আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

ট্রাম্পের বর্ষপূর্তি ভাষণে নিশানায় অভিবাসীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ট্রাম্পের বর্ষপূর্তি ভাষণে নিশানায় অভিবাসীরা
ছবি: এএফপি

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতা নেওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। তার এই ভাষণে প্রাধান্য পেয়েছে বেশকিছু বিষয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে অভিবাসী দমনের বিষয়টি। এ ছাড়া ছিল পূর্বসূরি ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সেই সঙ্গে তুলে ধরেছেন সারা বছর যেসব দেশে যুদ্ধ বন্ধ করেছেন তার তালিকা। নিজ সরকারের নানা সাফল্য যেমন উপস্থাপন করেছেন তেমনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায় চাপিয়েছেন পূর্বসূরির ওপর। যদিও রয়টার্স/ইপসোসের জরিপ জানিয়েছে, ট্রাম্পের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে মার্কিনিদের সমর্থন কমেছে। তার বক্তব্যে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে দেশ ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

বুধবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া ১৯ মিনিটের এক বিশেষ টেলিভিশন ভাষণে বড় কোনো ঘোষণা দেননি ট্রাম্প, যা সাধারণত অন্য প্রেসিডেন্টরা করতেন। তার পরিবর্তে তিনি আক্রমণ করেছেন অভিবাসীদের। তিনি বলেছেন, ‘এ জাতি শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্র সম্মানিত এবং আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি অর্থনৈতিক উল্লম্ফনের জন্য প্রস্তুত যা বিশ্ব কখনো দেখেনি।

বিজ্ঞাপন

অভিবাসীদের তীব্র কটাক্ষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সব সমস্যার জন্য ট্রাম্প তাদের দায়ী করেন। বলেন, অবৈধ শরণার্থীদের জন্য এদেশে আবাসন সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তারা এদেশের চাকরি চুরি করে এদেশের নাগরিকদেরই কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছে। এদেশের করদাতাদের অর্থে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার সুযোগ নিচ্ছে। একই সঙ্গে তারা আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর পেছনে ফেডারেল খরচ বাড়িয়েছে।

আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের ২০২৩ সালের একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অভিবাসীরা সেই বছর ৬৫১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি কর দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

ট্রাম্প সম্প্রতি সোমালিয়ান কমিউনিটিকে ‘আবর্জনা’ বলে কটূক্তি করেন। একই সঙ্গে দাবি করেন যে এরা মিনেসোটা রাজ্যের পুরো অর্থনীতি নিজেদের দখলে নিয়েছে। চুরি করেছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।

অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যতটুকু সেবা নেয়, তার চেয়ে বেশি অর্থনীতিতে অবদান রাখে বিশেষ করে কৃষি এবং আবাসন খাতে। এ ছাড়া চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, হোম কেয়ার এবং বয়স্কদের সেবাকেন্দ্র, এই তিন খাতেও অভিবাসী কর্মীরা অবদান রেখে চলেছে।

ভাষণে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে গত এক বছরে অবৈধ অভিবাসীর প্রবেশ ঠেকাতে তার প্রশাসন বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বলেও জানান ট্রাম্প। অভিবাসন ছাড়াও ট্রাম্প কথা বলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিয়ে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে এদেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বড়েছে, যার দায় পুরোটাই বাইডেন সরকারের ওপর চাপিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, মার্চ থেকে ডিমের দাম ৮২ শতাংশ কমেছে, কমেছে অন্যান্য পণ্যেরও, তবে তা সহনশীল নয়। টার্কির দাম গত বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কমেছে, তবে এই সংখ্যার উৎস স্পষ্ট নয়। তিনি আরো বলেছেন, দেশের বেশিরভাগ অংশে পেট্রোলের দাম এখন প্রতি গ্যালন ২.৫০ ডলার। কিছু রাজ্যে ১.৯৯ ডলার।

ভাষণের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, ১১ মাস আগে আমি এক বিশৃঙ্খল অবস্থায় সব পেয়েছিলাম। এখন আমি সব ঠিক করছি। তিনি বলেন, প্রথম ১০ মাসে বিশ্বে অন্তত আটটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন। ইরানের পারমাণবিক হুমকি ও গাজা যুদ্ধ শেষ করেছি। তিন হাজার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়েছি।’ বাস্তবে, গাজা যুদ্ধবিরতি ফিলিস্তিন এবং সমগ্র অঞ্চলে ইসরাইলি আক্রমণ বন্ধ করতে পারেনি। ট্রাম্প আগেও মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সংঘাত মিটমাটের স্বীকৃতি নিয়েছেন।

২০২৬ সালে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং ট্রাম্পের অর্থনীতি পরিচালনা বিষয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বিগ্ন মার্কিনিরা।

বুধবার প্রকাশিত একটি এনপিআর/পিবিএস নিউজ/মেরিস্ট জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩৬ শতাংশ ট্রাম্পের অর্থনৈতিক রেকর্ডকে সমর্থন করেন এবং ৪৫ শতাংশ বলেছেন, অর্থনৈতিক উদ্বেগের ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি তাদের প্রধান বিষয়। অর্ধেকেরও বেশি বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে দেশ ইতোমধ্যেই মন্দার মধ্যে রয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানদের মাত্র ৩৩ শতাংশ মনে করেন অর্থনীতি পরিচালনায় ট্রাম্প ভালো কাজ করছেন।

ট্রাম্প নিজ দেশের সেনাদের জন্য বড়দিনের এক বিশেষ উপহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ১৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি সামরিক সদস্যকে ‘ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ দেওয়া হবে। এর আওতায় প্রত্যেক সেনা ১ হাজার ৭৭৬ ডলারের বিশেষ বোনাস পাবেন।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ

এলাকার খবর

খুঁজুন