উত্তর ভারতের কেন্দ্রশাসিত পার্বত্যাঞ্চল লাদাখে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জেন-জিদের বিক্ষোভ ও সহিংসতায় সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে, যা এখনো বহাল রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় অধিকারকর্মী ও শিক্ষা সংস্কারক সোনম ওয়াংচুককে গ্রেপ্তারের জেরে সেখানকার পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে ব্যাপক ধরপাকড়ও চালিয়েছে প্রশাসন। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের ধরতে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ফলে লেহ-সহ গোটা লাদাখে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লেদ শহরে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী টহল জোরদার করেছে।
এদিকে, শহরের পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন সেখানকার উপ-রাজ্য লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্ত। এছাড়া, রাজ ভবনে একটি উচ্চস্তরের নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠকও করেছেন তিনি। কারফিউ শিথিল করার যে কোনো সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী নেওয়া হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, লাদাখের বেশ কিছু এলাকায় কারফিউ বলবৎ রয়েছে এবং রাজধানী লেহ শহরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
লাদাখ প্রশাসনের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আটকের পর ওয়াংচুককে যোধপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লাদাখের রাজ্যের মর্যাদা এবং উপজাতিদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বীকৃতির পক্ষে কাজ করছেন। তার কার্যকলাপ এ অঞ্চলের নিরাপত্তা, শান্তি ও জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
‘নেপাল আন্দোলন এবং আরব বসন্তের’ কথা উল্লেখ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর সোনম ওয়াংচুকের ‘ধারাবাহিক উসকানিমূলক বক্তব্য এবং ভিডিও এই অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য দায়ী।
এদিকে, ওয়াংচুককে আটকের ফলে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ে বিজেপি সরকার। গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে কংগ্রেস বিজেপিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের ‘ভয়াবহ ব্যর্থতা’র অভিযোগ তুলেছে। এছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টির মতো অন্যান্য বিরোধী দলও এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। আপ নয়াদিল্লিতে ওয়াংচুকের জন্য একটি মোমবাতি মিছিলও বের করেছে।
২৪ সেপ্টেম্বর তরুণদের সহিংস বিক্ষোভ-আন্দোলনে প্রাণ হারান অন্তত চারজন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। যাদের একটি বড় অংশই পুলিশ সদস্য। জেন-জির এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘লাদাখ অ্যাপেক্স বডি’ এবং ‘কারগিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স’ নামে দুটি সংগঠন। কারগিল মুসলমানপ্রধান অঞ্চল, আর লাদাখে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
অপরদিকে, লাদাখ নিয়ে সরকারের সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের সাবেক কমান্ডার-ইন-চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) দীপেন্দ্র হুডা বলেন, সরকারের উচিত লাদাখবাসীর দাবিগুলো খুবই গুরুত্বসহকারে শোনা এবং বিবেচনা করা। তার মতে, লাদাখকে যখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তখন এ বিষয়টিকে স্থানীয়রা খুবই ইতিবাচকভাবেই নিয়েছিলেন। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ধীরে ধীরে মনে হয়েছে তাদের অধিকার সুরক্ষিত হচ্ছে না। তাই তাদের দাবিগুলো ভুল নয়; কিন্তু দাবি আদায়ের জন্য সহিংস পথ বেছে নেওয়াটাও সঠিক নয়।

