মাঠের ক্রিকেটে তাওহিদ হৃদয়ের সাম্প্রতিক আচরণ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের দৃশ্যপটের ভিন্ন এক বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা ক্লাবে খেলেছেন হৃদয়। আরো একটু সুনির্দিষ্ট করে বলি, ২০১৭-১৮ থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কেটেছে শাইনপুকুর ও আবাহনীর ক্রিকেটার হিসেবে।
এই মৌসুমে দল বদলেছেন। খেলছেন মোহামেডানের হয়ে। গত ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রভাবী হয়ে ওঠা রাজনৈতিক দলের ক্লাব মোহামেডান। এ দলের হয়ে খেলার সময় আম্পায়ার শরফুদৌল্লা ইবনে শহীদ সৈকতের সঙ্গে মাঠে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান হৃদয়। মাঠের সে ঘটনার পর গণমাধ্যমের সামনেও আম্পায়ারদের হেয় এবং অসম্মান করে কথা বলেন। দুই কারণ মিলিয়ে তাকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেন ম্যাচ রেফারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে তার শাস্তি কমিয়ে সেটা এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা করা হয়। কেন এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার পর তার শাস্তি কমে এল, সেই দায় কেউ নিচ্ছেন না। বিসিবির এমন সিদ্ধান্ত সবাইকে অবাক করেছে এবং বুঝিয়ে দিয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে কী হয় এবং কীভাবে চলছে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট!
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন শাইনপুকুর ও আবাহনীর প্রতি আম্পায়ারদের নতজানু এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ সব সময়ই দেখেছেন হৃদয়। পাপন-মল্লিকযুগে বিসিবিতে ছিল বেক্সিমকোর সরাসরি প্রভাব। আর শাইনপুকুর তো বেক্সিমকোর মালিকানাধীন ক্লাব। মূলত হৃদয় জানেন না কীভাবে আম্পায়াররা বিরুদ্ধে যেতে পারেন। তিনি সব সময় দেখেছেন ক্লাবগুলোর চাপে আম্পায়াররা ভীত থাকেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের আঙ্গুল তোলা দেখেছেন হৃদয়।
ঢাকা লিগের এবারের আসরে অন্যতম ক্ষমতাশীল দল মোহামেডান; আর এই দলের হয়েই এবার খেলছেন হৃদয়। সেই দলের অধিনায়কও আবার তিনি। গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকে আম্পায়াররা এখন খানিকটা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারছেন। তাদের ওপর ক্লাবগুলোকে বাঁচানোর বা তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য বোর্ড কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সরাসরি কোনো চাপ নেই। বলা যায়, আম্পায়াররা তাদের স্বকীয়তা-স্বাধীনতাও ফিরে পেয়েছেন।
এতসব ঘটনার পর তাওহিদ হৃদয়ের মতো কেউ সৈকতের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়াবেনÑ এটা বিস্ময়কর নয়। তারা মূলত আম্পায়ারদের গণ্যই করেন না। পাত্তাই দেন না। তারা ক্লাবের ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখেন। এটা আসলে কখনই বদল হবে না, যদি না বিসিবির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আসে। ঢাকার ক্লাবগুলোর ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া এবং বিসিবিতে ন্যায়সংগত প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা তৈরি না করা হলে এটা চলতেই থাকবে।
আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তে ক্রিকেটারদের এই আস্তিন গুটানো আচরণ এবং অসম্মান করার মনোভাব জানাচ্ছে দিস এই নট ক্রিকেট!
মোহাম্মদ ইসাম, ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি।

