‘বে-ওয়াচ’ হোটেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের গেট টুগেদার নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা থেকে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের একটি ট্রান্সপোর্ট বিমানে (ফ্রান্সের তৈরি কেএএসএ) তারা কক্সবাজারে যান এবং সেনাবাহিনী পরিচালিত পাঁচ তারকা বে-ওয়াচ হোটেলে চেক ইন করেন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ৪৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান মিঞা (সাবেক অর্ডিনেন্স)। এই সফরে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন ৮ জন মেজর জেনারেল, ১২ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, একজন কর্নেল, একজন লে. কর্নেল ও একজন মেজর। এছাড়াও প্রতিনিধি দলে কয়েকজন কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন।

আরো জানা গেছে, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের কর্মসূচি নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ওই দুদিন হোটেল বে-ওয়াচে অন্য কোনো অতিথির বুকিং নেওয়া হয়নি। ৩০ ও ৩১ অক্টোবর ওই হোটেলে অনলাইন বুকিং চেক করলে ‘সোল্ড আউট’ অপশন দেখা যায়।

এই গেট টুগেদার অনুষ্ঠানটি সেনা সদরের সৌজন্যে হয়েছে বলে শোনা গেলেও এ বিষয়ে আইএসপিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। শনিবার সরকারি ছুটির কারণে অফিস বন্ধ থাকায় তারা সঠিক তথ্য জানাতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবকাশ যাপনকালীন এই সফরে সেনা কর্মকর্তারা গেট টুগেদার পার্টি, বিচসহ কক্সবাজারের দর্শনীয় এলাকা ভ্রমণ করেছেন। ‘প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো’র নামে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও এটাকে সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে মনে করা হচ্ছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে এই গেট টুগেদারে বিতর্কিত কয়েকজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তার অংশগ্রহণ নিয়ে নানা রহস্যের তৈরি হয়েছে। অবশ্য এই অনুষ্ঠানে কয়েকজন সরলমনা ও ভালো কর্মকর্তাও যুক্ত ছিলেন।

জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানে যেসব সাবেক সামরিক কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন তাদের অনেকেই ভারতপন্থি ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সমর্থিত হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন—শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ আমলের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান নাসিমের ব্যর্থ সেনাঅভ্যুত্থানের সহযোগী হিসেবে চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান ও ভারতের পদ্মশ্রী পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির।

কক্সবাজারে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার আনছার হোসেন জানান, হোটেল বে-ওয়াচ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। এমনকি হোটেলটির স্টাফরা তাদের নিজেদের পরিচয়ও জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

কক্সবাজারে কর্মরত সামরিক ও বেসামরিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ওই হোটেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্য মিলে ৪৪ জন ৩০ অক্টোবর থেকে অবস্থান করছেন। আজ ২ নভেম্বর তারা কক্সবাজার ত্যাগ করবেন।

সূত্র জানায়, এই গেট টুগেদারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের যোগ দেওয়ার কথা শোনা গেলেও বিষয়টি সত্য নয় বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সেনাপ্রধান গত ২৬ অক্টোবর কক্সবাজার সফরে গিয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে কক্সবাজারে নেই।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত