আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণায় সরগরম দেশ। কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনেও এর ব্যতিক্রম নয়। আসনটি থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রচার, প্রচারণা ও গণসংযোগ করছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। গত কয়েকদিন ধরে এ আসনে জনপ্রিয় ইসলামি সংগীতশিল্পী ও কবি মুহিব খানের রাজনৈতিক পোস্টার প্রচার-প্রচারণায় দেখা মিলেছে। তিনি কোন দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এ নিয়েও চলছে সাধারণ জনগণের মধ্যে নানা আলোচনা।
মুহিব খান মূলত কোন দল থেকে নির্বাচনের মাঠে অংশ নেবেন এ বিষয় মুখ না খুললেও তিনি জানিয়েছেন শহর ও ইউনিয়নগুলো থেকে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন।
রোববার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে এক পোস্টে মুহিব খান জানান, এ আসনের জনগণকে সালাম জানিয়ে আমার একটি সাধারণ রাজনৈতিক পোস্টার প্রচার হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। স্থানীয় রাজনীতিতে এটাই আমার প্রথম জানান। এ কয়েকদিনে আমি শহর ও ইউনিয়নগুলো থেকে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।
আমার দেশ পাঠকদের জন্য নিচে মুহিব খানের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
নির্বাচনী রাজনীতিতে আমার অবস্থান
কিশোরগঞ্জ-১ (সদর+হোসেনপুর) আমাদের নির্বাচনী আসন।
আমার আব্বা মাওলানা আতাউর রহমান খান রহঃ এ আসনে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে স্বৈরাচারের প্রতিকুলে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে কিংবদন্তিতুল্য জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রেখেছিলেন এবং ১৯৯১ এর সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট ফজলুর রহমান সাহেবের বিপক্ষে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি স্বেচ্ছায় সক্রিয় রাজনীতি থেকে সাময়িক অবসর গ্রহণের সুযোগে পরবর্তিতে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফ সাহেব এখানে লাগাতার এমপি নির্বাচিত হন, শেষে তার বোনও এখানে এমপি ছিলেন।
২৪ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে আয়োজিত হতে চলেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা। সবাই নিজ নিজ ত্যাগ ও অবদানের স্বীকৃতি ও প্রতিদানস্বরূপ সংসদ সদস্য পদের দাবীদার ছিলেন, কিন্তু মনোনয়ন যে কোন একজন পাবেন, এটাই নিয়ম। পেয়েছেনও, এখন অন্যদের মনোভাব ও প্রকৃত ভেতরগত অবস্থান নির্ণয়ের পালা।
এ আসনের জনগণকে সালাম জানিয়ে আমার একটি সাধারণ রাজনৈতিক পোস্টার প্রচার হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। স্থানীয় রাজনীতিতে এটাই আমার প্রথম জানান। এ কয়দিনে আমি শহর ও ইউনিয়নগুলো থেকে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুরের দেশপ্রেমিক ইসলামী জনগণ, আলেম উলামা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আগে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতেন এরকম অসংখ্য সাধারণ ভোটার, বিএনপি'র অনেক সাধারণ সমর্থক, এমনকি মনোনয়ন বঞ্চিতদের কাছের লোকজনদের পক্ষ থেকেও আমার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও আকাঙ্খার প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি। আমি এর আবেগ ও বাস্তবতা নিরীক্ষণ করার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করছি।
আমি কোন দল বা জোট থেকে নির্বাচন করতে পারি, এ বিষয়টি এখনই স্পষ্ট করছি না, তবে এটুকু জানিয়ে রাখছি যে, একদিকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী ৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে, অপরদিকে এবি পার্টি ও এনসিপিসহ মধ্যপন্থী দলগুলোর সম্ভাব্য জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে আমাকে এ আসনে একক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা ও যোগাযোগ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি'রও রয়েছে মনোনয়ন পুনঃর্বিবেচনার সুযোগ। স্থানীয় রাজনৈতিক মেরুকরণের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বতন্ত্র প্রার্থিতার পথও বন্ধ নয়।
নির্বাচন কি ফেব্রুয়ারীতেই হবে, নাকি পেছাবে, বিএনপির মনোনয়ন চূড়ান্ত থাকবে নাকি পরিবর্তন হবে, দৃশ্যমান জোটগুলো এভাবেই থাকবে না পরিবর্তন হবে, ইসলামপন্থী জোট ও মধ্যপন্থী জোট আলাদা থাকবে না এক হয়ে যাবে, এ আসনটি বিএনপি'র নিজেরই থাকবে না কোন শরিক দল বা জোটকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে, কোনকিছুই এখনও চূড়ান্তভাবে বলা যায় না। আর যেকোনো কারণে নির্বাচন পেছালে তো আরো অনেক কিছুই হতে পারে। সময়ের আগে তা বলা সম্ভব নয়।
নির্বাচন এখন হোক বা পরে হোক, কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর নির্বাচনী এলাকার শান্তি নিরাপত্তা ও ব্যাপক উন্নয়নকল্পে আমার স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা ও পরিকল্পনাগুলো আমি ধাপে ধাপে প্রকাশ করব এবং "কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর কল্যাণ পরিষদ" এর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাব। আশা করি আমি সবাইকে আমার পাশে পাবো।
আমি আশাবাদী, কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুরের স্থানীয় রাজনৈতিক মেরুকরণে গোটা দেশকে চমকে দেওয়ার মতো কোনো ভিন্ন ব্যাপার ঘটতেও পারে, কারণ এই আসনটি শিক্ষিত সচেতন রুচিশীল ভদ্র মানুষদের আসন। তারা কোন বিশেষ দল, নেতা বা স্থানীয় রাজনৈতিক দাপটের গোলাম নন। তারা নিজেদের পছন্দের প্রিয় প্রতিনিধি নির্বাচন এবং সমর্থনে সততা স্বচ্ছতা যোগ্যতা ও উপযুক্ত ব্যক্তিত্বের উপর আস্থাশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
(লেখাটি বিশেষভাবে কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুরবাসীর উদ্দেশ্যে)

