একাকিত্ব স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছন্দপতনের নাম। চলার পথে যেকোনো বয়সি মানুষ যেকোনো সময়ই আটকে যেতে পারেন একাকিত্ব নামের এক অদৃশ্য শেকলে। আর এর থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় কত কিছুই না করে তারা। দক্ষিণ কোরিয়ার সোলেও’তে একাকিত্বে ভোগা মানুষের জন্য ব্যতিক্রমী কিছু করা হয়েছে। এর থেকে মুক্তি পেতে রাজধানীতে চালু করা হয়েছে বিশেষ এক ধরনের নিত্যপণ্যের দোকান। তবে সেই দোকানের বিশেষত্ব হলো, এতে রয়েছে ‘উষ্ণ হৃদয়ের কনভেনিয়েন্স স্টোর’। নিত্যপণ্যের এসব দোকানে নুডুলস থেকে শুরু করে সিনেমা দেখাই নয়, আছে মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব গড়ার সুযোগও।
এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন ২৯ বছর বয়সি হি কাং। নিজের একাকিত্ব দূর করতে এই দোকান থেকে তিনি প্রতিদিনই কিছু না কিছু কিনতেন। আবার বিনামূল্যে নুডুলস যেমন নিতেন তেমনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেন সমাজকর্মী আর অপরিচিতদের সঙ্গে। এভাবেই নিজের একাকিত্ব থেকে রেহাই মিলেছে তার। হি জানিয়েছেন, এই দোকানে না এলে তিনি কখনোই এই রোগ থেকে মুক্তি পেতেন না। কারণ পরিবার থেকে কিশোর বয়সে বাড়ি ছেড়ে আসা এই ব্যক্তি জানান, এই স্টোর না থাকলে তার যাওয়ার মতো আর কোনো জায়গা থাকত না।
চলতি বছরের মার্চে শহরের উত্তর-পূর্ব জেলা ডংডেমুনে অবস্থিত এই বিশেষ দোকানে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ এসেছেন। অথচ ধারণা করা হয়েছিল, প্রথম বছরে হয়তো পাঁচ হাজারের মতো মানুষ আসবেন। প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন দর্শনার্থী আসেন এখানে, যাদের বেশিরভাগই ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সি। তবে হি কাংয়ের মতো তরুণও আছেন অনেক।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীতে একাকিত্ব বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের আনুমানিক এক লাখ ৩০ হাজার তরুণ- যাদের বয়স ১৯ থেকে ৩৯-এর মধ্যে। তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন অথবা গৃহবন্দি। একই গবেষণায় আরো উঠে এসেছে, রাজধানীতে একক পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। এ পরিসংখ্যান সরকারকে বেশ উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ এখানে জন্ম ও বিয়ের হার অনেকটাই কমেছে। স্টোর ম্যানেজার কিম সে হিয়ন জানান, এখানে শুধু রামেন নয়, আছে মুভি ডে, গল্পগুজবের আয়োজন আর একসঙ্গে বসে থাকার উষ্ণ পরিবেশ। মানুষ যেন অন্তত একদিন হলেও মনে করে, তিনি একা নন।
সূত্র: বিবিসি

