কবিতা, আল-আমিন ও ওয়াসিম সিদ্দিকী
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে পুড়ে গেছে কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্য। এ সময় ১৩টি ফ্লাইট চট্টগ্রাম, সিলেট ও ভারতের কলকাতায় অবতরণ করতে বাধ্য হয়। আগুন নেভাতে মোতায়েন করা হয় ফায়ার সার্ভিসের ৩৭ ইউনিট। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়। ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা দেশবিরোধী নাশকতার অংশ বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। সরকার বলছে, নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে গতকাল শনিবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে এ আগুন লাগে। প্রায় সাত ঘণ্টা পর অর্থাৎ রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনের কারণে গতকাল বিকালে শাহজালাল বিমানবন্দরে সাময়িকভাবে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ঢাকাগামী আটটি ফ্লাইট চট্টগ্রামে, তিনটি সিলেটে এবং দুটি ভারতের কলকাতায় অবতরণ করে। এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিমানবন্দরে আটকা পড়েছিল। পরে রাত ৯টার দিকে বিমানবন্দর চালু হলে ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হয়।
বিমানবন্দরে কর্মরত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুন লাগার পরপরই দুর্ঘটনা এড়াতে হ্যাঙ্গারে থাকা কয়েকটি বিমান কিছুটা দূরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে দেখেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে লাগা আগুন দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন এতটা ভয়াবহ ছিল যে, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাওছার মাহমুদ বলেন, ঘটনার পরপরই বিমানবন্দর ফায়ার সেকশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট, নৌবাহিনী এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন লাগার খবর পাই। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে দমকলকর্মীদের পাঠানো হয়।
গতকাল সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ সময় তিনি জানান, যেখানে আগুন লাগে তার পুরোটাই আমদানি কার্গো। রপ্তানি কার্গো পুরোপুরি নিরাপদ আছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন সাত ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর উড়োজাহাজ ওঠানামাও শুরু হয়। গতকাল রাত ৯টার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা যাচ্ছে, আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে।
ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের কারণে গতকাল বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে রাত ৯টার পর ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়।
এদিন নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকাগামী কয়েকটি ফ্লাইট বিকল্প রুটে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম ও সিলেটে বহু ফ্লাইট অবতরণ করে।
ঢাকার আট ফ্লাইট চট্টগ্রামে অবতরণ
গতকাল চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে শাহজালাল বিমানবন্দরের আট ফ্লাইট। শাহ আমানত বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল জানান, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে শাহজালাল বিমানবন্দরে শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া দুটি ডমেস্টিক ফ্লাইট ফের চট্টগ্রামে ফিরে আসে। বিকাল ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত আন্তর্জাতিক রুটের আরো ছয়টি ফ্লাইট চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
তিন ফ্লাইট নামল সিলেটে
শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের পর তিনটি ফ্লাইট অবতরণ করে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। গতকাল সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এছাড়া ভারতের কলকাতায় দুটি ফ্লাইট অবতরণ করে বলে জানা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা যা বলছেন
কুরিয়ার কোম্পানি তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেডের পরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, শনিবার হাফ শিফটিং কার্যক্রম চলে কার্গো কমপ্লেক্সে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত খোলা ছিল। আমাদের কোম্পানির আড়াই টন মাল নামে এদিন। সব পুড়ে গেছে, এটা নিশ্চিত।
কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী লিমন হোসেনের বিপুল পরিমাণ মালমাল পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে। লিমন বলেন, গত বুধবার চীন থেকে জুতা, ব্যাগ, গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করা হয়। ব্যাংকের কাজ শেষ করে মালামাল বের করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
আকাশপথে পণ্য পরিবহনকারী আরএমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ইবনে আমিন সোহাইল জানান, এ ঘটনায় আমদানিকারকদের বড় ক্ষতি হয়েছে।
ছয় সদস্যের কমিটি গঠন
বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রশাসন ও মানবসম্পদ পরিদপ্তরের পরিচালক মো. নওসাদ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কমিটির সভাপতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চিফ (ফ্লাইট সেফটি)। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি থাকবেন সদস্য হিসেবে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মহাব্যবস্থাপক (করপোরেট সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি), চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স), উপমহাব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি), উপমহাব্যবস্থাপক (কার্গো-রপ্তানি) এবং উপব্যবস্থাপক (ইন্স্যুরেন্স)।
নাশকতার সন্দেহ
সম্প্রতি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেশবিরোধী নাশকতার অংশ বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের সর্বশেষ ঘটনা ঘটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে। এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়; বরং সুপরিকল্পিত নাশকতার অংশ।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এ ঘটনার পেছনে আমদানিসংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশ চিহ্নিত করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকপক্ষের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে না পারার বিষয়ে তাৎক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল দুটি- এক. রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা। দুই. বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের নিরুৎসাহিত করা। বিমানবন্দরের মতো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনায় এমন বড় ধরনের নাশকতা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারায় চক্রটি পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে দেশের দ্রুত বিকাশমান যোগাযোগব্যবস্থা, বিশেষ করে মেট্রোরেলে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বেসরকারি এবং সামরিকসংশ্লিষ্ট স্থাপনায় স্যাবোটাজ ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা গত পাঁচদিনের মধ্যে একের পর এক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের নাশকতার প্রমাণ রেখেছে। এই ধারাবাহিকতার শুরু গত ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার। সেদিন ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকায় একটি কেমিক্যাল গোডাউন ও সংলগ্ন পোশাক প্রিন্টিং কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১৬ জন পুড়ে অঙ্গার হন এবং অনেকে দগ্ধ হন। কেমিক্যাল গোডাউনে রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামে একটি কারখানায় আগুন লাগে। দুপুর ২টার দিকে লাগা ওই ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২৩ ইউনিট ও সেনা-নৌবাহিনীকে ১৭ ঘণ্টারও বেশি সময় চেষ্টা চালাতে হয়। ওই অগ্নিকাণ্ডে বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয় এবং কারখানার ৯ তলা ভবনের আরসিসি কলামগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ধারাবাহিক নাশকতার সর্বশেষ শিকার দেশের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত শাহজালাল বিমানবন্দর। গতকাল শনিবার বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি সেকশনের বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিসের কার্গো শাখায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ফলে বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িক স্থগিত করতে হয়, যা দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলে। কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য, গার্মেন্টস, কেমিক্যাল ও মেশিনারিজ পুড়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে ২৫ আনসার সদস্য আহত হন।
এ ঘটনার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুরা এখনো তৎপর। সম্প্রতি দেশে কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন লাগার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে জনগণ বিশ্বাস করে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে চক্রান্তের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখি না। এটি চক্রান্তের একটি অংশ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, একই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় এবং অগ্নিকাণ্ডের ধরন দেখে বোঝা যায় এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। এ চক্রের মূল উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন, বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে অস্থিরতা তৈরি করা।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো জানতে পেরেছে, ষড়যন্ত্রকারীরা কেবল বিমানবন্দরেই থেমে থাকতে চায় না; তাদের পরবর্তী টার্গেট হিসেবে মেট্রোরেলকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল দেশের আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার অন্যতম প্রতীক। এর ওপর হামলা হলে জনগণের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হবে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট অন্য একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পতনের পর দলটির বহু নেতা দেশ থেকে পালিয়ে যান। তাদের পরিকল্পনা ছিল গত আগস্টে ব্যাপক নাশকতার মাধ্যমে দেশে ফেরা। ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় তারা অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট করে নাশকতায় নেমেছেন। এ বিষয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন নেতা সমন্বয় করছেন বলে জানা গেছে। তারা কলকাতায় মিলিত হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখন দিল্লিতে পলাতক শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করার সুযোগ পাচ্ছেন। গত ১১ অক্টোবর ভারতের দিল্লিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও নওফেল শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর থেকেই দেশে ভয়াবহ তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে চক্রান্তকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে তাৎক্ষণিক এবং সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) নিরাপত্তা আরো জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্পষ্ট করে- দেশের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত চলছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করছে দেশবিরোধী এ নাশকতামূলক কার্যকলাপকে প্রতিহত করা এবং পরবর্তী টার্গেটগুলোয় হামলা ঠেকিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে পুড়ে গেছে কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্য। এ সময় ১৩টি ফ্লাইট চট্টগ্রাম, সিলেট ও ভারতের কলকাতায় অবতরণ করতে বাধ্য হয়। আগুন নেভাতে মোতায়েন করা হয় ফায়ার সার্ভিসের ৩৭ ইউনিট। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়। ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা দেশবিরোধী নাশকতার অংশ বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। সরকার বলছে, নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এর আগে গতকাল শনিবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে এ আগুন লাগে। প্রায় সাত ঘণ্টা পর অর্থাৎ রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনের কারণে গতকাল বিকালে শাহজালাল বিমানবন্দরে সাময়িকভাবে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ঢাকাগামী আটটি ফ্লাইট চট্টগ্রামে, তিনটি সিলেটে এবং দুটি ভারতের কলকাতায় অবতরণ করে। এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিমানবন্দরে আটকা পড়েছিল। পরে রাত ৯টার দিকে বিমানবন্দর চালু হলে ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হয়।
বিমানবন্দরে কর্মরত এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুন লাগার পরপরই দুর্ঘটনা এড়াতে হ্যাঙ্গারে থাকা কয়েকটি বিমান কিছুটা দূরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে দেখেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে লাগা আগুন দ্রুত পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন এতটা ভয়াবহ ছিল যে, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাওছার মাহমুদ বলেন, ঘটনার পরপরই বিমানবন্দর ফায়ার সেকশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট, নৌবাহিনী এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন লাগার খবর পাই। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে দমকলকর্মীদের পাঠানো হয়।
গতকাল সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এ সময় তিনি জানান, যেখানে আগুন লাগে তার পুরোটাই আমদানি কার্গো। রপ্তানি কার্গো পুরোপুরি নিরাপদ আছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন সাত ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর উড়োজাহাজ ওঠানামাও শুরু হয়। গতকাল রাত ৯টার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো নিহতের ঘটনা ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে নিশ্চিত করা যাচ্ছে, আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে।
ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের কারণে গতকাল বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে রাত ৯টার পর ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়।
এদিন নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকাগামী কয়েকটি ফ্লাইট বিকল্প রুটে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম ও সিলেটে বহু ফ্লাইট অবতরণ করে।
ঢাকার আট ফ্লাইট চট্টগ্রামে অবতরণ
গতকাল চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে শাহজালাল বিমানবন্দরের আট ফ্লাইট। শাহ আমানত বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল জানান, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণে শাহজালাল বিমানবন্দরে শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া দুটি ডমেস্টিক ফ্লাইট ফের চট্টগ্রামে ফিরে আসে। বিকাল ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত আন্তর্জাতিক রুটের আরো ছয়টি ফ্লাইট চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
তিন ফ্লাইট নামল সিলেটে
শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের পর তিনটি ফ্লাইট অবতরণ করে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। গতকাল সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এছাড়া ভারতের কলকাতায় দুটি ফ্লাইট অবতরণ করে বলে জানা গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা যা বলছেন
কুরিয়ার কোম্পানি তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেডের পরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, শনিবার হাফ শিফটিং কার্যক্রম চলে কার্গো কমপ্লেক্সে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত খোলা ছিল। আমাদের কোম্পানির আড়াই টন মাল নামে এদিন। সব পুড়ে গেছে, এটা নিশ্চিত।
কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী লিমন হোসেনের বিপুল পরিমাণ মালমাল পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে। লিমন বলেন, গত বুধবার চীন থেকে জুতা, ব্যাগ, গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করা হয়। ব্যাংকের কাজ শেষ করে মালামাল বের করার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
আকাশপথে পণ্য পরিবহনকারী আরএমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ইবনে আমিন সোহাইল জানান, এ ঘটনায় আমদানিকারকদের বড় ক্ষতি হয়েছে।
ছয় সদস্যের কমিটি গঠন
বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রশাসন ও মানবসম্পদ পরিদপ্তরের পরিচালক মো. নওসাদ হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কমিটির সভাপতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চিফ (ফ্লাইট সেফটি)। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি থাকবেন সদস্য হিসেবে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মহাব্যবস্থাপক (করপোরেট সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি), চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স), উপমহাব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি), উপমহাব্যবস্থাপক (কার্গো-রপ্তানি) এবং উপব্যবস্থাপক (ইন্স্যুরেন্স)।
নাশকতার সন্দেহ
সম্প্রতি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেশবিরোধী নাশকতার অংশ বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের সর্বশেষ ঘটনা ঘটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে। এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়; বরং সুপরিকল্পিত নাশকতার অংশ।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এ ঘটনার পেছনে আমদানিসংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশ চিহ্নিত করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকপক্ষের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে না পারার বিষয়ে তাৎক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নাশকতার পরিকল্পনাকারীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল দুটি- এক. রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা। দুই. বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের নিরুৎসাহিত করা। বিমানবন্দরের মতো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনায় এমন বড় ধরনের নাশকতা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারায় চক্রটি পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে দেশের দ্রুত বিকাশমান যোগাযোগব্যবস্থা, বিশেষ করে মেট্রোরেলে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বেসরকারি এবং সামরিকসংশ্লিষ্ট স্থাপনায় স্যাবোটাজ ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা গত পাঁচদিনের মধ্যে একের পর এক তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের নাশকতার প্রমাণ রেখেছে। এই ধারাবাহিকতার শুরু গত ১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার। সেদিন ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকায় একটি কেমিক্যাল গোডাউন ও সংলগ্ন পোশাক প্রিন্টিং কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১৬ জন পুড়ে অঙ্গার হন এবং অনেকে দগ্ধ হন। কেমিক্যাল গোডাউনে রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামে একটি কারখানায় আগুন লাগে। দুপুর ২টার দিকে লাগা ওই ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২৩ ইউনিট ও সেনা-নৌবাহিনীকে ১৭ ঘণ্টারও বেশি সময় চেষ্টা চালাতে হয়। ওই অগ্নিকাণ্ডে বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয় এবং কারখানার ৯ তলা ভবনের আরসিসি কলামগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ধারাবাহিক নাশকতার সর্বশেষ শিকার দেশের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত শাহজালাল বিমানবন্দর। গতকাল শনিবার বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি সেকশনের বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিসের কার্গো শাখায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ফলে বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ ওঠানামা সাময়িক স্থগিত করতে হয়, যা দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলে। কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য, গার্মেন্টস, কেমিক্যাল ও মেশিনারিজ পুড়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে ২৫ আনসার সদস্য আহত হন।
এ ঘটনার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শত্রুরা এখনো তৎপর। সম্প্রতি দেশে কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন লাগার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলে জনগণ বিশ্বাস করে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে চক্রান্তের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখি না। এটি চক্রান্তের একটি অংশ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, একই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় এবং অগ্নিকাণ্ডের ধরন দেখে বোঝা যায় এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। এ চক্রের মূল উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন, বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে অস্থিরতা তৈরি করা।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো জানতে পেরেছে, ষড়যন্ত্রকারীরা কেবল বিমানবন্দরেই থেমে থাকতে চায় না; তাদের পরবর্তী টার্গেট হিসেবে মেট্রোরেলকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মেট্রোরেল দেশের আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার অন্যতম প্রতীক। এর ওপর হামলা হলে জনগণের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হবে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট অন্য একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পতনের পর দলটির বহু নেতা দেশ থেকে পালিয়ে যান। তাদের পরিকল্পনা ছিল গত আগস্টে ব্যাপক নাশকতার মাধ্যমে দেশে ফেরা। ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় তারা অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট করে নাশকতায় নেমেছেন। এ বিষয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন নেতা সমন্বয় করছেন বলে জানা গেছে। তারা কলকাতায় মিলিত হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখন দিল্লিতে পলাতক শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করার সুযোগ পাচ্ছেন। গত ১১ অক্টোবর ভারতের দিল্লিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও নওফেল শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর থেকেই দেশে ভয়াবহ তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে চক্রান্তকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে তাৎক্ষণিক এবং সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) নিরাপত্তা আরো জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা স্পষ্ট করে- দেশের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত চলছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করছে দেশবিরোধী এ নাশকতামূলক কার্যকলাপকে প্রতিহত করা এবং পরবর্তী টার্গেটগুলোয় হামলা ঠেকিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
১৯ ঘণ্টা আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
২০ ঘণ্টা আগেজুলাই বিপ্লবে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার দল আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) বহু নেতা-কর্মীকে আইনের আওতায় আনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এরমধ্যে দলটির মন্ত্রী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীও রয়েছেন।
২০ ঘণ্টা আগেআশিয়ান গ্রুপের বিরুদ্ধে জমি দখল, প্লট জালিয়াতিসহ অসংখ্য অভিযোগ পাহাড় ছুঁয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার নামও জড়িয়ে আছে বহু অপকর্মের সঙ্গে।
২ দিন আগে