
জাহিদুল ইসলাম

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কথিত ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘিরে সতর্ক রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ জুলাই আন্দোলনের পক্ষের দলগুলো ওইদিন মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। যেকোনো ধরনের সহিংস বিক্ষোভ প্রতিরোধের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে রাজধানীর মাঠে সক্রিয় থাকবে বলে জানিয়েছে দলগুলো।
দলগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা সজাগ থাকবে। আওয়ামী লীগ কোনো সহিংসতা করতে চাইলে তা প্রতিরোধ করবে বলেও দলগুলো হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেছে।
উল্লেখ্য, আগামী ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিচার চলছে।
রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পর বর্তমানে ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অডিও বার্তা দিয়ে ‘১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো হওয়ারও আহ্বান জানান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাও অডিও বার্তায় ওই কর্মসূচি সফল করতে তার দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওই অডিও বার্তার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বোমা নিক্ষেপ, বাসে আগুনসহ চোরাগোপ্তা হামলা করেছে। কোথাও কোথাও ঝটিকা মিছিলও করেছে।
১৩ নভেম্বর ঘিরে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। কাকরাইল চার্চের সামনে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িতসহ নাশকতার জন্য কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিতে রাজধানীর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা টার্গেট করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার নিরাপত্তা জোরদারসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে।
গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল সোমবার থেকে ঢাকার প্রবেশপথ, আবাসিক হোটেল, মেস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলে বিশেষ তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়াও গত শনিবার থেকে ডিএমপির ১৪২টি স্থানে বড় ধরনের নিরাপত্তা মহড়া চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে প্রায় সাত হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন, সচিবালয়, হাইকোর্ট, বঙ্গভবন ও তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এই মহড়ার আওতায় ছিল।
পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাজনৈতিক দল ছাড়াও জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য সংগঠনও ওইদিন মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
সতর্ক অবস্থানে থাকবে বিএনপি
আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউনের পরিকল্পনা ঘিরে ওইদিন যেকোনো ধরনের সহিংস বিক্ষোভ প্রতিরোধে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে রাজধানীজুড়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে বিএনপি নেতাকর্মীরা। মূলত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিএনপি নেতাকর্মীরা সজাগ থাকবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার পর রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের এমন চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী মহানগর বিএনপি ও সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। যাতে পলাতক আওয়ামী লীগ ও তাদের কোনো দোসররা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে না পারে।
ঢাকায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক আমার দেশকে বলেন, আওয়ামী লীগের লকডাউনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আমাদের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, রাজধানীতে কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করতে দেওয়া হবে না। নাশকতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে ও সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা মাঠে থাকব। যদিও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা আসেনি, তবুও এই সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু আমার দেশকে বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে এখনো কোনো দলীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো অপশক্তি যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেই জন্য নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
পরিস্থিতি দেখে প্রতিরোধ গড়বে জামায়াত
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশে বড় ধরনের নাশকতা ও অস্থিরতা তৈরির নানা পরিকল্পনার কথা প্রচার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে দলটি। এ বিষয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দেশবাসীকে সাবধানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা। পরিস্থিতি দেখে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা আগেও অনেক হুমকি-ধমকি দিয়েছে। তারা অতীতে দেশের বড় ক্ষতিও করেছে। তাই নতুন করে সেই ফ্যাসিবাদ যাতে আর মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য জনস্বার্থে সরকার ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে দেশবাসীকেও সতর্ক থাকতে হবে। আমাদেরকেও তৎপর থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদের মোকাবিলায় সবাই মিলে কাজ করতে হবে।
তিনি জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের কোনো তৎপরতা থাকবে না। তবে পরিস্থিতি বুঝে দেশবাসীকে নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
একই ধরনের মন্তব্য করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই বিপ্লবপরবর্তী বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় কিছু করার মতো অবস্থানে নেই আওয়ামী লীগ। তাদের শীর্ষ নেতারা দেশের বাইরে। এ অবস্থায় কেউ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চক্রান্ত করলে তা জনগণ ব্যর্থ করে দেবে। এ নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে বলে মনে করি না।
তবে গোয়েন্দাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এ নিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মোকাবিলায় মাঠে থাকবে এনসিপি
গণঅভ্যুত্থানে পতিত শেখ হাসিনার গণহত্যা মামলার রায়ের দিনক্ষণকে ঘিরে আওয়ামী লীগ বড় ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সতর্ক অবস্থানে এনসিপি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে তাদের মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দিয়ে থাকবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলটির শীর্ষ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকার পরও তারা মাঠে নামলে গণঅভ্যুত্থানের দল হিসেবে এনসিপি ঘরে বসে থাকবে না। ফ্যাসিস্টরা যাতে গণহত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত এবং দেশে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য তৎপর রয়েছে।
এদিকে জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগের সৈনিক ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গতকাল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ১৩ নভেম্বর মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ১৩ তারিখ ফজর পড়ব আমরা শাহবাগে। এক হাতে থাকবে লিফলেট, অন্য হাতে বাঁশের লাঠি। সারাদিন রাজপথে ভোটারযোগ করব আর খুনিলীগের গুন্ডাগুলারে খুঁজব।
তিনি বলেন, দিল্লির জঙ্গিগুলারে কোথাও এক মিনিটের জন্য পাওয়া মাত্রই ওদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আমাদের সঙ্গে থাকবেন শহীদ পরিবার ও আহত ভাই-বোনেরা।
হাদি বলেন, দেশ ধ্বংসের জন্য কয়েকশ কোটি টাকা বাজেট করেছে ফেরাউসিনা। আপনারাও কয়েকশ কোটি বাঁশের লাঠি নিয়ে তৈরি হোন। আজাদীর এই জমিনকে আমরা আর জাহান্নাম হতে দিব না। ইনশাআল্লাহ।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কথিত ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘিরে সতর্ক রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ জুলাই আন্দোলনের পক্ষের দলগুলো ওইদিন মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। যেকোনো ধরনের সহিংস বিক্ষোভ প্রতিরোধের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে রাজধানীর মাঠে সক্রিয় থাকবে বলে জানিয়েছে দলগুলো।
দলগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা সজাগ থাকবে। আওয়ামী লীগ কোনো সহিংসতা করতে চাইলে তা প্রতিরোধ করবে বলেও দলগুলো হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেছে।
উল্লেখ্য, আগামী ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিচার চলছে।
রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পর বর্তমানে ভারতে পলাতক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অডিও বার্তা দিয়ে ‘১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় জড়ো হওয়ারও আহ্বান জানান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাও অডিও বার্তায় ওই কর্মসূচি সফল করতে তার দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওই অডিও বার্তার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বোমা নিক্ষেপ, বাসে আগুনসহ চোরাগোপ্তা হামলা করেছে। কোথাও কোথাও ঝটিকা মিছিলও করেছে।
১৩ নভেম্বর ঘিরে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালাতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। কাকরাইল চার্চের সামনে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িতসহ নাশকতার জন্য কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিতে রাজধানীর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা টার্গেট করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার নিরাপত্তা জোরদারসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে।
গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল সোমবার থেকে ঢাকার প্রবেশপথ, আবাসিক হোটেল, মেস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলে বিশেষ তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়াও গত শনিবার থেকে ডিএমপির ১৪২টি স্থানে বড় ধরনের নিরাপত্তা মহড়া চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে প্রায় সাত হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন, সচিবালয়, হাইকোর্ট, বঙ্গভবন ও তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এই মহড়ার আওতায় ছিল।
পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। রাজনৈতিক দল ছাড়াও জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য সংগঠনও ওইদিন মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
সতর্ক অবস্থানে থাকবে বিএনপি
আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউনের পরিকল্পনা ঘিরে ওইদিন যেকোনো ধরনের সহিংস বিক্ষোভ প্রতিরোধে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে রাজধানীজুড়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে বিএনপি নেতাকর্মীরা। মূলত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিএনপি নেতাকর্মীরা সজাগ থাকবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার পর রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের এমন চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা অনুযায়ী মহানগর বিএনপি ও সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। যাতে পলাতক আওয়ামী লীগ ও তাদের কোনো দোসররা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে না পারে।
ঢাকায় ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক আমার দেশকে বলেন, আওয়ামী লীগের লকডাউনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আমাদের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, রাজধানীতে কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করতে দেওয়া হবে না। নাশকতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে ও সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা মাঠে থাকব। যদিও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা আসেনি, তবুও এই সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু আমার দেশকে বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে এখনো কোনো দলীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো অপশক্তি যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেই জন্য নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবে।
পরিস্থিতি দেখে প্রতিরোধ গড়বে জামায়াত
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশে বড় ধরনের নাশকতা ও অস্থিরতা তৈরির নানা পরিকল্পনার কথা প্রচার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে দলটি। এ বিষয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দেশবাসীকে সাবধানে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা। পরিস্থিতি দেখে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা আগেও অনেক হুমকি-ধমকি দিয়েছে। তারা অতীতে দেশের বড় ক্ষতিও করেছে। তাই নতুন করে সেই ফ্যাসিবাদ যাতে আর মাথাচাড়া দিতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য জনস্বার্থে সরকার ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে দেশবাসীকেও সতর্ক থাকতে হবে। আমাদেরকেও তৎপর থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদের মোকাবিলায় সবাই মিলে কাজ করতে হবে।
তিনি জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের কোনো তৎপরতা থাকবে না। তবে পরিস্থিতি বুঝে দেশবাসীকে নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
একই ধরনের মন্তব্য করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাই বিপ্লবপরবর্তী বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় কিছু করার মতো অবস্থানে নেই আওয়ামী লীগ। তাদের শীর্ষ নেতারা দেশের বাইরে। এ অবস্থায় কেউ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চক্রান্ত করলে তা জনগণ ব্যর্থ করে দেবে। এ নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে বলে মনে করি না।
তবে গোয়েন্দাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এ নিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মোকাবিলায় মাঠে থাকবে এনসিপি
গণঅভ্যুত্থানে পতিত শেখ হাসিনার গণহত্যা মামলার রায়ের দিনক্ষণকে ঘিরে আওয়ামী লীগ বড় ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সতর্ক অবস্থানে এনসিপি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে তাদের মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দিয়ে থাকবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলটির শীর্ষ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকার পরও তারা মাঠে নামলে গণঅভ্যুত্থানের দল হিসেবে এনসিপি ঘরে বসে থাকবে না। ফ্যাসিস্টরা যাতে গণহত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত এবং দেশে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য তৎপর রয়েছে।
এদিকে জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগের সৈনিক ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গতকাল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ১৩ নভেম্বর মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ১৩ তারিখ ফজর পড়ব আমরা শাহবাগে। এক হাতে থাকবে লিফলেট, অন্য হাতে বাঁশের লাঠি। সারাদিন রাজপথে ভোটারযোগ করব আর খুনিলীগের গুন্ডাগুলারে খুঁজব।
তিনি বলেন, দিল্লির জঙ্গিগুলারে কোথাও এক মিনিটের জন্য পাওয়া মাত্রই ওদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আমাদের সঙ্গে থাকবেন শহীদ পরিবার ও আহত ভাই-বোনেরা।
হাদি বলেন, দেশ ধ্বংসের জন্য কয়েকশ কোটি টাকা বাজেট করেছে ফেরাউসিনা। আপনারাও কয়েকশ কোটি বাঁশের লাঠি নিয়ে তৈরি হোন। আজাদীর এই জমিনকে আমরা আর জাহান্নাম হতে দিব না। ইনশাআল্লাহ।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি-জামায়াতসহ আমরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছি; সে তুলনায় আপনারা অনেক ভালো আছেন। আমার মনে হয়—চুপচাপ থাকলে আরো ভালো থাকবেন, উৎপাত করলে বিপদ।
২ মিনিট আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে সমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল। দুপুর দুইটায় পল্টন মোড়ে হবে এ সমাবেশ।
২ ঘণ্টা আগে
দেশে বিরাজমান এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অবহিত করতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শুরু হবে এ সংবাদ সম্মেলন।
২ ঘণ্টা আগে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এরপর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন তিনি।এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের
২ ঘণ্টা আগে