সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে সংবর্ধনা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। তার প্রত্যাবর্তনের খবরে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে বিপুল উচ্ছ্বাস, যা ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূল পর্যায়েও।
তার আগমন উপলক্ষে ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে তারা নিজ উদ্যোগে বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস ভাড়া করছেন। দলের নেতারা আশা করছেন, ওই দিন ভোর থেকেই রাজধানীর চারপাশ থেকে ঢাকামুখী জনস্রোত শুরু হবে।
জানা গেছে, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরের নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে শৃঙ্খলা কমিটি । বুকিং দেওয়া হয়েছে ১০ রুটের বিশেষ ট্রেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল দুপুরের মধ্য দেশের মাটিতে পা রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি সিলেট হয়ে ঢাকায় আসবে। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন তিনি।
সংবর্ধনায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে : রিজভী
তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও অভ্যর্থনা কমিটির সদস্য সচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল মঙ্গলবার ৩০০ ফিট এলাকার সংবর্ধনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে আসবেন। আজই (মঙ্গলবার) আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসা শুরু হয়েছে। সুতরাং ২৫ ডিসেম্বর এখানে মানুষের মহামিলন ও মহামেলায় পরিণত হবে। তিনি আরো বলেন, নিরাপত্তার প্রথম দায়িত্ব সরকারের, এরপর দলের।
বিমানবন্দরে যেভাবে অভ্যর্থনা জানাবে বিএনপি
আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন তিনি। আগামীকাল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগে তাকে বহনকারী বিমানটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর পৌনে ১২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সেখানে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর থেকে সংবর্ধনাস্থলের উদ্দেশে রওনা করবেন। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। বেলা ৩টার পর চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তিনি। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৭টার পর গুলশানের বাসার উদ্দেশে রওনা করবেন।
বুলেটপ্রুফ গাড়ি
তারেক রহমানের নিরাপত্তায় বিএনপির কেনা বুলেটপ্রুফ গাড়িটি গত সোমবার ঢাকায় পৌঁছেছে। টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেলের গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস অনুমোদন দিয়েছে বিআরটিএ। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
সংবর্ধনার মঞ্চ প্রস্তুত
বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফিট সড়কের একটি অংশজুড়ে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। আজ বুধবার রাতের মধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রায় ৯০০টি মাইক লাগনো হবে রাজধানীতে। এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে আবদুল্লাহপুর, বিশ্বরোড, বনানী হয়ে মহাখালী, যমুনা ফিউচার পার্ক, ৩০০ ফিটের রাস্তা ধরে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত লাগানো হচ্ছে এসব মাইক। পুরা এলাকা সিসিটিভির নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
তারেক রহমানের সংবর্ধনা মঞ্চে সঙ্গী হবেন তার সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান, একমাত্র সন্তান ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং যুগপৎ আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা । এছাড়া দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত থাকবেন।
শহরজুড়ে থাকবে এলইডি ডিসপ্লে
নেতাকর্মীদের ঢল ৩০০ ফিট ছাড়িয়ে বিমানবন্দর, উত্তরা, বনানী পর্যন্ত যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে মাইকের পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডিজিটাল এলইডি ডিসপ্লে স্থাপন করা হবে।
প্রস্তুত থাকবে মেডিকেল টিম
তারেক রহমানের দেশে আসাকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম হবে ঢাকায়। ফলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য মোবাইল মেডিকেল টিম গঠন করেছে বিএনপি। দলটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, জরুরি চিকিৎসার জন্য ৩০টি মোবাইল মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিমানবন্দর ও ৩০০ ফিটের আশপাশে অবস্থিত হাসপাতালগুলো প্রস্তুত থাকবে।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. বাছেদুর রহমান সোহেল আমার দেশকে বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে আজ থেকে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করবেন। এ সময় জরুরি চিকিৎসার জন্য শহরের প্রতিটি প্রবেশমুখে ড্যাবের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম অবস্থান করবে। ২৫ ডিসেম্বর সংবর্ধনাস্থলে তিনটি অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প ও ২৫টি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে।
বিমানবন্দরে কঠোর নিরাপত্তা ও ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ
যাত্রীসেবা, নিরাপত্তা এবং অপারেশনাল শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আজ সন্ধ্যা থেকে ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমানবন্দর এলাকায় নির্ধারিত যাত্রী ব্যতীত সব সহযাত্রী ভিজিটর প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধের ঘোষণা করেছে সিভিল অ্যাভিয়েশন। পাশাপাশি গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পযর্ন্ত বিমানবন্দর এলাকায় ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশেষ প্রয়োজনে ড্রোন উড্ডয়ন প্রয়োজন হলে অনুমতি নিতে হবে।
বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী
তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে আরেক জায়গায় গমনাগমনের সময় পাবেন পুলিশ প্রোটেকশনসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এছাড়া তার বাসভবন ও অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ।
এছাড়া তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে দলের পক্ষ থেকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) একেএম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সসহ একাধিক টিম কাজ করবে। এছাড়া দলের বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের সমন্বয়েও একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
১০ রুটে স্পেশাল ট্রেন
নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় যাতায়াতের উদ্দেশে ১০টি রুটে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এজন্য স্বল্প দূরত্বের রাজবাড়ী কমিউটার (রাজবাড়ী-পোড়াদহ), ঢালারচর এক্সপ্রেস (পাবনা-রাজশাহী) এবং রোহনপুর কমিউটার (রোহনপুর-রাজশাহী) ট্রেনের বৃহস্পতিবারের যাত্রা স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
এছাড়া নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে চাহিদার ভিত্তিতে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। স্পেশাল ট্রেন এবং অতিরিক্ত কোচে দলীয় নেতাকর্মীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা, ২০২৫ প্রতিপালনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেকের ফেরা নিয়ে আলোচনা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে আলোচনা করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া বৈঠকে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা করেন তারা। এ সময় কেউ কেউ তারেক রহমানকে ঢাকা থেকে নির্বাচন করতে অনুরোধও জানান।
বৈঠকে তারেক রহমানের সংবর্ধনা মঞ্চে কারা উপস্থিত থাকবেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সুপার ‘টু’ নেতারা থাকবেন। এর বাইরে নিহত ও আহত জুলাইযোদ্ধা পরিবারের একজন করে সদস্য থাকবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ এবং ডা. জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

