আমার দেশ

ইশরাকের শপথ গ্রহণে অনিশ্চয়তা

মাহমুদা ডলি
ইশরাকের শপথ গ্রহণে অনিশ্চয়তা

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারির ৩০ দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু শপথ পড়াতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ৩০ দিনের মধ্যে শপথ পড়ানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শপথ পড়ানোর ব্যাপারে প্রতিদিনই বাড়ছে আইনি জটিলতা। তাতে ইশরাকের শপথ পাঠের অনিশ্চয়তা বেড়ে গেছে। শপথ পাঠে আদালতের রায়ের অপেক্ষা করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

মন্ত্রণালয় বলেছে, শপথ পাঠের জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইশরাক নিজেই আদালতে শপথ পাঠের জন্য রিট পিটিশন দাখিল করেছেন। গতকালও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের ভেতরে সেবা বন্ধ করে এবং সামনের সড়ক আটকে বিক্ষোভ করছেন ডিএসসিসির কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

গতকাল নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে সড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মচারীরা। ঘণ্টাখানেক পর ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ইশরাকের সমর্থকরা এসে ওই বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় তারা ‘শপথ, শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে টালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ স্লোগান দিতে থাকে।

ইশরাকের সমর্থনে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কর্মচারী জাফর আহমেদ বলেন, আদালত থেকে দুই দফা রায় আসার পরও স্থানীয় সরকার বিভাগের ইচ্ছাকৃত দেরি ও প্রশাসনিক টালবাহানার কারণে দায়িত্ব হস্তান্তর আটকে আছে। মেয়র বসা পর্যন্ত আছি, রাস্তা ছাড়ব না আমরা।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্সের কাজে এসে কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আজিমপুরের রজ্জব আলী বলেন, এখানে আসতেই অনেক সময় লেগেছে। রিকশা নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের পরে আর সামনে যাওয়ার উপায় নেই, পরে হেঁটে নগর ভবনে এসেছি। এসে দেখি সামনে আন্দোলন আর নগর ভবনের সব জায়গায় তালা দেওয়া! কী সমস্যায় পড়লাম, এভাবে আর কয়দিন থাকবে?

ইশরাককে মেয়র পদে শপথ পাঠে আদালতের রায়ের অপেক্ষা করছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গতকাল সকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের আইন অধিশাখা কর্তৃক জানানো হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানোর বিষয়ে ২২ মে হাইকোর্টে করা রিটটি খারিজ হওয়ার পরে স্থানীয় সরকার বিভাগ সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। এ অবস্থায় গত ২৫ মে মেয়র হিসেবে শপথ নিতে হাইকোর্টে ইশরাক হোসেন নিজে তার আইনজীবীর মাধ্যমে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৬ মে একজন নাগরিকের পক্ষে হাইকোর্ট বিভাগের ২২ মে’র খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দাখিল করা হয়েছে। ফলে সর্বোচ্চ আদালতে এটি একটি বিচারাধীন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে তাই স্থানীয় সরকার বিভাগ ইশরাক হোসেনের শপথ পাঠের ক্ষেত্রে আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।

শপথের দাবিতে গতকাল অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রতিটি বিভাগে এখনো তালা লাগানো থাকায় সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সেবা নিতে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে সেবাপ্রার্থীদের। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নগরবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুত তালা খুলে নাগরিক সেবা পুনরায় চালুর আহ্বান জানান।

বক্তারা বলেন, সরকারকে অনুরোধ করব আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নগর ভবনের তালা খুলে সেবা চালুর ব্যবস্থা করুন। যারা ভবন অবরুদ্ধ করেছেন, তাদের প্রতি আহ্বান, আপনারা এই অনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করুন। জনগণকে জিম্মি করে আন্দোলন করা চলবে না।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া খলিলুর রহমান বলেন, ৬৭ বছর বয়সে তিন দিন ধরে ঘুরেও সেবা পাচ্ছি না। নগর ভবন খুলে দিন, আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। জনগণ রাস্তায় নামলে তখন আর সামাল দিতে পারবেন না।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। প্রশ্নবিদ্ধ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। গত ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মামুনুর রশিদ। এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৪ মে থেকে আন্দোলনে নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন