ডেনমার্কে চার শতাব্দীরও বেশি পুরোনো ডাক পরিষেবার এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। ডেনিশ ডাক বিভাগ পোস্টনর্ড ঘোষণা করেছে, তারা আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশে শেষবারের মতো চিঠি পৌঁছে দেবে। এর মধ্য দিয়ে ১৬২৪ সাল থেকে চলা ডেনমার্কের চিঠি সরবরাহ ব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটবে।
পোস্টনর্ড জানায়, ডেনিশ সমাজের দ্রুত ডিজিটালাইজেশন এবং চিঠিপত্রের চাহিদা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটির তথ্যমতে, গত ২৫ বছরে ডেনমার্কে চিঠি পাঠানোর হার ৯০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। অনলাইন কেনাকাটার বিস্তারের ফলে প্রতিষ্ঠানটি এখন পার্সেল সরবরাহে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এসেছে, ডাক পরিষেবা বন্ধ সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে পোস্টনর্ড ডেনমার্কে প্রায় ১,৫০০ কর্মী ছাঁটাই করবে এবং ১,৫০০টি ঐতিহ্যবাহী লাল পোস্টবক্স সরিয়ে ফেলবে।
ইতোমধ্যে বিক্রির জন্য তোলা ১,০০০ পোস্টবক্স মাত্র তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে গেছে। ভালো অবস্থায় থাকা পোস্টবক্সগুলো প্রতিটি ২৩৫ পাউন্ডে এবং কিছুটা পুরোনোগুলো ১৭৬ পাউন্ডে বিক্রি হয়। আরো ২০০টি পোস্টবক্স জানুয়ারিতে নিলামে তোলা হবে।
তবে ডেনিশ নাগরিকরা পুরোপুরি চিঠি পাঠানোর সুযোগ হারাচ্ছেন না। বেসরকারি ডেলিভারি কোম্পানি ডাও ১ জানুয়ারি থেকে চিঠি সরবরাহের দায়িত্ব বাড়াবে। গ্রাহকদের ডাও এর শপে গিয়ে বা অতিরিক্ত খরচে বাসা থেকে চিঠি সংগ্রহ করাতে হবে এবং অনলাইনে বা অ্যাপের মাধ্যমে ডাক খরচ পরিশোধ করতে হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তব চিঠির ব্যবহার কমে গেলেও এর মূল্য বেড়েছে। অনেকের কাছে হাতে লেখা চিঠি এখন সময়, যত্ন ও অনুভূতির প্রতীক হয়ে উঠছে। তবুও বাস্তবতা হলো—ডেনমার্কে ডাক পরিষেবার শতাব্দীপ্রাচীন অধ্যায়টি এবার ইতিহাসে পরিণত হচ্ছে।
ডাও তাদের গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেছে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীরা অন্যান্য বয়সের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি চিঠি পাঠায়, ট্রেন্ড গবেষক ম্যাডস আরলিয়েন-সোবর্গের জানিয়েছেন, তরুণরা ডিজিটাল ওভারস্যাচুরেশনের প্রতিসাম্য খুঁজছেন যার কারণে চিঠি লেখা একটি সচেতন পছন্দ হয়ে উঠেছে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

