পার্থ রায়
সুপার ওভারে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ছিল ১১ রান। প্রথম বলেই নো বল ও ওয়াইডের সুবাদে ৫ রান তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ ৫ বলে ছিল ৬ রানের লক্ষ্য। তবে শেষ পর্যন্ত ওই রান আর তুলতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শেষ ৫ বলে দলটি তোলে ৪ রান। তাতে সুপার ওভারে ১ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
সুপার ওভারে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান। তিনে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত ৯ রানে থামে বাংলাদেশের সুপার ওভার ইনিংস। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছিল ১০ রান।
এই হারে ১-১ ব্যবধানে সিরিজ সমতায় ফেরালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন সুপার ওভার খেলছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে টাই করার পর সুপার ওভারে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ১১ রান। মোস্তাফিজুর রহমানের করা সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলেছে ১০ রান।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই প্রথম সুপার ওভার। ৪৫৩ ওয়ানডে, ১৫৪ টেস্ট ও ২০৬ টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এটাই প্রথম সুপার ওভার খেলছে বাংলাদেশ দল।
শেষ ওভারে ৫ রান দরকার ছিল জয়ের জন্য। সাইফ হাসানের দারুণ বোলিংয়ে শেষ ৪ রানের বেশি নিতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে বাংলাদেশের সমান ২১৩ রানে থামে তাদের ইনিংস। তাতে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ৫ রান। ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন আকিল হোসেন। বোল্ড আউট হন তিনি। ফেরার আগে আকিলের ব্যাটে আসে ১৬ রান।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২১৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪৮ ওভারে ৮ উইকেটে ২০০ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দুই ওভারে তাদের জয়ের জন্য দরকার ১৪ রান।
লম্বা সময় ধরে একটি উইকেটের অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে মেহেদি হাসান মিরাজের হাত ধরে। তানভীর ইসলামের বলে দারুণ এক থ্রোতে জাস্টিন গ্রেভসকে আউট করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ফেরার আগে গ্রেভসের ব্যাটে এসেছে ২৬ রান।
নাসুম আহমেদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে আউট হয়েছেন রোস্টন চেজ। ১১ বলে ৫ রান করে আউট হয়েছেন তিনি।
রিশাদ হোসেনের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন গুদাকেশ মোতি। ফেরার আগে তার ব্যাটে এসেছে ১৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন। তাদের রান ৬ উইকেটে ১২৮।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ১০৭/৫ (২৬.৪ ওভার)
দলীয় ১০০ রানের কোট পার হওয়ার পরই আউট হয়েছেন শেরফন রাদারফোর্ড। ফেরার আগে তার ব্যাটে এসেছে মোটে ৭ রান। তানভীর ইসলামের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে আউট হন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ৯০/৪ (২৩ ওভার)
কেসি কার্টির বিদায়ের পর এবার ফিরলেন আকিম অগাস্টি। রিশাদের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন তিনি। তানভীর ইসলামের বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ২৯ বলে ১৭ রান করেন ফেরেন।
এখন পর্যন্ত চার উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে তিনটিই হয়েছে এলবিডাব্লিউ।
এবার কেসি কার্টি আউট হয়েছেন রিশাদ হোসেনের বলে। লেগ বিফোরের শিকার হওয়ার আগে তার ব্যাটে আসে ৫৯ বলে ৩৫ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেশ দারুণভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন আলিক আথানজি। রিভিউ নিয়ে বাঁচার চেষ্টা ছিল তার। তবে শেষ পর্যন্ত আর বাঁচতে পারেননি। আউট হয়েছেন ৪২ বলে ২৮ রান করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ৪৭/১ (১৩ ওভার)
স্পিন ট্র্যাকে বাংলাদেশ যেমন ধীরগতিতে এগিয়েছে, ঠিক সেই পথেই হাঁটছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আলিক আথানজি ও কেসি কার্টি বেশ দেখেশুনেই এগোচ্ছেন।
বাংলাদেশের দেওয়া ২১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রতিপক্ষের মতো স্বাগতিক বাংলাদেশ স্পিনার দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করেছে।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়েছেন ব্র্যান্ডন কিং।
প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫০ ওভারই স্পিনার দিয়ে বল করানোর রেকর্ড গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগে সবচেয়ে বেশি ৪৪ ওভার স্পিনার দিয়ে বোলিং করিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডাম্বুলায় এই কীর্তি গড়েছিল তারা।
স্পিনার দিয়ে সবচেয়ে বেশি বল
ওয়েস্ট ইন্ডিজ-৩০০ বল (৫০ ওভার), প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ, ২০২৫
শ্রীলঙ্কা-২৬৪ বল (৪৪ ওভার), প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ২০০৪
ওমান-২৬১ বল (৪৩.৩ ওভার), প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস, ২০২৪
