
সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে চট্টগ্রামে। এক বছর ধরে যেন খুনের নগরীতে পরিণত হয়েছে এই বন্দর শহর। মহানগরী ছাড়াও জেলার অন্তত চারটি উপজেলায় কমপক্ষে ৪০টি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ৩০টি খুনই হয়েছে গুলিতে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধরা পড়ছে না আসামি। এতে আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সন্ত্রাসীরা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, গত বুধবার সন্ধ্যায় মহানগর বিএনপির সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের ধানের শীষ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলি চালাতেও দ্বিধা করেনি। এতে সরোয়ার হোসেন বাবলা নামে একজন নিহত হয়েছেন। এরশাদসহ গুলিবিদ্ধ হন দলটির আরো দুজন। তবে নিহত বাবলাও পুলিশের তালিকাভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। ওই ঘটনার ছয় ঘণ্টার মধ্যে জেলার রাউজানে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের কর্মসূচি শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাতের আঁধারে প্রতিপক্ষের গুলিতে আহত হন বিএনপির পাঁচ কর্মী। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে চলন্ত গাড়িতে ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালিয়ে হত্যা, নারী দিয়ে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলে খুন এবং বোরকা পরে গুলি করে হত্যার মতো প্রকাশ্যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে চট্টগ্রামে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, দখলসহ বিভিন্ন কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগরী ছাড়াও জেলার রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ভূজপুর, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড ও সাতকানিয়ায় এসব অপরাধ বেশি সংঘটিত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি খুনখারাবি হচ্ছে রাউজানে। এক বছরে এ উপজেলায় ১৭ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ১৪টিই ছিল রাজনৈতিক। এসব ঘটনায় মামলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসামি ধরা পড়ছে না। এতে আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না পুলিশ। আবার সন্ত্রাসীদের ওপর রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকায় ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া শীর্ষ কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাব ও মাঠপর্যায়ের সদস্যদের গাফিলতির কারণে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। সম্প্রতি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বলেন, সরকার ভারী অস্ত্র ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করায় দুর্গম এলাকাগুলোয় অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। শীর্ষ এক পুলিশ কর্মকর্তার মুখে প্রকাশ্যে এ ধরনের বক্তব্যকে দায় এড়ানোর অজুহাত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সব হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারে বিভিন্ন অভিযানের কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দাবি করে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি অস্ত্রও এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে বাহিনীটির দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে চট্টগ্রামের এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, খুনোখুনিতে জড়িত সন্ত্রাসীদের প্রায় সবাই পুলিশের তালিকাভুক্ত। তাদের ব্যাপারে সব তথ্যই আছে পুলিশের কাছে। জুলাই বিপ্লবের আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশ্রয়ে থাকলেও এখন তাদের প্রায় সবাই বিএনপির আশ্রয়ে আছে। এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে সন্ত্রাসী বাবলার অংশগ্রহণ ও প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় এরই বড় প্রমাণ।
তিনি বলেন, রাউজান-রাঙ্গুনিয়ার সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বালুমহাল ও পাহাড়ের মাটির কারবার নিয়ন্ত্রণের সংশ্লিষ্টতা আছে। যেগুলো দিনের বেলায় রাজনৈতিক নেতারা আর রাতে পাহারা দেয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। এর বাইরে পুলিশেরও কিছু ব্যর্থতা আছে। জুলাই বিপ্লবের পর আগের মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না গোয়েন্দারা। এক্ষেত্রে তাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এখনো বড় একটি অংশ পতিত স্বৈরাচার সরকারের সমর্থক। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে তাদের আন্তরিকতা নিয়েও সন্দেহ করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা আন্তরিক না হলে পরিস্থিতি রাতারাতি পরিবর্তন করা কঠিন।
মহানগরীর আলোচিত যত খুন
সবশেষ গত বুধবার বায়েজিদ থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচার চালানোর সময় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির গুলিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় তার নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবলা নিহত হন। আরেক সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারী রায়হান গ্রুপ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে ছোট সাজ্জাদ স্ত্রীসহ কারাগারে আছেন। সেখান থেকেই অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
চট্টগ্রামে খুনোখুনি শুরু হয় গত বছরের আগস্টেই। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাজ্জাদ তার প্রতিপক্ষ মো. আনিস ও কায়সারকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক এলাকায় গুলি করে খুন করে। চলতি বছরের ২৯ মার্চ বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় চলন্ত প্রাইভেট কারে এলোপাতাড়ি গুলি করে আবদুল্লাহ আল রিফাত ও বখতিয়ার হোসেন মানিক নামে দুজনকে হত্যা করা হয়।
এরপর ২৩ মে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এক নারী দিয়ে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলে তাকে খুন করা হয়। ২৮ অক্টোবর নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাতের ছবিসংবলিত ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে কয়েকশ রাউন্ড গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুরো এলাকায় যুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করে। এতে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ছাত্রদলকর্মী নিহত হন। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ১০ জন।
আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলো
গত ৭ অক্টোবর হাটহাজারীর মদুনাঘাট ব্রিজের পাশে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে চলন্ত গাড়িতে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় বিএনপিকর্মী আবদুল হাকিমকে। প্রায় ১০ মিনিট ধরে ৩০-৩৫ রাউন্ড গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে আসা হেলমেটধারী তিন সন্ত্রাসী। রাউজানের বাসিন্দা আবদুল হাকিম বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। ওই খুনের হোতাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাউজানে প্রথম খুনের ঘটনা ঘটে গত বছরের ২৮ আগস্ট। ওই দিন বিকালে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী মার্কেট এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মান্নানকে। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর বাগানবাড়ি থেকে ইউসুফ মিয়া নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১১ নভেম্বর নিখোঁজের তিনদিনের মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় হাফেজ মাওলানা আবু তাহের নামে এক মাদরাসা শিক্ষকের লাশ উদ্ধার হয়।
৬ জুলাই উপজেলার কলদপুর ইউনিয়নের ঈশান ভট্টের হাটে বোরকা পরে সন্ত্রাসীরা স্ত্রী-সন্তানের সামনে গুলি করে হত্যা করে মো. সেলিম নামে এক বিএনপিকর্মীকে। হত্যার পর ওই অটোরিকশায় করেই পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। চাঞ্চল্যকর ওই খুনের মিশনে অংশ নেয় চার মুখোশধারী সন্ত্রাসী।
চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি উপজেলার নোয়াপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নগরীর খাতুনগঞ্জের আড়তদার জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ হাসান নামে এক যুবককে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা।
৪ মার্চ সাতকানিয়ায় সালিশের জন্য ডেকে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মী মোহাম্মদ নেজাম ও আবু ছালেককে কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের অনুসারী সন্ত্রাসীরা।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক শামসুল হক হায়দারি বলেন, রাজনীতিতে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার অনেক আগে থেকে হচ্ছে। কিন্তু এখন যেভাবে হচ্ছে সেভাবে আগে হয়নি। সন্ত্রাসীরা তাদের প্রভাব জানান দিতে প্রকাশ্যে আসার সুযোগ খুঁজবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা যদি নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সে সুযোগ করে দেন, সেটা দুঃখজনক। চট্টগ্রামে এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসছে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রাজনীতিতে সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন বন্ধ করা যাবে, ততই দল ও দেশের জন্য মঙ্গল।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যেসব সন্ত্রাসী সক্রিয়, তাদের অধিকাংশই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করছে। হঠাৎ এসে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে মাঠপর্যায়ের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হলেও মূলোৎপাটন করা যাচ্ছে না। এজন্য পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে চট্টগ্রামে। এক বছর ধরে যেন খুনের নগরীতে পরিণত হয়েছে এই বন্দর শহর। মহানগরী ছাড়াও জেলার অন্তত চারটি উপজেলায় কমপক্ষে ৪০টি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ৩০টি খুনই হয়েছে গুলিতে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধরা পড়ছে না আসামি। এতে আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সন্ত্রাসীরা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, গত বুধবার সন্ধ্যায় মহানগর বিএনপির সভাপতি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের ধানের শীষ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলি চালাতেও দ্বিধা করেনি। এতে সরোয়ার হোসেন বাবলা নামে একজন নিহত হয়েছেন। এরশাদসহ গুলিবিদ্ধ হন দলটির আরো দুজন। তবে নিহত বাবলাও পুলিশের তালিকাভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। ওই ঘটনার ছয় ঘণ্টার মধ্যে জেলার রাউজানে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের কর্মসূচি শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাতের আঁধারে প্রতিপক্ষের গুলিতে আহত হন বিএনপির পাঁচ কর্মী। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে চলন্ত গাড়িতে ফিল্মি স্টাইলে গুলি চালিয়ে হত্যা, নারী দিয়ে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলে খুন এবং বোরকা পরে গুলি করে হত্যার মতো প্রকাশ্যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে চট্টগ্রামে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, দখলসহ বিভিন্ন কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগরী ছাড়াও জেলার রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ভূজপুর, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড ও সাতকানিয়ায় এসব অপরাধ বেশি সংঘটিত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি খুনখারাবি হচ্ছে রাউজানে। এক বছরে এ উপজেলায় ১৭ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ১৪টিই ছিল রাজনৈতিক। এসব ঘটনায় মামলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসামি ধরা পড়ছে না। এতে আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয়রা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না পুলিশ। আবার সন্ত্রাসীদের ওপর রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকায় ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া শীর্ষ কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাব ও মাঠপর্যায়ের সদস্যদের গাফিলতির কারণে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। সম্প্রতি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বলেন, সরকার ভারী অস্ত্র ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করায় দুর্গম এলাকাগুলোয় অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। শীর্ষ এক পুলিশ কর্মকর্তার মুখে প্রকাশ্যে এ ধরনের বক্তব্যকে দায় এড়ানোর অজুহাত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সব হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী গ্রেপ্তারে বিভিন্ন অভিযানের কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দাবি করে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি অস্ত্রও এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এতে বাহিনীটির দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে চট্টগ্রামের এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, খুনোখুনিতে জড়িত সন্ত্রাসীদের প্রায় সবাই পুলিশের তালিকাভুক্ত। তাদের ব্যাপারে সব তথ্যই আছে পুলিশের কাছে। জুলাই বিপ্লবের আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশ্রয়ে থাকলেও এখন তাদের প্রায় সবাই বিএনপির আশ্রয়ে আছে। এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে সন্ত্রাসী বাবলার অংশগ্রহণ ও প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় এরই বড় প্রমাণ।
তিনি বলেন, রাউজান-রাঙ্গুনিয়ার সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বালুমহাল ও পাহাড়ের মাটির কারবার নিয়ন্ত্রণের সংশ্লিষ্টতা আছে। যেগুলো দিনের বেলায় রাজনৈতিক নেতারা আর রাতে পাহারা দেয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। এর বাইরে পুলিশেরও কিছু ব্যর্থতা আছে। জুলাই বিপ্লবের পর আগের মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না গোয়েন্দারা। এক্ষেত্রে তাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এখনো বড় একটি অংশ পতিত স্বৈরাচার সরকারের সমর্থক। তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে তাদের আন্তরিকতা নিয়েও সন্দেহ করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতারা আন্তরিক না হলে পরিস্থিতি রাতারাতি পরিবর্তন করা কঠিন।
মহানগরীর আলোচিত যত খুন
সবশেষ গত বুধবার বায়েজিদ থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচার চালানোর সময় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির গুলিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় তার নির্বাচনি প্রচারে অংশ নেওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবলা নিহত হন। আরেক সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারী রায়হান গ্রুপ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে ছোট সাজ্জাদ স্ত্রীসহ কারাগারে আছেন। সেখান থেকেই অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
চট্টগ্রামে খুনোখুনি শুরু হয় গত বছরের আগস্টেই। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাজ্জাদ তার প্রতিপক্ষ মো. আনিস ও কায়সারকে বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক এলাকায় গুলি করে খুন করে। চলতি বছরের ২৯ মার্চ বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় চলন্ত প্রাইভেট কারে এলোপাতাড়ি গুলি করে আবদুল্লাহ আল রিফাত ও বখতিয়ার হোসেন মানিক নামে দুজনকে হত্যা করা হয়।
এরপর ২৩ মে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এক নারী দিয়ে ‘হানি ট্র্যাপে’ ফেলে তাকে খুন করা হয়। ২৮ অক্টোবর নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাতের ছবিসংবলিত ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে কয়েকশ রাউন্ড গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুরো এলাকায় যুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করে। এতে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ছাত্রদলকর্মী নিহত হন। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন অন্তত ১০ জন।
আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলো
গত ৭ অক্টোবর হাটহাজারীর মদুনাঘাট ব্রিজের পাশে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে চলন্ত গাড়িতে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় বিএনপিকর্মী আবদুল হাকিমকে। প্রায় ১০ মিনিট ধরে ৩০-৩৫ রাউন্ড গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে আসা হেলমেটধারী তিন সন্ত্রাসী। রাউজানের বাসিন্দা আবদুল হাকিম বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। ওই খুনের হোতাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাউজানে প্রথম খুনের ঘটনা ঘটে গত বছরের ২৮ আগস্ট। ওই দিন বিকালে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী মার্কেট এলাকায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রমিক লীগ নেতা আবদুল মান্নানকে। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর বাগানবাড়ি থেকে ইউসুফ মিয়া নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১১ নভেম্বর নিখোঁজের তিনদিনের মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় হাফেজ মাওলানা আবু তাহের নামে এক মাদরাসা শিক্ষকের লাশ উদ্ধার হয়।
৬ জুলাই উপজেলার কলদপুর ইউনিয়নের ঈশান ভট্টের হাটে বোরকা পরে সন্ত্রাসীরা স্ত্রী-সন্তানের সামনে গুলি করে হত্যা করে মো. সেলিম নামে এক বিএনপিকর্মীকে। হত্যার পর ওই অটোরিকশায় করেই পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। চাঞ্চল্যকর ওই খুনের মিশনে অংশ নেয় চার মুখোশধারী সন্ত্রাসী।
চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি উপজেলার নোয়াপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নগরীর খাতুনগঞ্জের আড়তদার জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ হাসান নামে এক যুবককে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা।
৪ মার্চ সাতকানিয়ায় সালিশের জন্য ডেকে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মী মোহাম্মদ নেজাম ও আবু ছালেককে কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের অনুসারী সন্ত্রাসীরা।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক শামসুল হক হায়দারি বলেন, রাজনীতিতে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার অনেক আগে থেকে হচ্ছে। কিন্তু এখন যেভাবে হচ্ছে সেভাবে আগে হয়নি। সন্ত্রাসীরা তাদের প্রভাব জানান দিতে প্রকাশ্যে আসার সুযোগ খুঁজবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা যদি নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে সে সুযোগ করে দেন, সেটা দুঃখজনক। চট্টগ্রামে এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসছে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রাজনীতিতে সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন বন্ধ করা যাবে, ততই দল ও দেশের জন্য মঙ্গল।
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে যেসব সন্ত্রাসী সক্রিয়, তাদের অধিকাংশই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করছে। হঠাৎ এসে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে মাঠপর্যায়ের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হলেও মূলোৎপাটন করা যাচ্ছে না। এজন্য পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি ও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প-বাণিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলামকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন একই আসনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত চার প্রার্থী।
১ ঘণ্টা আগে
সাবেক অর্থ, পররাষ্ট্র ও ত্রাণমন্ত্রী, দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আবুল হাসান মাহমুদ আলী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
২ ঘণ্টা আগে
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগামী নির্বাচন দেশ জাতি ও ইসলামী আন্দোলনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসলামী আন্দোলনের জনশক্তিকে মাথায় রেখে জনমত আদায়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে।
৩ ঘণ্টা আগে
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় হাসান মাহমুদ নীরব (২২) নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য ও রহস্য— এটি আত্মহত্যা, নাকি পরিকল্পিত হত্যা?
৪ ঘণ্টা আগে