ভারতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ইসলামোফোবিয়া। পরিস্থিতি যেন দিন দিনই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী বাদ যাচ্ছেন না কেউই। এবার কলেজ ক্যাম্পাসে নামাজ পড়ায় তিন মুসলিম ছাত্রকে চরম অপমান ও লাঞ্ছিত করেছে হিন্দু চরমপন্থিরা। ঘটনাটি ঘটেছে কল্যাণ নামক মহারাষ্ট্রের একটি অঞ্চলে। এভাবে মুসলিম শিক্ষার্থীদের আক্রমণের পরও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার জন্য ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ওই অঞ্চলে।
মঙ্গলবার কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিস ও আমেরিকাভিত্তিক মুসলিম নেটওয়ার্ক টিভি তাদের প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত নামাজ পড়া নিয়ে। ক্লারিয়ন ইন্ডিয়া নামের একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের থানে জেলার মুম্বাইয়ের কাছে কল্যাণের আইডিয়াল কলেজ ক্যাম্পাসের নির্জন একটি শ্রেণিকক্ষে ভুক্তভোগী ওই তিন মুসলিম শিক্ষার্থী নামাজ আদায় করছিলেন, যার ভিডিও ধারণ করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয় হিন্দু উগ্রপন্থি সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দলের সদস্যরা। হিন্দু চরমপন্থিরা ‘হিন্দু অনুভূতিতে আঘাত’ করার অভিযোগ এনে মুসলিম ছেলেদের শাস্তি দাবি করে। এ সময় তারা ছাত্রদের ক্ষমা চাইতে এবং ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের মূর্তির সামনে মাথা নত করে প্রণাম করতে বাধ্য করে। ঘটনার পুরোটা সময় সেখানে নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি শান্ত করার পরিবর্তে পুরো বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের চরম অপমান ও লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় ওই তিন ছাত্রকে ঘিরে চরমপন্থিরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় তাদের হুমকিও দেওয়া হয়। এই স্লোগানটি হলো ভারতজুড়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক একটি স্লোগান।
স্থানীয় মুসলিমরা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। মূর্তির পা স্পর্শ করতে বাধ্য করা হয়েছিল ছাত্রদের, তখনও তারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। মূলত বিজেপিশাসিত বেশ কয়েকটি অঞ্চলে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার এই ধরনটি আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। এসব অঞ্চলে হিন্দু চরমপন্থিরা কোনোরকম অভিযোগ ছাড়াই মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। পুলিশ সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে।
এ ঘটনাকে মুসলিম সংগঠনগুলো বলছে, কল্যাণের ঘটনাটি মুসলিমদের নিপীড়নের একটি বিস্তীর্ণ বিন্যাস। এর আগে পুনেতে মুসলিম নারীরা নামাজ পড়ার পর এক বিজেপি সাংসদ ঐতিহাসিক দুর্গের ভেতরে গোমূত্র ঢেলে দেন। শুধু তা-ই নয়, ভুক্তভোগী নারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে, মুম্বাইয়ের স্থানীয় সমাজকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যে, বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় আরো তীব্র হচ্ছে।
অন্যদিকে, ভারতের অযোধ্যায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের স্থানে নির্মিত রাম মন্দিরে পতাকা উত্তোলনের নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারতে ইসলামোফোরিয়া বাড়তে থাকায় সেখানকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও মুসলিম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য এটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় ভারতে বাড়তে থাকা ইসলামোফোবিয়া, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ঘৃণাপ্রসূত হামলার বিষয়ে সচেতন হতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান।


আফগানদের অভিবাসন আবেদন স্থগিত করলো যুক্তরাষ্ট্র
ইমরান খান সুস্থ আছেন, জানাল কারা কর্তৃপক্ষ