শ্রীলঙ্কা-২৫৮ বল (৪৩ ওভার), প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ২০২২
ওয়েস্ট ইন্ডিজ-২৫২ বল (৪২ ওভার), প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, ২০১০
শেষদিকে এসে ১৪ বলে ৩৯ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেললেন রিশাদ হোসেন। তাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ রান এসেছে সৌম্য সরকারের ব্যাটে। এছাড়া ৩৯ রান করেন রিশাদ হোসেন। অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ করেন ৫৮ বলে ৩২ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে গুদাকেশ মোতি ৬৫ রানে নেন তিন উইকেট।
বাংলাদেশ- ১৬৩/৭ (৪৬ ওভার)
২৪ বলে ২৩ রান করে ফিরলেন নুরুল হাসান সোহান। গুদাকেশ মোতির বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে আউট হয়েছেন তিনি।
মিরপুরের স্পিন ট্র্যাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এখন পর্যন্ত বোলিংই করেননি কোন বোলার। অথচ, বাংলাদেশের ইনিংসের ৪০ ওভার ইতোমধ্যে শেষ। যে কোন ওয়ানডে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি সময় কোন পেসারের বল না করার এটাই রেকর্ড।
এর আগে পেসার ছাড়া সবচেয়ে লম্বা বোলিং ইনিংস ছিল ওমানের দখলে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৩৫.২ ওভার লম্বা ওই ইনিংসে কোন পেসারই বল করেননি। এখন এই রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। নামিবিয়ার বিপক্ষে ওমান ৩৩.১ ওভার, যুক্তরাষ্ট্র ওমানের বিপক্ষে ২৫.৩ ওভার, নেপালের বিপক্ষে ৫.২ ওভারের ইনিংসে কোন পেসার আনেননি দলগুলো।
বাংলাদেশ-১২৮/৬ (৩৮.৩ ওভার)
গুদাকেশ মোতির বলে খানিকটা ব্যাকফুটে খেলেছিলেন নাসুম আহমেদ। খাইরি পেরি নাসুমের তুলে দেওয়া বল তালুবন্দি করতে ভুল করেননি। তাতে আউট হয়েছেন তিনি। ফেরার আগে তার ব্যাটে এসেছে ২৬ বলে ১৪ রান।
বাংলাদেশ- ১০৩/৫ (৩০.৩ ওভার)
৮৯ বলে ৪৫ রান করে ফিরলেন সৌম্য সরকার। আকিল হোসেইনের বলে আউট হয়েছেন তিনি। সৌম্যর এই ইনিংসে ছিল ৩ চার ও এক ছক্কা। লেন্থে থাকা বল স্লগ সুইপ করে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ- ১০৩/৪ (৩০ ওভার)
বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেটের পতন। মাত্র ১৭ রানে আউট হয়েছেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। আলিক আথানজির বলে আউট হয়েছেন তিনি। ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে ফেরেন।
তার বিদায়ের পর বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ শতরান পেরিয়েছে।
বাংলাদেশ- ৬৮/৩ (১৭.২ ওভার)
তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ফেরার আগে তার ব্যাটে এসেছে মোটে ১৪ রান। আলিক আথানজির বলে ব্রান্ডন কিংয়ের হাতে ক্যাচ তুলে ফিরেছেন তিনি।
মিরপুরের উইকেট স্পিন ট্র্যাক হবে সেটা স্পষ্ট ছিল আগে থেকেই। এমন স্পিন ট্র্যাকের সর্বাত্মক ব্যবহারটাই করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে স্পিনার দিয়ে বল করিয়েছে দলটি। শুধু তাই নয়, শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও এবারই প্রথম কোন দল প্রথম ১০ ওভারে শুধুমাত্র স্পিনার ব্যবহার করা হলো।
মিরপুরের উইকেট স্পিন ট্র্যাক হবে সেটা স্পষ্ট ছিল আগে থেকেই। এমন স্পিন ট্র্যাকের সর্বাত্মক ব্যবহারটাই করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে স্পিনার দিয়ে বল করিয়েছে দলটি। শুধু তাই নয়, শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও এবারই প্রথম কোন দল প্রথম ১০ ওভারে শুধুমাত্র স্পিনার ব্যবহার করা হলো।
গুদাকেশ মোতির বলে টপ এজ হয়ে আউট হয়েছেন তাওহিদ হৃদয়। তিনি ক্যাচ তুলে দেন মিড অনে। ফেরার আগে ১৯ বলে ১২ রান করেছেন তিনি।
স্পিন উইকেট। বেশ টার্ন পাচ্ছেন স্পিনাররা। এমন উইকেট বিবেচনায় চার স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এমন কী ইনিংসের শুরুর ১০ ওভার বোলিং করেছেন তিন স্পিনার। এমন দারুণ স্পিন উইকেটে বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই বলা যায়। পাওয়ার প্লেতে ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে তাদের সংগ্রহ ৪০ রান।
ক্যারিবিয়ান থেকে উড়ে এসে গতকাল রাতে দলের সঙ্গে যোগ দেন আকিল হোসেইন। একাদশে সুযোগ পেয়েই দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তিনি। ১৬ বলে ৬ রান করে আউট হয়েছেন সাইফ হাসান। আগের বলেই আকিলকে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান। পরের বলেই দারুণ এক টার্নে পরাস্ত হয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলে ফেরেন সাইফ। দলীয় ২২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারাল বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। একাদশে এক পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। একাদশে আছেন চার স্পিনার।
বাংলাদেশ একাদশ-
সাইফ হাসান, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, তানভীর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ
ব্র্যান্ডন কিং, আলিক আথানজি, কেসি কার্টি, শাই হোপ, আকিম অগাস্টি, শেরফন রাদারফোর্ড, রোস্টন চেজ, জাস্টিন গ্রেভস, গুদাকেশ মোতি, খারি পিয়েরি, আকিল হোসেইন।