আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

এনইআইআর বাস্তবায়ন নিয়ে বহুমুখী চ্যালেঞ্জে সরকার

আল-আমিন

এনইআইআর বাস্তবায়ন নিয়ে বহুমুখী চ্যালেঞ্জে সরকার

ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে ঢাকাসহ সারা দেশের প্রায় ২০ হাজার ব্যবসায়ী বিক্ষোভ করছেন।

আন্দোলনরত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিদেশ থেকে মাত্র ১৮টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন আমদানি করে এবং এনইআইআর বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার এ সিন্ডিকেটকে আরো শক্তিশালী করছে। অন্যদিকে সরকারের দাবি, এনইআইআর চালু হলে অবৈধ মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও বাণিজ্য বন্ধ হবে, অপরাধ কমবে এবং বাজারে শৃঙ্খলা ফিরবে।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ১৮টি মোবাইল ফোন কারখানা দেশে উৎপাদনে যুক্ত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি এবং এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের। এতে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ভবিষ্যতে রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে।

মোবাইল ফোন উৎপাদনকে কেন্দ্র করে দেশে প্যাকেজিং, প্রিন্টিং, ব্যাটারি, চার্জার, হেডফোন ও ডেটা ক্যাবলসহ বিভিন্ন কম্পোনেন্ট শিল্প গড়ে উঠেছে। এসব খাতে বিনিয়োগ প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর্মরত রয়েছেন আরো ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ২০ হাজার অনুমোদিত মোবাইল ফোন বিক্রেতার মাধ্যমে সরাসরি প্রায় ৮০ হাজার কর্মী যুক্ত রয়েছেন। সব মিলিয়ে উৎপাদন ও বিতরণ পর্যায়ে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ নারী শ্রমিক।

সূত্র জানায়, দেশের মাসিক মোবাইল ফোন উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১৫ লাখ ইউনিট। এ শিল্প থেকে সরকার বছরে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি কর রাজস্ব এবং প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মজুরি কর পাচ্ছে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ বা ‘গ্রে’ হ্যান্ডসেটের প্রবেশ বৈধ শিল্পের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বৈধ উদ্যোক্তাদের হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে এবং সরকার প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বাজার চোরাকারবারিদের হাতে চলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধ ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণাসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, যার প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এই প্রেক্ষাপটে সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আগামীকাল থেকে এনইআইআর চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এ ব্যবস্থার আওতায় অবৈধভাবে আমদানি করা বা নিবন্ধনবিহীন মোবাইল ফোন দেশে ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল আমদানিকারক ও উৎপাদকদের দাবি, এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, বাজারে শৃঙ্খলা ফিরবে এবং ভোক্তার অধিকার সুরক্ষিত হবে।

তবে অনিবন্ধিত ব্যবসায়ীরা বলছেন, এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। প্রবাসীদের কাছ থেকে ফোন কেনা যাবে না এবং তাদের কাছে থাকা প্রায় ৫০ লাখ ফোন অবৈধ হয়ে যাবে। এতে প্রায় ২০ হাজার ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

এ অবস্থায় গত ১ ডিসেম্বর এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসির যৌথ সভায় বৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানির শুল্কহার কমানোসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে অনিবন্ধিত ব্যবসায়ীদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে বিটিআরসি প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শহীদ বলেন, এনইআইআর বাস্তবায়ন হলে মোবাইল শিল্পের টেকসই বিকাশ ঘটবে, অপরাধ কমবে এবং জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার হবে।

অন্যদিকে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেলিম মোল্লা বলেন, মোবাইল ব্যবসা বর্তমানে ১৮টি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। এনইআইআর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই সিন্ডিকেটকে আরো শক্তিশালী করা হচ্ছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এনইআইআর বাস্তবায়নের মাধ্যমে অবৈধ হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধ হলে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি ভোক্তারা পাবেন নিরাপদ নেটওয়ার্ক, অফিশিয়াল ওয়ারেন্টি ও হারানো ফোন ট্র্যাক করার সুবিধা। তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় সহায়ক নীতিমালা ও সময়োপযোগী সমাধান জরুরি।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন