৫৩ বছরেও রাষ্ট্র নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি: ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২১: ১৫

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন এবং '৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এদেশের বীর বাঙালির ঐতিহাসিক অর্জন। শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সাম্য ও মানবিক মর্যাদাপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধের যে আত্মত্যাগ ছিল তা অবিস্মরণীয়। কিন্তু দীর্ঘ ৫৩ বছরেও আমরা রাষ্ট্র নির্মাণের যে আকাঙ্ক্ষা ও লক্ষ্য তা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি বলে জানান গণফোরাম ইমেরিটাসের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার বিকাল ৪ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরামের জুলাই গণঅভ্যুত্থান: প্রত্যয় ও প্রত্যাশা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এক লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল আরো বলেন, আমাদের মনে রাখা দরকার বাঙালি জাতি তাদের নাগরিক জীবনের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুগে যুগে আন্দোলন করেই সফল হয়েছে। একথাও সত্য যে, রাজনৈতিক দলগুলির মতপার্থক্য ও বিভক্তির কারণে জনগণ আন্দোলনের সফলতা বা ফসল ভোগ করতে পারেনি। একারণে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে এবং জনগণকে পুনরায় রাষ্ট্রের বা ক্ষমতাসীন অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়েছে।

গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পিছনে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, '৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক দলগুলোর যে অঙ্গীকার ছিল তা পরবর্তী সরকারগুলি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় ভয়াবহ রক্তাক্ত ২০২৪ জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। একটি সভ্য, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন রাষ্ট্রে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার ন্যায়সংগত দাবীতে আন্দোলনকারী নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর বিগত সরকারের ভয়াবহ আক্রমণ বিশ্ব বিবেক কে বিস্মিত করেছে।

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ড. কামাল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে একটি বৈষম্যহীন, মানবিক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা কোন ক্রমেই ব্যাহত করা যাবে না। এক্ষেত্রে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে তাকে সতর্কতার সাথে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের অভিপ্রায়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখা একান্ত কর্তব্য।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমরা রাষ্ট্রের কাছে সুশাসন,স্বাধীনতা সর্বোপরি মৌলিক অধিকার চাই। আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপব্যবহার করতো। ঠিক জুলাইয়ের চেতনাকেও একদল অপব্যবহার করছে।

তিনি আরও বলেন, ১৬ বছরের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জুলাই এসেছে। পতিত দানব সরকারের অন্যায় অত্যাচারের ফল জুলাই গণঅভ্যুত্থান। তিনি যদি শিক্ষার্থীদের উপর গুলি না করতো তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। এই গণঅভ্যুত্থানে কৃষক, শ্রমিক, শিশু-কিশোর এবং নারী- পুরুষ সবাই অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারকে হটানো সম্ভব হয়েছে।

বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমরা মনে করেছিলাম ইউনুস সরকার দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারবে। কিন্তু তিনি তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। বিশৃঙ্খলা অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচন দরকার। ড. ইউনুস সরকারকে বলবো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে চলে যান। আর যদি না দেন তাহলে দেশের মানুষ আন্দোলন করতে পারে।

এছাড়াও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এই এক বছর তৈরি করার জন্য বছরের পর বছর আন্দোলন করতে হয়েছে। জুলাই আন্দোলন আমাদের বড় অর্জন। এই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ। এই আন্দোলন আমাদের স্বস্তি দিতে পারেনি। এখনো মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। সরকারের কাজ ছিল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সংস্কার করা। কিন্তু তা না করে বিভক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ গত ৫৩ বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে। এতো জনসমর্থনের পরেও এমন দুর্বল সরকার কখনো দেখিনি।

তিনি আরো বলেন, তিন মাস ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের বৈঠকে উপস্থিত থাকছে। আবার দলীয় সমাবেশে বলে ৭১ এর সংবিধান বাতিল করবে। আমরা আর কোন সংঘাত দেখতে চাই না। বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচিত সরকার ছাড়া এ থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি জনাব শরীফ নূরুল আম্বিয়া, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক জনাব রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সম্পাদক জনাব সাইফুল হক, সিনিয়র সহ-সভাপতি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল মিসেস তানিয়া রব , বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক জনাব বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জনাব জোনায়েদ সাকী, ভাষানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান জনাব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত