আমার দেশ

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

বিভিন্ন রুটে ইন্টারকানেকশন ও এসপিএ চুক্তি স্বাক্ষর

কবিতা
বিভিন্ন রুটে ইন্টারকানেকশন ও এসপিএ চুক্তি স্বাক্ষর

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে ইন্টারকানেকশন ও স্পেশাল প্রোরেট (এসপিএ) এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ ধরনের আরো চুক্তি স্বাক্ষরের অপেক্ষায়। বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি প্রেস্টিজিয়াস এয়ারলাইন্স হিসেবে বিমানের রুট ও গন্তব্য বাড়ানোর লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিশ্বসেরা জাপান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ইন্টারলিংক ই-টিকিটিং চুক্তি করা হয়েছে। টার্কিশ এয়ারের সঙ্গে এসপিএ চুক্তি স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে। জাপান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির ফলে বিমানের যাত্রীরা ঢাকা থেকে বিমানের নিজস্ব ফ্লাইটে নারিতা হয়ে সেখান থেকে কানাডার ভ্যাংকুবার, সিয়াটল, লস অ্যাঞ্জেলেস ও ক্যালিফোর্নিয়ার মতো আকর্ষণীয় গন্তব্যে যেতে পারবেন।

বিমান কর্তৃপক্ষ আশা করছে এ রুটে ঢাকা থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যাত্রী মিলবে। একইভাবে আইটিএ এয়ারের মাধ্যমে ঢাকা থেকে রোম হয়ে ইউরোপের যে কোনো দেশে যাবার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। শিগগির চালু হচেছ ঢাকা থেকে নারিতা হয়ে কানাডার ভ্যাংকুবার, সিয়াটল, লস অ্যাঞ্জেলেস ফ্লাইটের ইন্টারকানেকশন।

বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, টার্কিশ এয়ারের সঙ্গে স্পেশাল এগ্রিমেন্টের কিছু শর্তাবলি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এতে বিমানের লন্ডন টরেন্টো ও ইতালির মতো রুটগুলোতে কখনো যদি বিমানের ফ্লাইট অপারেট করা সম্ভব না হয়, তখন সেই যাত্রীদের ব্যাকআপ ফ্লাইট দেবে টার্কিশ এয়ার। যা বিমানের নিরবচ্ছিন্ন ফ্লাইট সূচি ও যাত্রী অধিকার নিশ্চিত করবে। একই পদ্ধতিতে বর্তমানে আইটিএ এয়ারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে ঢাকা থেকে রোম হয়ে সেখানকার অভ্যন্তরীণ যে কোনো গন্তব্যে যেতে পারবে যাত্রীরা। এর বাইরে রোম থেকেও গোটা ইউরোপের যে কোনো গন্তব্যে পৌঁছে দেবে আইটিএ এয়ার।

বিমানে রয়েছে জনবলের সংকট, নেই প্রয়োজনীয় উড়োজাহাজও। এত সীমাবদ্ধতার মাঝেও গত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টিকিট বিক্রি হয়েছে। এ পাঁচ মাসেই টিকিট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। মাসিক গড়ে যা দাঁড়ায় ৯ শতাধিক কোটি টাকায়। এটা বিমানের ইতিহাসে একক মাসের সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়। একইভাবে কার্গোতেও বেড়েছে রাজস্ব আয়।

এয়ারপোর্টে যাত্রী সেবায়ও আনা হয়েছে ব্যাপক সংস্কার। ১৮ মিনিটে ফার্স্ট লাগেজ ও এক ঘণ্টায় লাস্ট লাগেজ ডেলিভারি দেওয়ার চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় টার্গেট-থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অপারেট করার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য কেনা হয়েছে বিশ্বমানের টিএলডি কোম্পানির যত সব ইকুইপমেন্ট। নিজস্ব বহর দিয়েই এবারও হজ ফ্লাইট অপারেট করার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। এসব পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।

এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম আমার দেশকে বলেনÑ বিমানের অনেক আগেই এ ধরনের ইন্টারলিকে যাওয়া দরকার ছিল। বর্তমান সময়ে টিকে থাকতে হলে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এককভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করে লাভবান হওয়া কঠিন। একে অপরের সহযোগিতার চুক্তি যত বেশি হবে ততই এয়ারলাইন্স লাভবান হবে। কোডশেয়ারিং, ইন্টার লিংক, এসপিএ এগুলো বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যাত্রীর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ, আগামী দশ বছরে সেটা দ্বিগুণ হয়ে ২ কোটি ৫০ লাখে দাঁড়াবে। তাহলে এই যাত্রীদের মোকাবিলায় বিমানের প্রস্তুতি কোথায়? এই বাস্তবতায় অবশ্যই বিমানের সামনে এখন ক্রুশিয়াল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উড়োজাহাজ কেনা। বিমানের উচিত নতুন আরো অন্তত ৮টি ওয়াইড বডি ও ২টি ন্যারো বডির এয়ারক্রাফট কেনার দরপত্র আহ্বান করা। কারণ সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

অনলাইনে আন্তর্জাতিক বিপণন প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওয়েবসাইটভিত্তিক বিপণনের ওপর জোর দেওয়ায় জিডিএস-এর ব্যয় কমে রাজস্ব বেড়েছে বলে মনে করেন পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) আশরাফুল আলম। তিনি জানান, অনলাইন টিকিট বিক্রিতে যে জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা ছিল তা দূর করা হয়েছে। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে অনলাইনে বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যাত্রীরা টিকিট কাটতে পারছেন। হয়তো এতে এজেন্সিগুলো নাখোশ। কারণ তাদের কমিশনে সেটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

তিনি মনে করেন-বিমানের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই সবাইকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাছাড়া এখন আর ব্লকিং সিস্টেমও নেই। স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিজের মনিটরেই অনলাইনের টিকিটের দাম ও আসনের সার্বিক তথ্য জেনে যাচ্ছেন যাত্রী। ইচ্ছে করলেও কেউ টিকিট হাতে রেখে বলতে পারবে না টিকিট নেই। এছাড়া প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের বিমানের টিকিটের দামও তুলনামূলক সাশ্রয়ী। শ্রমিকদের জন্য রয়েছে বিশেষ দামের সুযোগ। এসব কারণেই বিমানের প্রতি মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা বাড়ছে।

বিমান বহরের উড়োজাহাজ সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমান কর্তৃপক্ষ বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে হজ। এবারও আমরা নিজস্ব প্লেন দিয়েই হজ অপারেট করব। এতে হয়তো ম্যানচেস্টার, কুয়েত ও দিল্লিসহ কয়েকটি রুটের ফ্রিকোয়েন্সি কম হবে দু’মাসের জন্য। তারপর বড় চ্যালেঞ্জ হলো বহর বাড়ানো। এটাই এখন আমাদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। আমরা আপৎকালীন চাহিদা মোকাবিলায় লিজে দুটো মিডরেঞ্জের এয়ারক্রাফট নেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছি।

বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আন্তঃলাইন অংশীদারত্ব অর্থাৎ ইন্টারলাইন পার্টনারশিপ করছে। বিমান ইতালির আইটিএ এয়ারওয়েজ (এ জেড)’র সঙ্গে আন্তঃলাইন অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মাধ্যমে যাত্রীরা ইতালির মিলান, ভেনিস, ফ্লোরেন্স যেতে পারবেন। একইভাবে আইটিএ এয়ারের মাধ্যমে ঢাকা থেকে রোম হয়ে ইউরোপের যে কোনো দেশে যাবার সুযোগ পাচ্ছেন যাত্রীরা।

সম্প্রতি এক্সেস রেলের সঙ্গে আন্তঃলাইন অংশীদারত্ব স্থাপিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে যাত্রীরা ম্যানচেস্টার, লন্ডন, টরেন্টো এবং রোম থেকে বিভিন্ন পয়েন্টগুলোতে ভ্রমণ করতে পারছেন। টার্কিশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আন্তঃলাইন অংশীদারত্ব চুক্তিটি পরিমার্জনের মাধ্যমে যাত্রীদের সেবা বৃদ্ধির কাজ করছে। এছাড়াও চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স, হেইনান এয়ারলাইন্স (এইচইউ), জাপান এয়ারলাইন্স (জেএল)-এর সঙ্গে কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন